পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে- এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি : ‘পরিকল্পিত সিলেটে’ প্রাধান্য

পরের সংবাদ

পরিত্যক্ত খড়ে গোখাদ্যের অর্ধেক জোগান দেয়া সম্ভব

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : গবাদিপশুর গোখাদ্যের একটি অংশের জোগান আসে খড় থেকে। পাশাপাশি অনেকে সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্য দিয়ে থাকে পশুদের। তবে সহজেই মিলে খড়। আর খড় আসে বছরে তিনটি উৎপাদিত নওগাঁ জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ থেকে। জমিতে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খড় রেখেই পরিবহনের সুবিধার জন্য শুধু ধান কেটে নিয়ে যান শ্রমিকরা। এতে বছর শেষে গবাদিপশু পালনকারীরা পড়েন খড় সংকটে। বাধ্য হয়ে অন্যের দারস্থসহ খড় কিনে খাওয়াতে হয়। এতে করে অথনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি বা চাষিরা। যদি জমি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খড় কাটা হয় তাহলে বছরের প্রায় ৫০ শতাংশ গোখাদ্যের জোগান দেয়া সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ইরি-বোরো, আউশ ও আমন জমির পরিমাণ প্রায় চার লাখ ৪২ হাজার হেক্টর। প্রতি বছর এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় কোটি টাকার খড় উৎপাদন হয় (বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকা হিসেবে)। খড়ের যে পরিমাণ অবশিষ্ট অংশ জমিতে পড়ে থাকার তার বাজারমূল্য প্রায় আরো ৫০ লাখ টাকা।
জেলার সদর, বদলগাছী, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাটসহ কয়েকটি উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। মাঠ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ধান কেটে নেয়ার পর অবশিষ্ট খড় জমিতে প্রায় এক থেকে দেড় ফুট রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও আরো বেশি পড়ে আছে। অনেকে আবার সেই খড় গবাদিপশুর জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে খড় কেটে ফেলে দিচ্ছে।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে মাঠের ফসল ধরে তুলতে পেরেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটতে কৃষকদের খচর পড়েছে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। আবার কোথায় প্রতি মণ ধানে শ্রমিকরা মজুরি নিয়েছেন ৬-৭ কেজি করে ধান। বাড়তি মজুরি দেয়ার পরও প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খড় জমিতে রেখে ধান কেটে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, ধানের গোড়া পর্যন্ত কাটা খড় ওজনে বেশি হয়। এতে করে জমি থেকে কাঁধে বা মাথায় বহন করে নিয়ে আসা কষ্টসাধ্য। এছাড়া সময়ও বেশি লাগবে। তাই বাধ্য হয়ে মাঝ বরাবর জমি থেকে খড় কাটা হয়। তবে নিচ থেকে ধান কাটা হলে খড়ের পরিমাণ বেশি হতো।
জেলার মান্দা উপজেলার চকবালু গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ১৮-২৫ পন (৮০ আঁটি এক পন) খড় পাওয়া যায়। পুরাতন খড় ২৫০-৪০০ টাকা পন এবং আকারে ছোট নতুন খড় ১২০-১৫০ টাকা পন হিসেবে বিক্রি হয়। এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ খড় পাওয়া যায় তার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার টাকা। জমিতে যে পরিমাণ খড় হয় তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ জমিতে থেকে যায়। বলা যায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার খড় জমিতে থেকে যায়।
ধামইরহাট উপজেলা ফতেপুর গ্রামের কৃষক সানাউল হক বলেন, ধান ছোট করে কাটলে শ্রমিক কম লাগে এবং পরিবহনে সুবিধা হয়। শ্রমিকরা ধান লম্বা করে কেটে দিতে চাই না এবং মজুরি বেশি নিতে চাই। অনেক সময় শ্রমিকও পাওয়া যায় না। এ বছর মনে ৬-৭ কেজি করে ধান দিতে হয়েছে।
উপজেলার চকপ্রসাদ গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। খড়ের প্রায় অর্ধেক অংশ জমিতে থেকে গেছে। এখন নিজ থেকে কেটে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। মজুরি দিয়ে ধান কেটে নেয়ার পরও এখন নিজেকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। আর এভাবে ধান কেটে নেয়ায় খড়ও কম পাওয়া গেছে। বছর শেষে দেখা যায় খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে হয়। অন্তত ৩-৪ হাজার টাকার খড় প্রতি বিঘা জমিতে থেকে গেছে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ধান কাটার সময় ওপরের অংশ কাটা হলেও নিচের অংশ জমিতে থেকে যায়। এতে করে গবাদিপশুর আপদকালীন বা সংকটকালীন যে খাদ্যসংকট হয় খামারি তা পূরণ করতে পারে না। কৃষকদের কাছে পরামর্শ থাকবে, ধান কাটার সময় অবশ্যই ধানের গোড়া পর্যন্ত কাটতে হবে। এতে করে সারা বছর সংরক্ষণ করে গবাদিপশুর খাদ্যে জোগান দেয়া সম্ভব।
নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ধান কাটার পর জমিতে যে অংশ পড়ে থাকে তা জমির জন্য উপকার। এসব খড় পচে পরবর্তীতে মাটির সঙ্গে জৈব উপাদানে পরিণত হয়। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো হবে। আর গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য যদি বলা হয় যতটুকু খড় কাটার প্রয়োজন তা কেটে বাকি অংশ জমিতে রাখা ভালো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়