সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

নবজাতকের মৃত্যু : সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের দায় স্বীকার, ক্ষতিপূরণ দাবিতে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর গ্রিন রোডে বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা ও ডা. মুনা সাহা নামের দুই চিকিৎসক দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে। এ সময় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে তারা সম্মত হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা আসামি মুনার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমি আসামি শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ, সহকারী জমির ও এহসানকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকেও আসামি করা হয়। এর মধ্যে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গত বুধবার রাতেই হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় বুধবার রাতেই দুজনকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। তবে মামলায় ডা. সংযুক্তা সাহাকে এজাহারভুক্ত করা হয়নি। ওসি বলেন, তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। মামলায় তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার

দিকে নীলক্ষেত মোড়ে ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার প্রতিবাদ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। এ সময় নবজাতক হত্যার বিচার চাই, মাহবুবার সুচিকিৎসা চাই, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার বিচার চাই, চিকিৎসার নামে অর্থ-বাণিজ্য, অবহেলা বন্ধ হোক- এরকম বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় ছাত্রদের। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহবুবা রহমান আঁখি ইডেন মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এই দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় ও সিজার ছাড়া প্রসবের জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কিনা জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন ও চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না ও তারা রোগীর কোনোরকম পরীক্ষা ছাড়াই প্রসব করানোর কাজ শুরু করে দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। এ সময় সংযুক্তা সাহার সহকারী জমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি জানতে চান ওই চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন কিনা। জমির তাকে বলেন, ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালেই আছেন, ইয়াকুব যেন দ্রুত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছান ইয়াকুব। সংযুক্তা সাহার চেম্বারের সামনে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর ডা. মুনাসহ হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী প্রসূতিকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ডা. সংযুক্তা সাহা লেবার ওয়ার্ডে রয়েছেন বলে সে সময় ইয়াকুবকে জানানো হয়। লেবার ওয়ার্ডে নেয়ার পর ভেতর থেকে একজন নার্স বের হয়ে আঁখিকে ভর্তি করাতে বলেন। তখনই ইয়াকুব হাসপাতালের কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সংযুক্তা সাহার অধীনে আঁখিকে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেন। ভর্তি শেষে লেবার ওয়ার্ডে ফিরে ইয়াকুব স্ত্রীর অবস্থা জানতে চান, সংযুক্তা সাহার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা গড়িমসি করেন বলে তার ভাষ্য। এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ইয়াকুব রাত সোয়া ১টার দিকে জোর করে লেবার ওয়ার্ডে ঢুকে দেখতে পান, কয়েকজন নার্স মিলে তার স্ত্রী আঁখিকে হাঁটাচ্ছেন। ইয়াকুব জানতে চান, ডা. সংযুক্তা সাহা কোথায়। নার্সরা প্রশ্ন এড়িয়ে তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। বাদী মামলায় বলেছেন, রাত আড়াইটার দিকে ডা. শাহজাদী লেবার ওয়ার্ড থেকে বের করে মাহাবুবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ডা. এহসানও ?ওটিতে ঢোকেন। পরে ডা. শাহজাদী সিজারিয়ান অপারেশন শেষ করে নবজাতককে জীবিত অবস্থায় হাসপাতালের এনআইসিইউতে নিয়ে যান। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ওটি থেকে নার্স বের হয়ে জানান, আঁখির অবস্থা আশঙ্কাজনক। এজাহারে বলা হয়, সেই নার্স কিছু কাগজপত্র এনে তাতে স্বাক্ষর করতে বলেন ইয়াকুবকে। তা না হলে তার স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা দেয়া হবে না বলে জানান। ইয়াকুব ওইসব কাগজে স্বাক্ষর করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে তার স্ত্রীকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ইয়াকুব বলছেন, ওই সময় তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার মাসুদ পারভেজকে মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানান। পরে তিনি স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল থেকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে মাহাবুবাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহযোগিতা না পেয়ে ইয়াকুব স্ত্রীকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১০ জুন বিকাল ৪টার দিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, এনআইসিইউতে তার নবজাতক সন্তান মারা গেছে। এসব বিষয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়