যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

জননী সাহসিকা সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শৈশবে পাইলট হতে চেয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। তা তিনি হতে না পারলেও উড়তে পেরেছিলেন পুরুষতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভেঙে; হাঁটতে পেরেছিলেন ছকের বাইরে। ত্রিশের দশকে কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের দেখা পান সুফিয়া কামাল। বাঙালি নারী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত, মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সোচ্চার কালজয়ী এই জননী সাহসিকার ১১৩তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার। বাংলা ভাষার এ বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক ১৯১১ সালের এই দিনে বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত সাহিত্যকর্ম এবং সাহসিকতা নতুন প্রজন্মকে গভীর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তিনি।
কবির জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। ওই বছর তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন। সা¤প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামসহ প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারিতেই।
১৯৩৮ সালে সুফিয়া কামালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। এ বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটির প্রশংসা করেছিলেন। সুফিয়া কামাল ছিলেন ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক।
১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতাপ্রধান নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছায়ানটের সভাপতি ছিলেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মায়া কাজল, মন ও জীবন, প্রশস্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তার ‘কেয়ার কাঁটা’ নামে একটি গল্পগ্রন্থ ও ‘সোভিয়েত দিনগুলি’ নামে একটি ভ্রমণকাহিনি রয়েছে। সুফিয়া কামালের লেখা স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের ডায়েরি’। তিনি জীবনে ৫০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জননী সাহসিকার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ বেলা ১১টায় একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সভাগৃহে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তৃতা রাখবেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল। অতিথি থাকবেন অতিরিক্ত সংস্কৃতি সচিব হাসনা জাহান খানম। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘সুফিয়া কামাল ও তরুণ প্রজন্ম’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা রাখবেন আজকের পত্রিকার ডেপুটি এডিটর জাহীদ রেজা নূর। সুফিয়া কামাল সম্মাননা দেয়া হবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়