জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মৎস্য হ্যাচারি : নানা সংকটেও রেণু উৎপাদনে সাফল্য

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : নেই পর্যাপ্ত জনবল। বসার জন্য ভালো কার্যালয়ও নেই। পুকুরপাড়ের সড়কবাতিও জ্বলে না। এত সমস্যা থাকার পরও খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মাছ চাষের জন্য রেণু ও পোনার চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। এগুলো বিক্রিও হচ্ছে সুলভ মূল্যে।
কম দামে উন্নতমানের রেণু ও পোনা কিনে উপকৃত হচ্ছেন মাছচাষিরা। এ বিভাগে মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসা সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরে। এর নাম বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। এই হ্যাচারির কর্মকর্তা কর্মচারীর ২৭টি পদের মধ্যে ১৭টি শূন্য। অথচ প্রতিষ্ঠানটি খুলনা বিভাগের রেনু পোণার চাহিদার ৬৫ শতাংশ পূরণ করছে বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস হ্যাচারি থেকে।
বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারি সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মাছের হ্যাচারি ও মাছচাষিদের কার্পজাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের বৃহত্তম এই হ্যাচারি। ১০৩ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি পুকুর। এসব পুকুরে নিয়মিত মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ চীন ও ভিয়েতনাম থেকে রেণু আমদানি করে মাছের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে বিক্রি করছে।
হ্যাচারির এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে লোকবল সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছিল। হ্যাচারির ভবনগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছিল। পুকুরগুলোও ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।
২০২০ সাল থেকে হ্যাচারিটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। হ্যাচারির ব্যবস্থাপক আশরাফ-উল-ইসলাম যোগদানের পর তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় তারা নিয়মিত রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ প্রজননক্ষম মাছ সরবরাহ করছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর ও স¤প্রসারণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এলাকায় কার্প হ্যাচারির প্রসার ঘটেছে। শুধু যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় দুই শতাধিক কার্প প্রজাতির মাছের হ্যাচারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এই হ্যাচারিতে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্র অর্জনে সক্ষম।
হ্যাচারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এই হ্যাচারি থেকে ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা। হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ ৪৮ লাখ ১৫ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রি করে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এর আগের অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রি হয়েছে। এখানে সরকারনির্ধারিত মূল্যে প্রতি কেজি রেণু ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মৎস্য হ্যাচারির কর্মকর্তারা জানান, এখানে বর্তমানে ২৭টি পদের মধ্যে ১৭টি শূন্য। এর মধ্যে সাতজন দক্ষ ফিশারম্যান থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুজন। চারজন পাম্প অপারেটরের স্থানে আছেন একজন। এ ছাড়া এখানে দুজন ঝাড়ুদার এবং একজন করে হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট ও অফিস সহায়ক কর্মরত।
একজন কর্মচারী জানান, নানা সমস্যার মধ্যেও এখানে বিগত কয়েক বছর করোনা মহামারির সময় রেণু ও পোনা উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। তা ছাড়া ঝিনাইদহ, যশোর জেলা বাঁওড়সমৃদ্ধ হওয়ায় এখান থেকে উৎপাদিত রেণু ও পোনা বাঁওড়ে মজুত ও চাষের ফলে শত শত টন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে।
ওই কর্মচারী আরো জানান, চীন থেকে আমদানিকৃত উন্নত প্রজাতির সিলভার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের পোনা দুই বছর পরিচর্যার পর ব্রুড মাছ উৎপাদন করে তা থেকে রেণু উৎপাদন করছেন তারা। ইতোমধ্যে এই রেণু বিক্রি শুরু হয়েছে। এই ব্রুড মাছের গুণগতমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) থেকে সুবর্ণ রুই, পাঙাশ ও কালোবাউশ মাছের ব্রুড মাছ এনে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মাছচাষি সজিব আহম্মেদ জানান, তারা নিয়মিত এখান থেকে রেণু ও পোনা নিয়ে যান। এখানে সব সময় স্বল্প মূল্যে রেণু ও পোনা পাওয়া যায়।
তার মতো অনেকে এখান থেকে রেণু ও পোনা নিয়ে মাছ চাষ করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। হ্যাচারি ব্যবস্থাপক আশরাফ-উল ইসলাম জানান, বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে রেণু ও পোনা উৎপাদন করে মৎস্যচাষিদের মধ্যে সুলভমূল্যে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি মাছ চাষে নতুন নতুন কলাকৌশল ও প্রযুক্তি সম্পর্কে মৎস্যচাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়।
আশরাফ-উল ইসলাম আরো বলেন, এই হ্যাচারির ১ নম্বর গেট থেকে বাঁওড় গেট পর্যন্ত প্রাচীর নির্মাণ, রেণু উৎপাদনকাজে পানি সরবরাহের জন্য ৯ ইঞ্চি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন, ১৫টি পুকুর পুনঃখনন, পুকুরপাড়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ভাণ্ডারকক্ষ সংস্কারসহ বেশ কিছু কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব কাজ শেষ করতে পারলে এখানে আরো বেশি পরিমাণে উন্নতমানের রেণু ও পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়