প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : আষাঢ়ের প্রথম দিন- নামবে ঝুম বৃষ্টি। এমনটা ভেবেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কাল সারাটা দিনই কাঠফাঁটা রোদে পুড়েছে রাজধানী। বৃষ্টিবিলাসী অনেকের গা ভিজেছে ঘামে, বৃষ্টিতে নয়। এই অবস্থায়ই উদযাপিত হয়েছে বর্ষা উৎসব। বৃষ্টিহীন বর্ষা উৎসব- যেন এক ‘আষাঢ়ে গল্প’ই!
উৎসবের সঙ্গে মিশে যেতে সবুজ-আকাশি-নীল রঙের শাড়ি আর খোঁপায় ফুল গুঁজে সেজেছিল মেয়েরা, ছেলেদের পোশাকেও ছিল ভরা বর্ষার সৌন্দর্য নীল পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। বর্ষাকে বরণ করতে দিনটির প্রথম প্রহরে উৎসবে মেতেছিল বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চ। বর্ষাবরণের এ উৎসবের আয়োজন করেছিল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানাসংলগ্ন মিল ব্যারাকের বুড়িগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত জেটিতে বসেছিল বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদ-১৪৩০ এর আয়োজন। প্রতি বছরের মতো এবারো সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় যন্ত্রসংগীত শিল্পী হাসান আলীর বাঁশি বাদনের মধ্য দিয়ে।
এরপর একে একে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য, দলীয় ও একক সংগীত আর আবৃত্তি। উৎসবে একক গান পরিবেশন করেন খন্দকার খাইরুজ্জামান কাইয়ুম, অণিমা রায়, নীলয় আকাশ, টিটু আলী, ফেরদৌসী কাকলি, শ্রাবণী গুহ রায়, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, রতœা সরকার, এস.এম মেজবাহ ও তামান্না নিগার তুলি। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে বাফা, স্পন্দন, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র ও পুষ্পাঞ্জলি। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে বহ্নিশিখা, বাফা, সুরবিহার, ভিন্নধারা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ও শিশু-কিশোর সংগঠন সীমান্ত খেলাঘর আসর। বর্ষাকথন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র শহীদুল্লাহ মিনু। বর্ষাকথন পাঠ করেন বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী।
প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সারা পৃথিবীজুড়ে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেই প্রকৃতি বিরূপ হয়ে গেছে। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বাড়াতে হবে, ভালোবাসতে হবে। তিনি বলেন, ঘরে ঘরে নতুন প্রজন্ম এখন আর পাহাড় দেখে না, নদী দেখে না। পাহাড়-নদীর কাছে যেতে হবে।
কেবল ভালো মানুষ কিংবা ভালো ছাত্র হয়ে লাভ নেই, মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। প্রকৃতির প্রতি মানবিক হতে হবে। আমরা আশা করব, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতি সুরক্ষা, ঋতুবৈচিত্র্য রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজনীয়, করণীয় সবকিছু করবে। প্রকৃতির উপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধে তারা আরো সচেতন হবেন।
ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশের নাগরিক মানুষও বর্ষা উৎসবে যোগ দিয়ে ‘বর্ষার মতো সজীব আর উদার’ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বর্ষা প্রতি বছর পলিমাটি নিয়ে এসে উর্বর করে মাটি। ধুয়ে দেয় সব ময়লা। বর্ষার মতো সজীব হয়ে ওঠে দেশবাসী মনের সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলবেন, সংকট নিরসনে এগিয়ে এসে আরো উদার হবেন, এমনই আশা করি। নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় শিশু-কিশোরদের প্রকৃতি-সংযোগ ঘটাতে বর্ষা উৎসবের মতো আয়োজনের গুরুত্বও নিজের বক্তৃতায় তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে সকাল ৭টায় বর্ষাকথন, আবৃত্তি, গান ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে বর্ষা উৎসব। সূত্রধর অর্জুনের সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় তবলা বাজান হরিপদ সূত্রধর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- চিত্তরঞ্জন দাশ, যিনি সারাদেশে স্বেচ্ছায় ও স্বউদ্যোগে ৫৫ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন। বর্ষা উৎসবে দলীয় নৃত্য, দলীয় ও একক সংগীত, আবৃত্তি ও নাটকসহ ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শাখার শিল্পীদের পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে বর্ষাকথন অংশ নেন পরিবেশবিদ ও আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ উদীচীর নেতাকর্মীরা। দুই আয়োজনেই প্রতীকীভাবে ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।