ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

ভোরের কাগজকে শাহজাহান : আর ‘জল্লাদ’ পরিচয় দিতে চান না তিনি

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : সদ্য কারামুক্ত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। যুদ্ধাপরাধী, জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও আলোচিত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ২৬ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় তার সাজা মওকুফ হয়েছে। দুটি মামলায় ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন সাজা খেটে গত রবিবার কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এখন জেলমেটদের (সহবন্দি) বাসায় ঘুরে-বেড়িয়ে তার সময় কাটছে।
৭৩ বছর বয়সি শাহজাহানের চেহারায় নেই বয়স বা ক্লান্তির ছাপ। এই বয়সেও নিজেকে বেশ উদ্যমী বলে মনে করেন। বন্দি কয়েদিদের ভালো কাজ করে তার মতো সাজা মওকুফ পেয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শাহজাহানের সঙ্গে গত সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, গত রবিবার রাত কাটিয়েছেন ঢাকার নর্দায় রকি দেওয়ানের বাসায়। সোমবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মোবাইল সিমকার্ড নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে নানা কারণে তা বিলম্ব হয়। এরপর যান সায়েদাবাদ এলাকায় রানার বাসায়। রানা সহবন্দি হিসেবে সম্পর্কে তার ভাতিজা।
শাহজাহান বলেন, কারাগারে পাওয়া নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সূত্র ধরে সকাল ৮টা থেকে ২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও সিমকার্ড তুলতে পারিনি। সঙ্গে থাকা রকি দেওয়ানও তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিমকার্ড নেয়ার চেষ্টা করে। দুপুরের দিকে সিমকার্ড তুলতে পেরেছি।
শাহজাহান জানান, কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া দায়িত্ব জল্লাদ হিসেবে তিনি পালন করেছেন। এখন মুক্ত, আর সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে চান না। অন্য ৮-১০ জন মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চান। কী করবেন তা এখনো ঠিক না করলেও কোথাও স্থির হয়ে বাকি জীবনটা কীভাবে কাটাবেন সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, কারাগারের সম্পর্ক অনেক মধুর ও গভীর। কারামুক্তির পর অনেকেই আমাকে সঙ্গে নিতে এসেছিলেন জেলগেটে। পরে রকি ও নজরুলের সঙ্গে নর্দায় যাই। এতে অভিমান করেছে অন্যরা। এখন পর্যায়ক্রমে তাদের সবার সঙ্গে দেখা করে মান ভাঙাব।
সোমবার বিকালে আলাপচারিতায় শাহজাহান জানান, রাতে তিনি থাকবেন বাবুবাজারে এক বাসায়। কোনো এক স্থানে স্থির হয়ে এরপর সবার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবেন। কারাগারে পরিচয় হয়েছে এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। দীর্ঘদিন কারাগারে

থাকার সুবাদে অনেকের সঙ্গে তার আত্মীয়তার থেকেও গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
দীর্ঘ বন্দিজীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, কারাগারে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। জীবনের বেশির ভাগ সময় বন্দি থাকার কারণে কারাগারের গল্প রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের জীবনের গল্প শুনেছি।
মুক্তি পাওয়ার পর রবিবার রাতে রকি ও নজরুলের সঙ্গে গল্প করে অনেকটা সময় পার করেছেন শাহজাহান। তিনি বলেন, অনেক কর্মকর্তা ও কারারক্ষীর সঙ্গে কাজ করেছি। প্রধান জল্লাদ হওয়ার কারণে অন্য বন্দিরা আমাকে সম্মান করত। আমার অবর্তমানে ফাঁসি কার্যকর করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছি সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের। ১০ জন এরই মধ্যে প্রশিক্ষিত হয়েছে।
কারাগার থেকে বের হয়ে শাহজাহানের উপলব্ধি- আর কোনো অপরাধ বা ভুল করে জেলে যেতে চান না তিনি। কারাজীবন কারো জন্য ভালো নয়- মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিনা দোষেও অনেক মানুষ জেল খাটছে। বের হওয়ার পর জেলমেটদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই সাহস এবং উৎসাহ জোগাচ্ছে। এখনো কোনো নিকটাত্মীয় যোগাযোগ করেনি এবং এ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহও নেই।
এদিকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড ও কেরানীগঞ্জে বন্দি হিসেবে শাহজাহানের সান্নিধ্য পেয়েছেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, জল্লাদ হলেও তিনি ছিলেন শান্ত স্বভাবের। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে মেঘনা ভবনের চারতলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডে যারা তার সন্নিধ্য পেয়েছেন তাদের অনেকেই সম্পর্ক রেখেছেন, অনেকে আবার ভুলেও গেছেন। এ নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই শাহজাহানের। তবে একমাত্র বোন কারাগারে তার সঙ্গে দেখা না করায় তিনি দারুণ মনোক্ষুণ্ন। পৈতৃক সম্পত্তির নিজের অংশের ভাগ চান শাহজাহান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়