জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

রাজশাহীতে শিল্পায়নে গুরুত্ব

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান ও সাইদুর রহমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন আর মাত্র ৩ দিন পরই। রাজশাহী শহরের ওলিগলি, চায়ের দোকান, শপিংমল ও পাড়া-মহল্লায় চলছে ভোটের আলাপ-আলোচনা। প্রার্থীরাও প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভোটারদের দরজায়। তুলে ধরছেন নিজের পরিকল্পনা ও রাজশাহীকে আরো সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার আশ্বাসের বাণী। তবে সব ছাপিয়ে প্রার্থীদের মুখে সবার আগে গুরুত্ব পাচ্ছে রাজশাহীতে শিল্পায়নের অঙ্গীকার। এর কারণ হিসেবে মেয়র প্রার্থীরা বলছেন, রাজশাহীতে প্রধান সমস্যা বেকারত্ব। বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র। অনেকে অল্প টাকার বেতনের জন্য রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। এজন্য সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে শিল্পায়ন জরুরি। এটি না হলে রাজশাহীবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।

প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা দেখা যায়- রাজশাহীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সবুজায়ন, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, খেলার মাঠ স্থাপন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণের কথা বলা হয়েছে। রাজশাহীকে শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন সবাই। এরই অংশ হিসেবে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প-কলকারখানা স্থাপন, রাজশাহী থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা, বন্ধ টেক্সটাইল মিল ও রেশম কারখানা চালু করা, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করা, কৃষিভিত্তিক ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। প্রচারণায় সব মেয়র প্রার্থীর কণ্ঠে একই সুর- নির্বাচিত হলে দূর হবে বেকারত্ব। শিল্পায়নে দেয়া হবে গুরুত্ব।
এ বিষয়ে রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদিচ্ছা ও আমাদের নৈতিক চেষ্টায় পরিকল্পিত সিটি হিসেবে রাজশাহী অন্যদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। তবে, এখানে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এ জন্য আমার প্রধান দায়িত্ব হবে বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এটিকেই আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যদি নগরবাসী এবারো আমার উপর ভরসা রাখেন, আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেন, আমি তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। তখন রাজশাহী সিটি হবে উদ্যক্তাদের শহর। অনেক বড় বড় উদ্যক্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারা রাজশাহীতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আশা করি, এই কাজটি আমি করতে পারব।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, রাজশাহীতে গার্মেন্টস শিল্প গড়ে তুলে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করবেন। আপনি দুইবার মেয়র থাকার পরও সেটি হয়নি। এবারো কি শুধু প্রতিশ্রæতি হিসেবে রয়ে যাবে কর্মসংস্থানের বিষয়টি? এমন প্রশ্নের জবাবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের পথেই ছিলাম। ২০১৩ সালে যদি আমার পরাজয় না হতো, কাজটি ঠিকই বাস্তবায়ন হতো। এবার শুধু প্রতিশ্রæতি নয়, আমার মেয়াদের মধ্যেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ করে, বিসিক-২ অঞ্চল ঘিরে আমার বেশ কিছু সূদুরপ্রসারি পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের এখানে আম খুব বিখ্যাত, আলু ও টমেটো হচ্ছে। এগুলো থেকে পণ্য যাতে রাজশাহীতেই তৈরি হয়, সেই উদ্যোগ নেব। আশা করি সফলতা আসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহীর দুইবারের মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করেছি, পর্যায়ক্রমে আরো করা হবে। শহরে ছোট ছোট গাড়ি (ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা) অনেক। এটির কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এটিকে কিভাবে একটি সিস্টেমের মধ্যে আনা যায় সেই পরিকল্পনাও আমার রয়েছে। শব্দ দূষণসহ আরো কয়েকটি সমস্যা ছোট পরিসরে রয়ে গেছে, এগুলো সমাধানে যা করা দরকার, আমার পক্ষ থেকে করা হবে।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও মানুষের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন এখনো রাজশাহীতে হয়নি। অতীতের মেয়ররা শুধু আশার বানি শুনিয়েছেন, আর লুটপাট করেছেন। এজন্য আমার প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে- কমপক্ষে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। অনেক গ্রুপ অফ কোম্পানি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এখানে শিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে। আমি তাদেরকে স্বাগত জানাই। যিনিই মেয়র হোন, তারা যেন আমাদের রাজশাহীবাসীর পাশে দাঁড়ায়। পাশাপাশি আমার চেষ্টা থাকবে, যে শিল্প কারখানাগুলো রাজশাহীতে রয়েছে; যেমন- টেক্সটাইল, জুটমিল, সুগার মিলের মতো প্রতিষ্ঠান- প্রাইভেট সেক্টরে দিয়ে আরো গতিশীল করা। সরকারি যে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো পুনরায় চালু করা। একটি ইপিজেড করারও উদ্যগ আমি নিবো। এতটুকু করলেই মানুষ অনেকটা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। পর্যায়ক্রমে আরো করা হবে। আমি শুরুতেই মিথ্যা আশ্বাস হিসেবে বলতে চাই না, লাখ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেব।
নগরীর সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আরো বলেন, রাজশাহীর সমস্যা খালি চোখেই স্পষ্ট। উন্নয়নের নামে ৯০ শতাংশ পুকুট ভরাট করা হয়েছে, ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। সবুজায়ন কমতে কমতে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে নেমেছে। মশার উপদ্রব বাড়ছে। চিকিৎসাসেবার নামে গরিব অসহায় মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। আমি কথা দিচ্ছি, মেয়র হলে প্রথম যে কয়টি পদক্ষেপ নেব- তার মধ্যে অন্যতম সবুজায়ন ফিরিয়ে এনে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানো। কারণ সবুজায়নে জোর না দিলে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হবে না। পাশাপাশি নামধারী ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে যাব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাজার টাকার লাইট লাখ টাকায় ক্রয় দেখিয়ে নগরীর উন্নয়ন করা হচ্ছে। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। একটা কথাই বলব- মেয়র হলে রাজশাহীর উন্নয়নে যা করার সবই আমি করব।
জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী লতিফ আনোয়ার ভোরের কাগজকে বলেন, আমি শুরু থেকে বলে আসছি- রাজশাহীর যে বেকার সন্তানরা আছে, তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। মূলত রাজশাহীতে এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মানুষ ঢাকায় গিয়ে ৫-৭ হাজার টাকার চাকরি করে কোনো বাসা ভাড়া করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই জায়গাটির পরিবর্তন দরকার। রাজশাহী থেকে যেন কারো যেতে না হয়, নিজ বাড়িতে থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করাটাই আমার মূল লক্ষ্য। এজন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল ও রেশম কারখানাগুলো চালু করা হবে। পাশাপাশি রাজশাহীতে পরিবেশের ক্ষতি করে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসব। উন্নয়ন কাজের সঙ্গে কীভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়, সেটিই থাকবে উদ্দেশ্য। সংস্কৃতি চর্চার জন্য টিভি সেন্টার আবার সংস্কার করে চালু করব। নারীদের কর্মসংস্থানেও সমানভাবে জোর দেব। রাস্তা প্রশস্ত করার সময় যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হেরিটেজের ক্ষতি করা হয়েছে, সেগুলোর সংস্কারের উদ্যগ নেব। হরিজন সম্প্রদায়ের আধুনিক আবাসিক ভবন করে দেয়া হবে।
আনোয়ার আরো বলেন, সুউচ্চ ভবন নির্মাণের সময় আশপাশের অনেক গরিব পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা প্রতিকার চেয়েও পান না। তাদের সমস্যার প্রতিকারে উদ্যোগ নেব। সর্বোপরি এটা বলতে চাই, নৌকার প্রার্থী মেয়র থাকাকালীন উন্নয়ন করেছেন, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে, রাজশাহীর জন্য আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। যেটি আমি করে দেখাতে চাই। এয়াড়াও আমি হেরিটেজ রক্ষায় গুরুত্ব দিতে চাই। যাতে ১০০ বছর পরও কেউ রাজশাহীতে এসে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়