ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক যোগ দিবস যোগের মহিমা

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যোগ বলতে আমরা সাধারণত রাজযোগ বুঝে থাকি। রাজযোগকে আট ভাগে ভাগ করা যায় যথা : যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধ্যান, ধারণা ও সমাধি। যম বলতে অহিংসা, সত্য, অন্ত্রেয়, অচৌর্য, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহকে বোঝায়। এ যম ধারা চিত্তশুদ্ধ হয় এবং দেহ, মন ও আত্মা আনন্দে ভরে ওঠে। অন্য কোনো প্রাণীকে ক্ষতি না করাকে অহিংসা বলে। অহিংসা অপেক্ষা মহত্তর কোনো ধর্ম নেই। সত্যের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের কর্মের ফল লাভ করে থাকি। এ সত্যের ভেতর থেকে সব কিছু পাওয়া যায়। সবকিছু সত্যেই প্রতিষ্ঠিত। চুরি বা বলপূর্বক অন্যের জিনিস গ্রহণ না করাকে অন্ত্রেয় বলে। কায়মনোবাক্যে সর্বদা সব অবস্থায় পবিত্রতা রক্ষা করাকে ব্রহ্মচর্য বলে। অপরের দান গ্রহণ না করাকে অপরিগ্রহ বলে। নিয়ম শব্দের অর্থ নিয়মিত অভ্যাস বা ব্রত পালন। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সব ধরনের শৌচই সাধনের জন্য প্রয়োজন। যম ও নিয়ম চরিত্র গঠনের সহায়ক। আসন বলতে আমরা ধ্যানাসন এবং স্বাস্থ্যাসন এ দুই ধরনের আসন বুঝে থাকি। বুক, গ্রীবা ও মাথা সমান রেখে দীর্ঘক্ষণ আরামে বসে থাকার অবস্থাকে আসন বলে।
যোগ মন নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। মন আত্মার যন্ত্রস্বরূপ এবং এ মন দ্বারাই আত্মা বাইরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে থাকে। মনের আবার অন্তর্দৃষ্টি আছে এবং এ শক্তির সাহায্যে সাধন নিজ অন্তরের গভীরতম বিষয়গুলো দেখতে পারে। এ অন্তর্দৃষ্টি শক্তি লাভ করাই যোগীর উদ্দেশ্য। মনের সমুদয় শক্তিকে একত্র করে ভেতরের দিকে ফিরিয়ে ভেতরে কী হচ্ছে তা যোগী জানতে চান। যোগীরা বিশ্বাস করেন যে মনের একটি উচ্চাবস্থা আছে। যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে এ জ্ঞানাতীত অবস্থা। এ উচ্চাবস্থায় যোগী তর্কের অতীত এক পরমার্থ জ্ঞান বা অতিন্দ্রিয় জ্ঞান লাভ করে। যোগীরা বিশ্বাস করেন মানব মনের শক্তি অসীম।
জ্ঞানার্জন মানব জীবনের অন্যতম একটি সেরা কাজ। যোগী ধ্যানের মাধ্যমে এ জ্ঞানার্জন করে থাকেন। গভীর ধ্যানকে সমাধি বলে এবং এ সমাধিতে গিয়েই যোগী জগতের সত্যগুলো দর্শন করে থাকেন। মূর্খও যদি সমাধিতে যায় তবে সমাধি ভঙ্গের পর তিনি মহাজ্ঞানী হয়ে উঠতে পারেন। যোগী সাতটি পর্যায়ে এ উচ্চতর জ্ঞান লাভ করে থাকেন। যখন জ্ঞান লাভ হতে থাকে তখন একটির পর আর একটি করে সাতটি স্তরে এ জ্ঞান আসতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে যোগী বুঝতে পারেন যে তিনি জ্ঞান লাভ করছেন। তখন সমস্ত অসন্তোষের ভাব চলে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সব দুঃখ চলে যাবে। তৃতীয় পর্যায়ে যোগী পুনর্জ্ঞান লাভ করবেন। চতুর্থ পর্যায়ে বিবেক সহায়ে সব কর্তব্যের অবসান হবে। পঞ্চম অবস্থায় চিত্তবিমুক্তি অবস্থা আসবে এবং যোগী বুঝতে পারবেন যে তার বাধাবিপত্তি সবে চলে গিয়েছে। ষষ্ঠ অবস্থায় চিত্ত বুঝতে পারবে যে, ইচ্ছামাত্রই তা স্ব-কারণে লীন হয়ে যাচ্ছে। সপ্তম অবস্থায় যোগী বুঝতে পারবেন যে তিনি নিজ স্বরূপে আছেন। মন বা শরীরের সঙ্গে আত্মার কোনো সম্পর্ক নেই। এরা আত্মার সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিল না। আত্মা একাকী, নিঃসঙ্গ, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী এবং সদানন্দ। আত্মা এত পবিত্র এবং পূর্ণ যে, তার আর কিছুই প্রয়োজন ছিল না। কারণ আত্মা পূর্ণস্বরূপ। এটাই যোগীর চরম অবস্থা। যোগী তখন ধীর ও শান্ত হয়ে যান। তিনি আর কোনো প্রকার কষ্ট অনুভব করেন না এবং দুঃখ আর তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি জানতে পারেন যে, তিনি নিত্যানন্দস্বরূপ এবং নিত্যপূর্ণস্বরূপ। এ জীবনেই তিনি মুক্তি লাভ করেন।
যোগের আগুনে পাপ ক্ষয় হয়। আমরা প্রতিনিয়ত কম বেশি পাপ করে থাকি। যোগ অনুশীলনে পাপের ক্ষয় হয় এবং তখন চিত্তশুদ্ধি হয়। ফলে দেহ, মন এবং আত্মা সাধনার জন্য উপযোগী হয়। প্রত্যক্ষানুভূমি ছাড়া কেউ ধার্মিক হতে পারে না। যোগ প্রত্যক্ষানুভূতি অর্জনের ভিত্তিস্বরূপ। পরোপকার এবং মানবকল্যাণই যোগীর জীবন ধারণের মূল উদ্দেশ্য। সাধনার মাধ্যমে যোগীরা জগতের সত্যগুলো দর্শন করে থাকেন। জন্মের মতো মৃত্যুও একটি মহাসত্য। যোগী স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পৃথিবী থেকে অমৃতের পথে যাত্রা শুরু করেন। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় দেহের ৯টি পথের একটি দিয়ে দেহ থেকে আত্মা বের হয়। আত্মার দেহ থেকে বের হওয়া খুবই কষ্টকর। কিন্তু যোগীর আত্মা সাধনার ফলে বের হওয়ার পথ আগেই প্রস্তুত রাখেন। যোগীর আত্মা দেহ থেকে ব্রহ্মতালু দিয়ে বের হয়। ফলে মৃত্যুর সময় তার কোনো কষ্টই হয় না। তিনি আনন্দের সঙ্গে দেহ ত্যাগ করতে পারেন। প্রত্যেকটি ধর্মই কতগুলো বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ বিশ্বাসের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারা যায় না। কিন্তু রাজযোগ ধর্মবিজ্ঞান। ধর্মের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে রাজযোগ সমর্থ। পদার্থ বিজ্ঞান যেমন বাহ্য উপায়ের দ্বারা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়, তেমনি রাজযোগ অন্তঃশক্তি মনকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতিতে বাহ্য বা অভ্যন্তরীণ বলে কিছু নেই। বাহ্যপ্রকৃতি অন্তঃপ্রকৃতি একটি প্রতিবিম্ব মাত্র।
আজ ২১ জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’। পৃথিবীর সব দেশেই এ দিবস পালিত হচ্ছে। যোগের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাই আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের উদ্দেশ্য। এ বছর সৌদি আরবের সরকার তাদের দেশের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যোগ অনুশীলন বাধ্যতামূলক করেছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে যোগ অনুশীলনে মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর সব মানুষ যোগ অনুশীলনের মাধ্যমে দিব্য, যোগ্যময় জীবন-যাপন করে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম দেহ এবং দীর্ঘজীবন লাভ করুক, আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে’- এটাই প্রত্যাশা।

শচীন্দ্র নাথ হালদার : অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়