কাগজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ইউক্রেনের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। যা ছিল তাদের এক হাজারতম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে নিজেদের হাজারতম ম্যাচে হোঁচট খেয়েছে তারা। ইউক্রেনের বিপক্ষে কোনোরকমে হার এড়িয়ে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
নিজেদের মাঠে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে আতিথেয়তা দিয়েছিল জার্মানি। তবে ম্যাচে তাদের চিরচেনা পারফরম্যান্সের দেখা মেলেনি। কাতার বিশ্বকাপেও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা। তবে বিশ্বকাপের পর প্রথম প্রীতি ম্যাচে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে হেরে যায় মুলার-ফুলক্রুগরা। ইউক্রেনের কাছেও একই ফল দেখার শঙ্কায় ছিল জার্মানি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পায় তারা। ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই প্রতিপক্ষের দেয়া উপহারের সুযোগটি নষ্ট করেন জার্মান ফরোয়ার্ড নিকলাস ফুলক্রুগ। এক ইউক্রেন ডিফেন্ডার নিজেদের বক্সে বল তুলে দেন ফুলক্রুগের পায়ে, তবে তিনি বাইরে মেরে দেন। এরপর ম্যাচের ৬ মিনিটের মাথায় স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন এদিন ফুলক্রুগ। বক্সের ভেতর থেকে মারিয়াস উলফের শট তার পায়ে লেগে জালে জড়ায়। এই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ম্যাচের ১৮ মিনিটে ভিক্টর শিয়ানকভকের গোলে সমতা ফেরে ইউক্রেন। সতীর্থের পাস ধরে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর ম্যাচের ২৩ মিনিটে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। বক্সের ভেতর ইউক্রেন মিডফিল্ডার মাদ্রিচের দুর্বল শট নিলেও, সেটি অ্যান্টোনিও রুডিগারের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। তার আত্মঘাতী গোলই লিড এনে সফরকারীদের। ১-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইউক্রেন।
বিরতি থেকে ফিরে গোল করতে মরিয়া হয় সফরাকীরা। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ব্যবধান ৩-১ করে ইউক্রেন। সতীর্থের ব্যাক-পাস বক্সে নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন মাথিয়াস গিন্টার। তার থেকে বল দখলে নিয়ে আর্তেম দভবিক পাস দেন পাশেই থাকা শিয়ানকভকে। গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে যাওয়ায় ফাঁকা জালে বল পাঠান ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে জার্মানদের হয়ে ব্যবধান কমান বদলি নামা কাই হাভার্টজ। রুডিগারের উঁচু করে বাড়ানো বল হেডে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত শটে জালে পাঠান তিনি। এরপর নির্ধারিত সময়ের ১ মিনিট আগে স্পট কিক থেকে দলকে সমতায় ফেরান জসুয়া কিমিখ। ফলে নিজেদের হাজারতম ম্যাচে অল্পের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায় জার্মানি।
হাজারতম ম্যাচ উপলক্ষে জার্মানদের জন্য বিশেষ জার্সি বানিয়েছিল ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। ফুটবল ফেডারেশনের লোগো সাধারণত জার্সির বুক বরাবর বাঁ পাশে থাকলেও এই বিশেষ জার্সিতে ছিল একদম মাঝখানে। লোগোর নিচে লেখা ছিল ‘১০০০’। যেন ম্যাচটা বুকে ধারণ করে খেলতে নেমেছিলেন কিমিখ-হাভার্টজরা। গোল-উৎসবের ম্যাচটি জিতলে না পারলেও চিরস্মরণীয় করে রেখেছে জার্মানি। খোদ জার্মানরাও ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে রুশ আগ্রাসন বন্ধে পুরো বিশ্বকে শান্তি ও সংহতির বার্তা দিয়েছে জার্মানরা। ১০০০তম ম্যাচে জিততে না পারলেও এর আগে অনেকগুলো মাইলফলকের ম্যাচ জিতেছে জার্মানি। তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টাও রাশিয়ার বিপক্ষে। ১৯১২ সালে সুইডেনের স্টোকহামে রুশদের ১৬-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল জার্মানরা। দলটি নিজেদের ১০০তম ম্যাচ খেলেছিল ১৯৩৪ সালে লুক্সেমবুর্গের বিপক্ষে। যেখানে তারা জয় পেয়েছিল ৯-১ ব্যবধানে। ১৯৫৮ সালে ২৫০তম ম্যাচে ও ১৯৮৪ সালে ৫০০তম ম্যাচে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা ও রোমানিয়াকে হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
এখন পর্যন্ত ১০০০ ম্যাচ খেলে ৫৭৮টিতে জিতেছে জার্মানি, হেরেছে ২১৪টিতে। আর ইউক্রেনের বিপক্ষে ম্যাচসহ ড্র করেছে ২০৮টিতে। এর আগে হাজারতম ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছে একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। সবচেয়ে বেশি ১০৪৩টি ম্যাচ খেলেছে আধুনিক ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত খেলেছে ১০৩৮ ম্যাচ। আর ব্রাজিল খেলেছে ১০২৩ বার। ইংল্যান্ড ১০০০তম ম্যাচ খেলেছিল ২০১৯ সালে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে মন্টেনিগ্রোর বিপক্ষে।
ম্যাচটা ইংলিশরা জিতেছিল ৭-০ ব্যবধানে। একই বছর আর্জেন্টিনাও এই মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচ খেলেছে। ইসরায়েলের তেল আবিবে উরুগুয়ের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ২-২ এ ড্র করেছিল লিওনেল স্কালোনির দল। ব্রাজিল ১০০০তম ম্যাচ খেলেছে ২০২১ সালে, রিও ডি জেনিরোয়। চিলির বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ম্যাচটি তারা জিতেছিল ১-০ গোলে।
জার্মানি ইউক্রেনেরে ম্যাচ শেষে জার্মান খেলোয়াড়দের ম্যাচ জার্সিগুলো এরই মধ্যে নিলামে তোলা হয়েছে। নিলাম চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত হাজারতম ম্যাচে জার্মানির দুই গোলদাতা কিমিখ ও নিকলাস ফুলক্রুগের জার্সি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে। কিমিখের জার্সি ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় ও ফুলক্রুগেরটা ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় কিনেছেন দুই ফুটবলপ্রেমী।