জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

কাউন্সিলর নিয়ে জামায়াতের দাপট! রাজশাহীতে ব্যস্ত গণসংযোগ লিটনের, ‘ক্লান্ত’ জাপার প্রার্থী

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠে ক্ষমতা প্রদর্শন শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। মেয়র পদে তাদের প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে লড়ছেন দলটির চিহ্নিত বেশ কয়েকজন নেতা। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আক্ষেপের সুরে সামনে এনেছেন নানা অভিযোগ। আর নীরব ভূমিকায় জাকের পার্টি মনোনীত গোলাপফুল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী। অবশ্য জয় নিশ্চিত জেনেও গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামাম লিটন। এদিকে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

জানা গেছে, এবারের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন বিএনপির পদধারী ১৬ জন নেতা। শোকজের পর গত ৭ জুন তাদের ‘বেইমান’ আখ্যা দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। মেয়র পদে বিএনপি নেতা সাইদ হাসানের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন উঠলেও শেষপর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন তিনি। তবে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান নেয় বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত। অন্তত ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। বিএনপির বহিষ্কৃত ১৬ প্রার্থীকেও দিয়েছে সমর্থন। রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডে ২৫ প্রার্থীর প্রচারণায় নেমেছে বিএনপি-জামায়াতের বড় একটি অংশ।
সূত্র জানিয়েছে, রাসিকের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে জামায়াতের শক্তিশালী ভোটব্যাংক। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের মতিহার থানা শাখার সাবেক আমির ও জামায়াতপন্থী শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদ। তিনি পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। গত শুক্রবার রাতে নগরীর বুধপাড়া এলাকায় মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলরপ্রার্থী মো. আলাউদ্দিনের সমর্থকদের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় রাতেই থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন করেন জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নেতা। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। ওই ওয়ার্ডে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ।
সূত্র বলছে, ২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের রোকন মোকলেসুর রহমান। তিনি একটি কলেজের শিক্ষক। তার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াত নেতা রবিউল ইসলাম প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আফজাল হোসেন। তিনি পুলিশ পেটানোসহ একাধিক মামলার আসামি। নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াত নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটা বিএনপিরই কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে নির্বাচনে অংশ নিলেও দৃশ্যমান প্রচারণা নেই জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থীর। নগরীতে তাদের পোস্টার, ফেস্টুন ও মাইকিং নেই বললেই চলে। এটার পেছনে যুক্তি তুলে ধরেছেন এ দুই প্রার্থী। এ ব্যাপারে গত শনিবার রাতে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা বলে- ভোট চেয়ে কী করবেন! ভোটের রেজাল্ট তো সবার জানা। এসব শুনে আমি হতাশ। আসলে ভোটের কোনো পরিবেশই নাই। তবু নির্বাচনে আছি। নির্বাচন বর্জন করে নিলেই বোধহয় ভাল হয়।’
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার জাকের পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী লতিফ আনোয়ার ভোরের কাগজকে বলেন, ‘আমার পলিসি আলাদা। আমার পোস্টার-ফেস্টুন দরকার নাই। আমি পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে যাচ্ছি। প্রতিদিন ৩০ কিলোমিটার করে পায়ে হেটে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাচ্ছি। ফলাফল যেটাই হোক, আমি শেষপর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।’ আর আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভোরের কাগজকে বলেছেন, ‘প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান টার্গেট, ভোটারদের কেন্দ্রে আনা।’
এদিকে নির্বাচন কমিশনার সেজে এক কাউন্সিলরের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গিয়াস উদ্দিন (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকা থেকে আরএমপির গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারক মুঠোফোনে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে ফোন দিয়ে নিজেকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান হাবিব খানের পরিচয় দেন এবং নির্বাচন নিয়ে নানান কথাবার্তা বলেন। কিছুক্ষণ পরে প্রতারক ওই প্রার্থীকে আবারো ফোন দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এক পর্যায়ে প্রতারক ওই প্রার্থীর কাছে টাকা দাবি করেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে নির্বাচনে ফলাফল তার বিরুদ্ধে যাবে বলে হুমকি দেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন : অন্যদিকে গতকাল রাজশাহীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার বলেছেন, যেহেতু বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃারা রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আসছে না, তাই এ নির্বাচন তেমন প্রতিযোগিতাúূর্ণ হবেনা। তবে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন স্বস্ব অবস্থান থেকে স্ব স্ব ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এতে সুজনের রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়