যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু আর কত?

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ভুল চিকিৎসায় কতজনের মৃত্যু ঘটছে এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান ১০টি কারণের অন্যতম অনিরাপদ চিকিৎসাসেবা। প্রতি বছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভুল চিকিৎসায় ১ কোটি ৩৪ লাখ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মারা যাওয়ার সাত দিন পর গত রবিবার মারা যান মা মাহবুবা রহমান আঁখি। কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে অন্তঃসত্ত্বা আঁখিকে গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে যে ডাক্তারের অধীনে ভর্তি করা হয় তিনি তখন দেশের বাইরে ছিলেন। এ বিষয়ে রোগী ও স্বজনদের মিথ্যা তথ্য জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্য চিকিৎসকরা তার স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রোপচার করেন। পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা চলতে থাকে। সেখানে গত রবিবার তার মৃত্যু হয়। ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হলেও হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার জরুরি বলে মনে করি। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি চিকিৎসায় জনগণের খরচ বেড়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হলো স্বাস্থ্যসেবা। গ্রামের চিকিৎসাকেন্দ্রসহ শহরের বড় হাসপাতালগুলোও চিকিৎসকসহ নানা রকম সংকট ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত। মানুষ প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে লোকবল নিয়োজিত আছে, কর্মস্থলে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হচ্ছে না। কোনো চিকিৎসকের বা স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের অবহেলার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি জানা নেই অনেকের, নেই সচেতনতা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো যারা অভিযোগ করেন, বিচারের আশায় তাদের কেটে যায় দীর্ঘ সময়। বিএমডিসিতে এ বিষয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় ধীরগতি। চিকিৎসায় অবহেলাকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র আইনের প্রয়োজন। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগেও সর্বোচ্চ শাস্তির নজির নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক রোগ নির্ণয় ও দক্ষতার অভাবেই সাধারণত ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভুল ওষুধ সেবন, ক্ষতিকর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, নিম্নমানের ওষুধ, ভুল অস্ত্রোপচার এবং প্রতারকের খপ্পরে পড়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০২২’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। জনস্বার্থে অবিলম্বে এই আইনের প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি মনে করি। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধ করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারি দরকার। স্বাস্থ্য খাতের রূপরেখা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় আর কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়