ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা : সুফিয়া কামাল অসা¤প্রদায়িক সমাজ গড়ায় সংগ্রাম করেছেন

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সত্যনিষ্ঠতা ছিল কবি সুফিয়া কামালের জীবনদর্শন। এই সত্যনিষ্ঠতাকে অবলম্বন করে সমাজ কাঠামোয় চলমান বিচারহীনতা, ধর্মান্ধতা, সহিংসতা এবং সা¤প্রদায়িকতাকে প্রতিহত করে নারীর পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বাংলা একাডেমির মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুফিয়া কামাল ও তরুণ প্রজন্ম’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দেন আজকের পত্রিকার ডেপুটি এডিটর জাহীদ রেজা নূর। এ বছর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় কবির ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান ও আজিজুর রহমান তুহিন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সামন্ত লাল সেনের জীবনী পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। স্মারক বক্তৃতা শেষে বক্তা জাহিদ রেজা নূরকে উত্তরীয় পরানো হয়। শুরুতে কবি সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালসহ সংগঠনের নেতারা ও আগত অতিথিরা।
স্মারক বক্তা জাহীদ রেজা নূর বলেন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ এর সময়ের তৎকালীন সমাজব্যবস্থার প্রকৃতি, সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ধর্ম ও সংস্কৃতির দ্ব›দ্ব, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কবি সুফিয়া কামালের ছিল নিরন্তর সংগ্রাম। ওই লড়াইয়ে কবির প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণ ছিল, যার বহিঃপ্রকাশ এখনো ঘটে চলেছে তবে

ভিন্নভাবে।
তিনি বলেন, শুধু নারীর অধিকারই সুফিয়া কামালের ভাবনার জায়গা দখল করে রাখেনি। তিনি একটি বৈষম্যহীন, অসা¤প্রদায়িক, ধর্মান্ধতামুক্ত এবং নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন। অন্যদিকে সত্যনিষ্ঠতা ছিল তার জীবনদর্শন। এই সত্যনিষ্ঠতাকে অবলম্বন করে সমাজ কাঠামোয় চলমান বিচারহীনতা, ধর্মান্ধতা, সহিংসতা এবং সা¤প্রদায়িকতাকে প্রতিহত করে নারীর পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
যে সমাজের প্রতি সুফিয়া কামাল বিশ্বাস রেখেছিলেন সে সমাজ এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে উল্লেখ করে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, অসাম্প্রদায়িকতাও এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। তবে সুফিয়া কামাল আমাদের যা দিয়ে গেছেন তা চলার পথের পাথেয়। তিনি বলেন, যতদিন সভ্যতা থাকবে মানবতাও থাকবে। তরুণ সমাজের সংকট বিভ্রান্তিও থাকবে, তবে তারা এসব অতিক্রমও করবে।
সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রাপ্তির অভিব্যক্তি জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সুফিয়া কামালের মতো বড় মাপের ব্যক্তিত্বের নামে এই পুরস্কার প্রাপ্তি আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের। তিনি এ সময় চিকিৎসা সেবাদানকালে সহিংসতার শিকার নারীর প্রতি বীভৎসতার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এসব আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসা সেবাদান অব্যাহত রাখতে বড় পরিসরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজ থেকে ১১১ বছর আগে কবির জন্মলগ্নে নারীদের জন্য সমাজ ছিল অন্ধাকারাচ্ছন্ন যখন তারা শিক্ষার আলো ও বাইরের জগৎ থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু সুফিয়া কামাল পারিবারিকভাবে শিক্ষার জন্য সহায়তা পেয়েছিলেন ও চারপাশের আলোকিত মানুষদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন যা তার মানবিক বিকাশে সহায়তা করে। তিনি নিজেকে একজন নারীবাদী, মানবতাবাদী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তার বোধ তাকে পরিচালিত করেছিল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। তিনি সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে তরান্বিত করতে তরুণ সমাজকে সংগঠিত করেছেন, তাদের মধ্যে মুক্তবুদ্ধির চিন্তা চেতনাকে সঞ্চার করেছেন এবং নেতৃত্ব তৈরি করেছেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
এর আগে সুফিয়া কামাল স্মরণে সকালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠানটির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসনা জাহান খানম। একক বক্তৃতা দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির সচিব মোখলেছুর রহমান আকন্দ।
সুলতানা কামাল বলেন, সুফিয়া কামাল তার ব্যক্তিগত জীবনের শোক-দুঃখ-কষ্ট অতিক্রম করে দেশের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন। এই কাজে তার কোনো বিরতি ছিল না, অবসর ছিল না। তিনি রক্ষণশীলতার দূর্গ ভেঙেছেন, প্রগতির পতাকা উড়িয়েছেন এবং জোর গলায় বলতে চেয়েছেন ‘নিশ্বাস নিঃশেষ হোক পুষ্প বিকাশের প্রয়োজনে’।
সেলিনা হোসেন বলেন, কবি সুফিয়া কামালের কবিতা যেমন মানব-অনুভবের কোমল মহাদেশকে স্পর্শ করে তেমনি তার নারী আন্দোলন, কুসংস্কার-বিরোধী অবস্থান এবং মানবমুক্তির আবাহন কঠোর সত্যের বার্তাবহ।
হাসনা জাহান খানম বলেন, সুফিয়া কামাল আমৃত্যু নারী অধিকার, মানবসাম্য এবং আধুনিক সমাজ ও স্বদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গেছেন। সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি যেমন বাংলা সাহিত্যে নতুন অধ্যায় যোগ করেছেন, তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের সামগ্রিক অগ্রসরমানতা নিশ্চিত করেছেন।
সাইমন জাকারিয়া বলেন, সুফিয়া কামাল মানেই প্রগতির পথে, মুক্তির রথে অনন্ত আলোকযাত্রা। প্রতিকূল পরিবেশে মানবমঙ্গলের বিজয়কেতন উড়িয়ে তিনি বাংলার ইতিহাসে জননী সাহসিকা রূপে স্বরণীয় হয়ে আছেন।
মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, সুফিয়া কামালের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। নারী অধিকার এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার লড়াই আমাদের চিরকালীন অনুপ্রেরণার উৎস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়