যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দেখেই কারা এতটা হিংস্র বনে যায়?

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ১৪ জুন বিকাল ৩টা থেকে বিএনপি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে তারুণ্যের একটি সমাবেশ আহ্বান করেছিল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের সংযুক্ত করার অংশ হিসেবেই দেশব্যাপী বিএনপির সমাবেশের অংশ বলে চট্টগ্রামে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। সেই সমাবেশে অংশ নিতে আসা তরুণদের একটি মিছিল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের হিংস্র থাবা মেরেছিল, যা বিএনপিসহ বাংলাদেশের আরো কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের লালিত বিশ্বাস ও বিদ্বেষেরই তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ বললে অত্যুক্তি হবে না। বিএনপি এই ম্যুরাল আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
চট্টগ্রাম আমার এক সময়ের কর্মস্থল, ছিলাম প্রায় ১৫ বছর। এই নগরটিকে তখন খুব ভালো করেই চিনতাম। কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব থাকায় মাঝে মধ্যে সেখানে যেতাম। ’৮৯ সালে বিজয়মেলা নামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ইতিহাসকে পরিচিত করানোর জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী মেলার যে আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম, সার্কিট হাউস, কাজীর দেউড়িসহ বিশাল এই অঞ্চলকে তখন কয়েকদিন লোকে লোকারণ্য করে রেখেছিল। আমি সেই আয়োজনে সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কাজীর দেউড়ি তাই আমার কাছে অতি পরিচিত এলাকা। জামালখানের পাশেই আমার মেয়ে সেইন্ট মেরি’স স্কুলে পড়ত। প্রেস ক্লাবসহ অনেক কিছুই সেখানে অবস্থিত। চট্টগ্রামের সেই সময়ের সাংবাদিক, সুধীজনদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই দেখা-সাক্ষাৎ, সেমিনারসহ নানা অনুষ্ঠানে একত্রিত হওয়ার সুযোগ হতো। চট্টগ্রামের বহু স্থানে খেলাঘর, উদীচীসহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের বহু শিশু, কিশোর, তরুণ এবং বয়স্কদের সঙ্গে আমার তখন ঘনিষ্ঠতা ছিল। চট্টগ্রামকে আমি তখন খুব কাছ থেকে দেখেছি। এর ভেতরের মানুষদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির মন এবং মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করত। চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পেশাজীবী পরিষদের একজন হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিতাম। চট্টগ্রামের তরুণদের দেশপ্রেম এবং মনন ও মননশীলতায় আমি তখন মুগ্ধ ছিলাম। পেশাগত কারণে ঢাকায় চলে এলেও চট্টগ্রাম আমার মনের কোণে এখনো জায়গা করে আছে। সে কারণে চট্টগ্রামের কোনো ভালো খবর আমাকে যেমন আনন্দ দেয়, আবার খারাপ খবর যখন মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন এক ধরনের অসহায়ত্ব আমার ওপর ভর করে।
১৪ তারিখ চট্টগ্রামে বিএনপির আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশ হবে সেটি নিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার কথা নয়। জামালখান রোডে খাস্তগীর স্কুলের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ওপর ভিত্তি করে ৪০টি ম্যুরাল এবং স্থিরচিত্র শোভা পাচ্ছিল। এছাড়া আরো কিছু গুণীজনের চিত্র সেখানে রয়েছে বলে শুনেছি। শুনতে পেলাম বিএনপির সমাবেশে আগত তরুণদের একটি অংশ হাতে থাকা লাঠিসোটা নিয়ে জামালখান রোড অতিক্রম করার সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও স্থিরচিত্রে বারবার আঘাত করে তাদের ‘তারুণ্যের হিংস্রতারই’ যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। পত্রপত্রিকা পড়ে জানা গেল চাঁদগাঁও থেকে আগত যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়েই এই সমাবেশে যোগদান করেছিল। চট্টগ্রাম কলেজের পাশে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের ছোটখাটো হাঙ্গামা হাওয়ার পরই জামালখানে এসে লাঠি নিয়ে তারা হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের ওপর। কীভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওইসব ম্যুরাল ভাঙা হয়েছিল সেটি যারা দেখেছেন তারা বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়েছে। সেই দৃশ্য সামাজিক গণমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে, দু-একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও ধারণকৃত ভাঙচুরের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। ভাঙচুরকারীদের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। সমাবেশে যোগদানের জন্য আসা এই যুবকরা শিশু-খোকা নয়, নানা বয়সের তরুণ এবং যুবক মিলে অনেকেই ছিলেন। তাদের মধ্যে স্থানীয় নেতা পর্যায়েরও নিশ্চয়ই কেউ কেউ ছিলেন। কিন্তু কাউকেই এমন হিংস্রতা ঘটানোর অপকর্ম থেকে কর্মীদের নিবৃত্ত করার কোনো চেষ্টা খুব একটা চোখে পড়েনি। এটি পরিকল্পিত নাকি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তা বোঝা না গেলেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বা স্থিরচিত্র দেখলেই যারা এমন হিংস্র আচরণ করতে পারে, তাদের মন-মানসিকতা ও বিশ্বাসের জগৎটাই রাজনৈতিক দল, অঙ্গসংগঠন এভাবেই লালন করে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে তারা দলগতভাবে শুধু অস্বীকারই নয়, মনেপ্রাণে অশ্রদ্ধা এবং বিদ্বেষও পোষণ করে থাকে। অথচ বঙ্গবন্ধু কে সেটি তারা জানেন না, শোনেননি সে প্রশ্ন করা অবান্তর। কিন্তু তারুণ্যের সমাবেশে অংশ নিতে বিএনপির যেসব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী সেদিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও স্থিরচিত্রে হামলা করেছিল, তারা হয়তো ছোটকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পারিবারিকভাবে কিংবা সংগঠনগতভাবেই এমন বিদ্বেষ ভাবাপন্ন মন তৈরি করে বড় হয়ে উঠেছে। ওই কজন তরুণ আর যুবকই নয়, গোটা দেশেই বিএনপি এবং আরো বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা চিরকালই অস্বীকার করে এসেছে। এই দীনতা রাজনৈতিকভাবে তাদেরই। জাতির ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ওইসব দলের ভূমিকা ছিল বিপরীতে। দেশের স্বাধীনতার কথা এখন তারা মুখে বলে। কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাসটা নিজেদের মন মতো করেই দেখতে চায়, পেতে চায়। ’৭১-এ এদেরই পূর্বসুরিরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, কেউ কেউ পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আবার কেউ কেউ ’৭১-এ নামেমাত্র অংশ নিলেও মুক্তিযুদ্ধের সমগ্রতাকে ধারণ করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের এমন প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর জেলে এবং জেলের বাইরে নিজেকে উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালেও তিনি পাকিস্তানিদের কারাগারে ছিলেন। আর তার বিশ্বস্ত সহযোগীরা তারই ঘোষিত স্বাধীনতার ডাককে বাস্তবে রূপ দিতে ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন। ৩০ লাখ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, আরো অনেক ত্যাগ ও ধ্বংসের বিনিময়েই আমাদের এই দেশটা স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এ এক আত্মত্যাগের মহিমান্বিত ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে ধারণ করলে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়া যায়, দেশকে সত্যি সত্যি কিছু দেয়ার আকাক্সক্ষা মনের মধ্যে সব সময় কাজ করে। এ কারণেই স্বাধীনতার ইতিহাস শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর সব দেশ ও জনজীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ইতিহাস বলে খ্যাত। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কেউ মিথ্যাচার করে না। স্বাধীনতার মূল নেতা এবং নেতাদের কেউ অস্বীকার বা অশ্রদ্ধা করে না। তাদের জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়ে থাকে। ২০০ বছর আগে লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে যারা স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের আজো কতটা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় তা ইতিহাস থেকে জেনে নেয়া যায়। সিমন বলিভার সেই সময়ের এক প্রেরণাদাতা নেতা ছিলেন, যার দর্শন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চার-পাঁচটি দেশ একসঙ্গে সশস্ত্র লড়াই পরিচালিত করেছিল, স্বাধীনতা লাভও করেছিল। বলিভারকে শ্রদ্ধা জানাতেই কারকাস অঞ্চলটি বলিভিয়া নামে একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ক সেক্যুলার তুরস্ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগান জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা কামাল আতাতুর্কের বিরোধী মতাদর্শের রাজনৈতিক দল। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি কামাল আতাতুর্কের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পৃথিবীর দেশে দেশে তাই হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই শুধু করা হয়নি, তার নাম মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর ছবি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নামিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন। বিএনপি এবং জোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা হয়, এমনকি পুড়িয়ে ফেলারও ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা হয়নি। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবেও পরিচিত করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হচ্ছে ১৯৭৫-এর পর থেকে টানা ১৯৯৬ পর্যন্ত এবং ২০০১-০৬ সময়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতা হিসেবে দেখানোর প্রবণতা রাজনৈতিকভাবেই শুধু নয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবেও করা হয়েছে। সেই সময়ের পাঠ্য বইপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে ক্রমেই ‘নাই’ করে দেয়া হয়েছিল। কোনো কোনো বইতে বিতর্কিতও করা হয়েছে, তাকে সমালোচনা করে বলা হয়েছে তিনি শাসক হিসেবে নাকি ব্যর্থ ছিলেন, জিয়াউর রহমানকে ‘সময়ের সাহসী সন্তান, দুঃসময়ের ত্রাতা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একদিকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনকে বিতর্কিত করা হয়েছে, অন্যদিকে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও জিয়াকে বড় করে দেখা এবং বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার মতো প্রশ্ন করা হতো। এভাবেই কয়েক দশক দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত এক বিকৃত ধারণা সংবলিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এসব তরুণ এবং যুবকের অনেকেই বিকৃত ইতিহাসেরই ধারকবাহক। সেই প্রজন্মের অনেকেই এখন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পেশায় আছেন। তারা পরিমার্জিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কতটা শ্রেণিপাঠে শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন করছেন তা সন্দেহের বিষয়। অভিজ্ঞতা বলছে অনেক শিক্ষকই স্কুলের বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতিকে যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন না। বরং আড়ালে-আবডালে তারা পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাসকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলেই তুচ্ছ্য-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। কারণ এদের অনেকেই মন ও মানসিকতায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের ইতিহাস ’৭১-এর বাস্তবতায় নয়, বরং স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রচার-প্রচারণা, রাজনৈতিক উপস্থাপনায় বিশ্বাস করে থাকেন। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের একটি অংশের মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপনের যেই ধৃষ্টতা দেখেছি, তা আমাকে ভবিষ্যতে এর চেয়ে বেশি হিংস্রতার অবতারণার কথা কল্পনা করতে ভাবিয়ে তুলছে। জামালখানে যে হিংস্রতা হয়েছে সেটি ছোট্ট পরিসরের একটি ‘দৃশ্যের’ অবতারণা মাত্র। কিন্তু বাংলাদেশে যে অপশক্তি এখন গণতন্ত্রের নামে বিদেশি শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এসব সমাবেশ প্রতিদিন করছে, তারা যদি ‘সফল’ হতে পারে, তাহলে সারাদেশেই এমন হিংস্রতার দৃশ্য আমাদের দেখতে হবে- এটি প্রায় নিশ্চিত। কারণ দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে, আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে অবজ্ঞা করে, নিজেদের ইতিহাসের চূড়ায় স্থাপন করতে যারপরনাই চেষ্টা করেই যাচ্ছে। প্রতিদিনের বক্তৃতায় নেতাদের মুখ থেকে যেসব কথা বের হয়ে আসে তার মধ্যেই অনেক ছোট ছোট শব্দ লুকিয়ে থাকে, যা তাদের এবং তাদের পূর্বপুরুষদের অন্তরে লালিত-পালিত হয়ে আসছে, জিনে বসবাস করছে। সেটি পরিশুদ্ধ করার কোনো রাজনৈতিক শিক্ষা তাদের কোনো কালেই ছিল না। বরং এখন আরো যেন মূর্তিমান হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ এমনই এক বিপরীত বাস্তবতার সড়ক দিয়ে চলছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ কেবলই একটি উচ্চারণ, ধারণ নয়। কারো কারো কাছে অপব্যবহার, আর বেশির ভাগের কাছেই যেন এক হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস। এই ব্যর্থতার দায় কে বহন করবে?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়