যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় জীবনের কোনো না কোনো সময় আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরতরা যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ, সেখানে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশের চিন্তাধারা আমাদের জন্য অশনি সংকেত বলা যায়। আত্মহত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো- আবেগপ্রবণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ সমস্যা বিশেষ করে নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়া অর্থাৎ চলাফেরা, বন্ধু নির্বাচন, খাবার-দাবার বা ক্যাম্পাস জীবনের শুরুর দিকে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হলে। সেসব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে। কেউ কেউ আবেগবশত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এজন্য নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রবীণ শিক্ষার্থীদের বন্ধুসলভ আচরণ করা প্রয়োজন। যা এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক দূরত্বের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত। সে কারণে শিক্ষার্থীদের পরিবার ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। মন খারাপের সময় পরিবারের তেমন পৃষ্ঠপোষকতা পান না। এতে কেউ কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
স্কুল, কলেজ শেষ করে একজন শিক্ষার্থী সুনীল স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন। তাদের পূর্ব শিক্ষা জীবনে র‌্যাগিং নামক নির্মমতার সঙ্গে পরিচিত ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাদের এমন একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যার জন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। প্রথমত পরিবার থেকে দূরে আর দ্বিতীয়ত নতুন পরিবেশ। এর মাঝে র‌্যাগিংয়ের নাম করে মানসিক চাপের কারণে ছাত্রছাত্রীরা আত্মহত্যা করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাই নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের নামে মানসিক চাপ দেয়া উচিত নয়। গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে নানামুখী চাপের সম্মুখীন হন। তার মধ্যে অন্যতম একটি চাপ রাজনৈতিক চাপ। শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে অন্য বিষয়গুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের পরিপূর্ণ নজরদারি না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের চাপের মুখে পড়তে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ফলে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে তাড়াহুড়ো করে বন্ধু নির্বাচন করতে গিয়ে ভুল মানুষকে নির্বাচন করে ফেলেন। আর সেসব সম্পর্কের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বিপথে পা বাড়ান। খারাপ মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বিপদগামী হওয়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তখন হীনম্মন্যতায় ভুগেন। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে থাকেন, অনেক সময় অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের ফলে তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব কারণে আত্মহত্যা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো প্রেমে ব্যর্থতা বা মনোমালিন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আবেগী প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সেই কারণে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু থেকেই আর্থিক চাপের মুখে পড়তে হয়। পরিবার থেকে আসতে থাকে নিজের খরচ জোগানোর তাগিদ। এমন সময় শিক্ষার্থীরা পরিবারের কাছে খরচের টাকা চাইতে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে সামাজিক কোনো চাপ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে সামাজিক চাপের বোঝা লক্ষ্য করা যায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সব জায়গায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে সামনেও আজেবাজে মন্তব্য করে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা এলাকায় যেতেও হীনম্মন্যতায় ভোগেন। এসব ঘটনা গ্রামেগঞ্জে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটনার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেসব কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হলো হতাশা ও বিষণ্নতা। হতাশা ও বিষণ্নতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের শঙ্কা নিয়ে বেশি হতাশায় ভুগতে দেখা যায়। যা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে।

মিজানুর রহমান মিজান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়