মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

সুদহার বাড়িয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রত্যাশিতভাবেই বাড়ানো হয়েছে রেপো হার বা নীতি সুদহার। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ‘সঙ্কুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকঋণের সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দিয়ে ‘রেফারেন্স রেট’ অনুযায়ী সুদ হার নির্ধারণের নতুন নিয়মে যাচ্ছে দেশ। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহারের সীমাও তুলে দেয়া হয়েছে। নতুন নিয়মে ব্যাংকঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। এসএমই ও ভোক্তাঋণের তদারকি খরচের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো ১ শতাংশ বেশি সুদ আরোপ করতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সুদহার সীমার বদলে প্রতিযোগিতামূলক ও বাজারভিত্তিক সুদহার কার্যকর হবে, যদিও তার মার্জিন থাকবে। এর মধ্য দিয়ে সমাজে অতিরিক্ত মুদ্রার সরবরাহে রাশ টানা হবে। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায়ও এ সিদ্ধান্ত কাজে আসবে বলে তারা মনে করছে। 
গতকাল রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বশরসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছি?লেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হ?য়। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, খাদ্য সংকটের আশঙ্কা, তারল্য পরিস্থিতি- এসব বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে প্রবৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে ঘোষিত হয়েছে আসন্ন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের পথনকশা। আগে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সাবেক গভর্নর ফজলে কবির সেই রেওয়াজ ভেঙে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফের আগের নিয়মে ফিরে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের শর্তের মধ্যে এটিও একটি।
মুদ্রানীতি উপস্থাপনায় হাবিবুর রহমান জানান, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় হারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ সুদ যুক্ত করতে পারবে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ শতাংশ সুদ যুক্ত করতে পারবে। এটাই হবে সুদের সর্বোচ্চ হার। নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসেবে বিবে?চিত রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা?ড়িয়ে ৬ দশ?মিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরু?রি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ। পাশাপাশি রিভার্স রেপো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বা?ড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ

থেকে ৪ দশ?মিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বে?শি সুদ পাবে। এছাড়া নীতি সুদহার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহারের করিডর প্রথা চালু হচ্ছে। এখন স্পেশাল রেপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ), নীতি সুদ ও রিভার্স রোপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ)।
মুদ্রানীতি ঘোষণার অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, এবার মুদ্রানীতিতে চারটি বিষয় গুরুত্ব দিয়েছি। আগের মুদ্রানীতিগুলোর তুলনায় চারটি মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে সংস্কার করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যেসব পরামর্শ দিয়েছে, তার অনেক ছাপ উঠে এসেছে এবারের মুদ্রানীতিতে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন বলা যায়। নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৩ শতাংশ, গত মুদ্রানীতিতে যা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, গতবার ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গতবারও একই ছিল।
চলতি জুন মাস শেষে অভ্যন্তরীণভাবে মুদ্রানীতির যে প্রক্ষেপণ ধরেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তার কতটা অর্জন হয়েছে, সে তথ্যও জানানো হয় অনুষ্ঠানে। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হলেও মে মাস শেষে অর্জন হয়েছে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, হয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, আর গত মে পর্যন্ত হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
জাতীয় বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে সরকার। এ অবস্থায় বেরসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানো নিয়ে অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মিজ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ছয় মাসে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এ কারণেই হয়তো প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটু বেশি কমিয়েছে এবার। কেননা আমাদের দেশের বিনিয়োগ হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। নতুন বিনিয়োগ মানেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি। লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ফলে এটি বিঘিœত হতে পারে। বিনিয়োগের অগ্রগতি স্তিমিত হতে পারে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে। এছাড়া সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেশি নেয়ার কারণে হয়তো কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে তারল্য সংকট মোকাবিলায় এটি করা হয়েছে, যদিও এতে তারল্য কমবে না। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রিজার্ভের হিসাব ‘দুই পদ্ধতিতেই’ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক : বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব ‘দুই পদ্ধতিতেই’ করবে। অর্থাৎ আগে যে পদ্ধতিতে করা হতো সেভাবেও করা হবে, আবার বিপিএম৬ পদ্ধতিতেও করা হবে। অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, আমরা বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য হিসাব করলেও তা প্রকাশ করব না। পৃথিবীর কোনো দেশ তা প্রকাশ করে না। আইএমএফের এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ থেকে যেসব বিনিয়োগ করেছি সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত। দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে আমরা এখন ফাইট করছি। হুন্ডির মহামারি চলছে। এরপরও আমাদের রেমিট্যান্স ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের রপ্তানিও এখন ভালো। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডি’স প্রসঙ্গে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এই রেটিং কমানোর বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু আসে যায় না। এটা করার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর আগে মুডি’স যে রেটিং দিয়েছিল, সেটা ২০১২ সালের দিকে। সে সময় আমাদের অর্থনীতি যেমন ছিল, তার চেয়ে এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে। যেসব কারণে এখন রেটিং কমানো হয়েছে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। যেটা করা হয়েছে সেটাকে পিওর ইকোনমিক রিপোর্টিং বলা যাবে না।
চালু হচ্ছে টাকার পে-কার্ড, ভারতে কেনাকাটার সুযোগ থাকবে : দেশে চালু হবে টাকার পে-কার্ড। এ কার্ড দিয়ে দেশের ভেতরে কেনাকাটাসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা যাবে। আবার একই কার্ড দিয়ে ভারত ভ্রমণের সময় রুপিতে খরচ করার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি গ্রাহকরা। ডলার সাশ্রয়ে এ উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর বলেন, আমরা টাকার একটি পে-কার্ড চালু করছি। এটাকে ভারতের রুপির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেব। এ কার্ড থাকলে গ্রাহকরা বাংলাদেশে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যে কোনো কেনাকাটা করতে পারবেন। আবার যখন ভারতে যাবেন তখন ওই কার্ড দিয়েই ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন। ফলে দুবার মানি চেঞ্জে যে লস (লোকসান) হচ্ছে, তা আর হবে না। এখন ভ্রমণে যেতে হলে প্রথমে টাকা থেকে ডলারে কনভার্ট করতে হয়, পরে ভারতে গিয়ে ডলার রুপিতে কনভার্ট করতে হয়। টাকার পে-কার্ড নিলে দুবার মানি চেঞ্জ করতে হবে না। এতে করে কমপক্ষে ৬ শতাংশের মতো খরচ কমবে। ভারতে প্রতি বছর অনেক বাংলাদেশি পর্যটক ঘুরতে যায়। এতে আমাদের অনেক ডলার বেঁচে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়