ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা : শরণার্থী জীবন খাঁচায় বন্দি পাখির মতো

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জসিম আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : বিশ্ব শরণার্থী দিবসে গতকাল উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। এ সময় রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যেতে নাগরিকত্ব, নিজ ভিটাবাড়ি ফেরত, চলাফেরা ও জীবিকার স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ৪টি দাবি উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি আক্ষেপ করে বলেন, বারবার প্রত্যাবাসনের আলোচনা হলেও একজনও ফিরতে পারেননি স্বদেশ মিয়ানমারে। এর মধ্যে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ায় জীবন আরো কষ্টকর হচ্ছে। এ জীবনের বিপরীতে স্বদেশ ফিরে মুক্ত জীবন চান তারা। এজন্য দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সহযোগিতা চান। তারা আরো বলেন, ক্যাম্পের জীবন জরাজীর্ণ এবং ঘনবসতি। অনেকটা একঘেয়ে এবং খাঁচায় বন্দি পাখির মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে টানা ৬ বছর ধরে।
এদিকে বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের টেকনাফে ১৯৯২ সাল থেকে নয়াপাড়ায় নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী শরণার্থীরা র‌্যালি করেছেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ডা. জুবায়ের জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কিন্তু এর আগে আরো ৪ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়রত ছিল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জাতিসংঘের পক্ষে খাদ্য সহায়তা আসছে। এর মধ্যে এ সহায়তা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। কখন যেন বন্ধ হয়ে যায়। এই শরণার্থী জীবন খাঁচায় বন্দির মতো। আমরা স্বদেশে ফিরতে চাই।
রোহিঙ্গা নেতা আতিক উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের মিলিটারিদের হাতে নির্যাতিত হয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমরা। আমাদের ধনসম্পদের দিকে না তাকিয়ে প্রাণ রক্ষার্থে চলে এসেছি। আমাদের যে একটি দেশ আছে তাও সত্য। সেই দেশে ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই আমরা।
স¤প্রতি অর্থ সংকটের কারণে চলতি বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। ৩ মাসের মাথায় আরেক দফা তাদের খাদ্য বরাদ্দ কমানো হয়। দাতাদের থেকে পর্যাপ্ত অর্থ সহযোগিতা না আসায় খাদ্যে কাটছাঁট করতে বাধ্য হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ক্যাম্পে দিন দিন বাড়ছে আর্থসামাজিক অস্থিরতা। অর্থের জোগান দিতে নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। গত ৬ মাসে উখিয়া ও টেকনাফের ৭৬ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন। অপহৃতদের বেশির ভাগ ব্যক্তি

টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছেন। অপহৃতদের নিয়ে এ সময় ৩৯টি মামলা রেকর্ড হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দেশত্যাগী মানুষ আমাদের কক্সবাজারে আশ্রয়ে আছে। প্রথমদিকে আমরাই রোহিঙ্গাদের কাপড়, নগদ টাকা, রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, এমনকি থাকার জায়গা দিয়ে সহায়তা করেছিলাম। কিন্তু আজ তারাই আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, সহসা রোহিঙ্গারা ফিরবে না। এতে যে কোনো সময় স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ নামের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প ছাড়িয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজার শহরে বাস করছে। রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের প্রধান পর্যটন শহরটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দাবি জানান।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একযোগে কাজ চলছে। আমরা যা প্রত্যাশা করেছিলাম তা তারা পূরণ করেনি। তবু আলোচনা চলছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা দুবার এখানে সফরে এসেছেন। রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলও মিয়ানমার সফর করেছে। আমাদের আশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়