প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

তেলি রব বাহিনীর অত্যাচার : টাংকির ঘাটে জলদস্যু আতঙ্ক স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়নের বয়ারচর টাংকির ঘাট এলাকায় রামগতির তেলি রব জলদস্যু বাহিনীর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় স্থানীয়দের। দস্যু বাহিনীর সদস্যদের নির্মূল করে সেখানে নোয়াখালী পুলিশের নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, হাতিয়ার টাংকির ঘাট এলাকাটি দীর্ঘদিন থেকে জলদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। দীর্ঘ ৩০ বছর এ এলাকায় কোনো নির্বাচন না হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ছিল নির্যাতিত, অবেহলা আর বঞ্চনার শিকার। এলাকাটি নোয়াখালী-ল²ীপুর জেলার সীমান্তে হওয়ায় রামগতির আবদুর রব ওরফে তেলি রব একটি বাহিনী গঠন করে দীর্ঘদিন থেকে চুুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে আসছে। তেলি রব টাংকির ঘাট দখল করে জোরপূর্বক এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করে। টাংকির ঘাটে সরকারি বাসস্ট্যান্ড দখল করে অন্তত ৭০টি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার নামে নিরীহ মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তেলি রব। বিভিন্ন সময় অভিযানে তেলি রব বাহিনীর অনেক সদস্য পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের হাতে গ্রেপ্তারও হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হলে জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে স্বস্তি ফেরে স্থানীয়দের মাঝে। কিন্তু অত্যাচার কমে না তেলি রব বাহিনীর। তেলি রব রামগতির প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তার রাজত্ব কায়েম রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দস্যু তেলি রব বাহিনীর বিচার ও সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টাংকির ঘাটের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, তেলি রব ছিল একজন শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী। সে রামগতির বাসিন্দা। ২০১০ সালে তেলি রব টাংকির ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে জলদস্যু বাহিনী ও রামগতির সন্ত্রাসীদের দিয়ে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। সে সময়ে টাংকির ঘাটে টার্মিনালসহ দেড় কিলোমিটারের সরকারি রাস্তার ৫০ লাখ ইট তেলি রব বাহিনী লুট করে নেয়। ঘাটের সরকারি জায়গা দখল করে ৬২টি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কয়েক দফায় গ্রেপ্তারের পর কিছুটা আড়ালে চলে যায় তেলি রব ও তার বাহিনীর সদস্যরা। ২০২২ সালের ১৫ জুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টাংকির ঘাট এলাকার বাসিন্দারা হাতিয়ার হরনী ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচিত হন তাদের কাক্সিক্ষত জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গণসমাবেশ করেন। ওই সমাবেশে তিনি বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলে তেলি রব তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাতের আঁধারে নদী সাঁতরে টাংকির ঘাট ত্যাগ করে। এরপরই টাংকির ঘাটে ফিরে আাসে শান্তি।
সম্প্রতি তেলি রব আবারো টাংকির ঘাট দখলে নিতে নিজ বাহিনী এবং ল²ীপুরের প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। গত ১১ মে রাতে টাংকির ঘাটের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ল²ীপুরের দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ফোর্স নিয়ে অবস্থান নেয়। ওই সময় হাতিয়া থানার পুলিশ সদস্যদের সরে যেতে বলেন তারা। পরে স্থানীয় কয়েক হাজার বাসিন্দা ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে নোয়াখালী ও ল²ীপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ল²ীপুরের পুলিশ টাংকির ঘাটে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না এমন শর্তে জনতার ঘেরাও থেকে মুক্তি পান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জেলেরা বলেন, হঠাৎ করে তেলি রব ও তার বাহিনীর সদস্যরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা আমাদের নোয়াখালীর মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতি রাতে আমাদের এলাকায় চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নদীতে নামলে তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। এজন্য টাংকির ঘাটে নোয়াখালী পুলিশের একটি স্থায়ী ক্যাম্প প্রয়োজন।
হরনী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা বাহিনীমুক্ত থাকতে চাই। টাংকির ঘাট দখলে নিতে রামগতির পুলিশ জলদস্যু বাহিনী তেলি রবকে সহযোগিতা করছে। সে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই। এখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে নোয়াখালী পুলিশের পক্ষ থেকে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করতে হবে। হরনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন বলেন, বর্তমানে টাংকির ঘাট এলাকাটি নোয়াখালী জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো বাহিনী এখানে গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রয়োজন। এজন্য আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের কাছে আবেদন জানিয়েছি। নোয়াখালী পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এলাকাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়