পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে- এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি : ‘পরিকল্পিত সিলেটে’ প্রাধান্য

পরের সংবাদ

প্রভাব নেই পাকিস্তানে : গুজরাতে তাণ্ডব চালিয়ে বিপর্যয় রাজস্থানে

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আরব সাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ ভারতের গুজরাট রাজ্যে তাণ্ডব চালিয়ে গতকাল শুক্রবার রাজস্থানের দিকে এগিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার গুজরাতের কচ্ছে আছড়ে পড়ার পর মাঝরাতে সেটি শক্তি হারিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। রাতভর উপকূলীয় জেলাগুলোয় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বৃষ্টিও হয়েছে। গতকাল সকালে কোনো কোনো জায়গায় বৃষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
এই ঝড়ে কোনো প্রাণহানি না হলেও ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। কচ্ছ জেলায় ঝড়ের দাপটে ৫২৪টি গাছ উপড়ে পড়েছে। বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে আছে গুজরাটের অন্তত ১ হাজার গ্রাম। ঝড়ের তাণ্ডবে আহত হয়েছেন ২৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৪টি গবাদি পশুর। ভাবনগর জেলায় নিজেদের ছাগলের পালকে রক্ষা করতে গিয়ে এক পশুপালক ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এএনআই, পিটিআই
রাজ্যের ৮টি জেলা ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হলো- কচ্ছ, দেবভূমি দ্বারকা, জামনগর, পোরবন্দর, জুনাগড়, গির সোমনাথ, মোরবী এবং রাজকোট। বিপর্যয়ের দাপটে এই জেলাগুলো একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। দ্বারকায় সাড়ে ৩০০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। বহু কাঁচা বাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। বাসিন্দাদের আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ায় প্রাণহানি এড়ানো গেছে বলে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে। এদিকে, মাণ্ডবী শহরও পুরোপুরি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ঝোড়ো হাওয়ায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে।
গুজটার সরকার জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতিতে তারা রাজ্যের উপকূলীয় ও নি¤œাঞ্চল এলাকা থেকে ৯৪ হাজার মানুষকে সরিয়ে এনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় তোলে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ১৮টি দল কাজ করছে। এছাড়াও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২টি দল, সড়ক এবং আবাসন দপ্তরের ১১৫টি দল এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের ৩৯৭টি দল যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে। আজ শনিবার পর্যন্ত সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। জামনগর বিমানবন্দর গতকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৯৯টি ট্রেন বাতিল করেছে পশ্চিম রেল।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে জানানো হয়, শুক্রবার দুপুরের দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। এর পর দক্ষিণ রাজস্থানে ঢুকবে সন্ধ্যার দিকে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৭৫-৮৫ কিলোমিটার। এর পর সেটি আরো শক্তি হারিয়ে গভীর নি¤œচাপে রূপ নেবে। এর প্রভাব পড়বে জোধপুর, জয়সলমের, পালি এবং সিরোহী জেলায়। রাজস্থানের এই জেলাগুলোয় অতি ভারি বৃষ্টি হবে। গতকাল সকাল থেকেই জালোর এবং বারমের জেলায় প্রবল বৃষ্টি হয়। আজ একই পরিস্থিতি থাকবে জোধপুর, উদয়পুর এবং আজমিরে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিপর্যয় আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার। কিছু জায়গায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। ঘূর্ণিঝড়টিকে ‘ক্যাটাগরি ৩’ বলে ঘোষণা করা হয়, যা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্বীকৃত।
ছাগল বাঁচাতে গিয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু : গুজরাটে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সৃষ্ট বন্যায় আটকে পড়া ছাগল বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। সম্পর্কে তারা বাবা ও ছেলে। স্থানীয় রাজস্ব কর্মকর্তা এস এন ভালা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিপাতের পর সিহোর শহরের কাছে ভান্ডার গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি গিরিখাতে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। আচমকা পানির প্রবাহের কারণে এক পাল ছাগল ওই খাদে আটকে যায়। এসব গবাদি পশুদের বাঁচাতে রামজি পারমার (৫৫) ও তার ছেলে রাকেশ পারমার (২২) উপত্যকায় ঢুকে পড়েন। তবে পানির স্রোতে তারা ভেসে যান। পরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। গিরিখাতে আটকে পড়া ২২টি ছাগল এবং একটি ভেড়াও সেসময় মারা যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি পাকিস্তানে : এদিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতিতে ৮২ হাজার পাকিস্তানি নাগরিকসহ মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। সিন্ধু প্রদেশের বন্দরনগরী করাচি ও উপকূলীয় এলাকা মাকলি, থাট্টা, বাদিনসহ ও অন্যান্য অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়