মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

বরফ গলার আশা দেখছে না কোনো পক্ষই : সন্দেহ অবিশ্বাসের আবহে চীন সফরে ব্লিংকেন

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : তাইওয়ান, বাণিজ্যসহ নানা ইস্যুতে টালমাটাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে গতকাল রবিবার চীন সফর শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক চীন সফরে গেলেন।
চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুদিনের আলোচনার শুরুতে গতকাল বেইজিংয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রতিপক্ষ ব্লিংকেনকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হাউসে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তারা করমর্দন করেন এবং পরে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলসহ আলোচনার টেবিলে বসেন।
অবশ্য ব্লিংকেনের এই সফরে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যকার বরফ গলার আশা দেখছেন না মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের প্রত্যাশা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে আরো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দ্বার উন্মুক্ত হোক। উভয় পক্ষই এটা পরিষ্কার করেছে যে, তারা এ সফর থেকে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি প্রত্যাশা করছে না।
চীনা কর্মকর্তারা ব্লিংকেনের এই সফরের বিষয়ে শীতল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, সম্পর্কের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সত্যি সত্যি আন্তরিক কিনা এ নিয়ে তারা সন্দিহান। এই সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ব্লিংকেনের সাক্ষাৎ হবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গত মাসে বলেছিলেন, ‘একদিকে (দ্বিপক্ষীয়) আলোচনার অনুরোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যে কোনো উপায়ে চীনকে দমিয়ে রাখতে চাইছে। আমেরিকার পক্ষ থেকে এ ধরনের মিশ্র সংকেতে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এর জেরে ব্লিংকেনের সফর ঘিরে বিশেষ আশাবাদী নয় চীন।’
ভুল-বোঝাবুঝি এড়ানোই এ সফরের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ব্লিংকেন। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘উন্মুক্ত যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝি ও ভুল ধারণা এড়ানোই তার চীন সফরের উদ্দেশ্য। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতার জন্য

টেকসই কূটনীতি প্রয়োজন, যাতে প্রতিযোগিতা সংঘাত বা দ্ব›েদ্বর দিকে না যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছে এটাই প্রত্যাশা করে বিশ্ব।’
সা¤প্রতিক অতীতে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে দুই দেশের স্নায়ুযুদ্ধের সূত্রপাত। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির গত বছরের তাইওয়ান সফরকে ঘিরে চীনের সঙ্গে বাইডেনের দেশের স্নায়ুযুদ্ধ বেড়েছে বই কমেনি।
ব্লিংকেনের সফর নিয়ে বিশেষ হইচই নেই চীনের জাতীয় সংবাদমাধ্যমে। আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্টিমসন সেন্টার’ এর ডিরেক্টর ইয়ুন সান বলেন, ব্লিংকেনের সফর ঘিরে পশ্চিমি দেশগুলোর মতো ততটা উৎসাহী নয় চীন। বেলুনকাণ্ডের পর আরো একবার নিজেদের মুখ পুড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে চীনের। সে কারণে এই সফর ঘিরে প্রত্যাশাও সচেতনভাবে কম রাখা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের সফরে যেসব বিষয় আলোচনায় ঠাঁই পেতে পারে, সেগুলো হলো- ব্লিংকেনের সফরে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের বিষয়টি। গত মাসে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নানা ইস্যুতে কথা বলেন।
দ্বিতীয়টি হলো বাণিজ্যিক দ্ব›েদ্বর নিরসন। যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার চিপ চীনে রপ্তানির মতো কিছু ক্ষেত্রে বাইডেন আরো শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। কেননা, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায়। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মেমোরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোন টেকনোলজির পণ্য চীনে বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং। যদি কম্পিউটার প্রযুক্তি দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়, তবে অবৈধ ওষুধ বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি হতে পারে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ানোর বড় জায়গা। চীনে উৎপাদিত রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ‘ফেন্টানিল’ তৈরি বন্ধ হোক, ওয়াশিংটন এটা চায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত বছরে হেরোইনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী ফেন্টানিলের অতিরিক্ত ডোজের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে।
কুর্ট ক্যাম্পবেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা অবশ্যই খুব জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে তিনি এও বলেন, এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তৃতীয়টি হলো- সংঘাত পরিহার। বেলুনকাণ্ডের পর বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে চীন চিন্তাভাবনা করছে। ওই অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত হবে। যদিও পরে মার্কিন কর্মকর্তারা ওই অভিযোগ থেকে দূরে সরে যান। কেননা, এই বিতর্কিত বিষয়টি ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ছায়া (প্রক্সি) যুদ্ধে গড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করে। তবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চীনা প্রতিনিধিদের যে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল, ব্লিংকেন চীন সফরে তারই প্রতিধ্বনি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিয়েনা বৈঠকে বলা হয়েছিল, যদি রাশিয়াকে চীন সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা দেয়, তবে তার পরিণতি হবে মারাত্মক। ব্লিংকেন ও তার কূটনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাদের এ সফরের উদ্দেশ্য উত্তেজনাকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করা এবং দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘মধুর’ করার এটাই কি শেষ সুযোগ আমেরিকার? পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ওয়াং বলেন, ‘(বাইডেন সরকারের) হাতে আর বিশেষ সময় নেই। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক মেরুকরণ এতটা স্পষ্ট যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য চলতি বছরে আর সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে বাইডেন সরকারের।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়