হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চাভিলাষী নীতি : ফিলিস্তিন নিয়ে চীনে আলোচনার আভাস!

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : ভূ-রাজনীতিতে দিন দিন চীনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রভাব বলয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যে এবার ইরান-সৌদি দীর্ঘদিনের দ্ব›দ্ব নিরসনে চীনা কূটনীতি ব্যাপক প্রশংসা পাওয়ার পর ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্ব›দ্ব নিরসনে নতুন আশার আলো দেখছে বিভিন্ন মহল। গতকাল ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চীন সফরে পৌঁছে পরিষ্কারভাবেই ইসরায়েলের সঙ্গে সংকট নিরসনের আহ্বান জানান।
বিশ্বমঞ্চে চীনের স্বীকৃতি : চীনের সংবাদ মাধ্যম সিজিটিএন জানিয়েছে, চীন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা সহজতর করতে পারে- এমন আশায় ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি চীনের রাজধানীতে পৌঁছেছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে এটি আব্বাসের পঞ্চম সরকারি সফর। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের এই সফরকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার মহান প্রচেষ্টার চেয়েও বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে বেইজিংয়ের স্বীকৃতিকে শক্তিশালী করার অন্যতম লক্ষ্য বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা।
ভাইয়ের চেয়েও বড় বন্ধু : ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সফরকালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন। দুজনে ফিলিস্তিনি অঙ্গনের সর্বশেষ উন্নয়নের পাশাপাশি পারস্পরিক উদ্বেগের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতামত বিনিময় করবেন। আব্বাস চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও দেখা করবেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত সপ্তাহে বলেছেন, প্রবীণ ফিলিস্তিনি নেতা চীনা জনগণের দীর্ঘদিনের একজন ভালো বন্ধু। চীন সবসময় দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ জাতীয় অধিকার পুনরুদ্ধারের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে সমর্থন করে আসছে।
এদিকে এ সপ্তাহে প্রকাশিত চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আব্বাস জাকি বলেছেন, চীন ও ফিলিস্তিনের জনগণ ভাই-ভাইয়ের চেয়েও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
চ্যালেঞ্জে মার্কিন প্রভাব : প্রতিদ্ব›দ্বী সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে মার্চ মাসে একটি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করার পর মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের মার্কিন প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করেছে চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত ডিসেম্বরে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিলেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি নেতা আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেন। তখনই ফিলিস্তিন সমস্যার একটি দ্রুত, ন্যায্য এবং টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। এর পরই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং সফর করেন যা ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম ইরানি কোনো নেতার চীন সফর।
আরেকটি নজিরের অপেক্ষায় চীন : মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ও ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশ সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে একটি সমঝোতাকে বেইজিংয়ের সা¤প্রতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর উপর ভিত্তি করেই তেহরানে ইরান ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই বছরের শেষের দিকে হতে পারে। গত বছর চীন-আরব রাষ্ট্র সম্মেলনের পর মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে চীন আরো বেশি সম্পর্কিত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের সফর নতুন ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি আলোচনাকে সহজতর করবে। তবে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে বলেছে যে, আব্বাসের হাই-প্রোফাইল সফরটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অবস্থানকে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস ছাড়া কূটনৈতিক বিষয়ে আর বেশি কিছু আশা করা যায় না।
২০১৪ সাল থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বশেষ সরাসরি শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে অসম্ভব করে দিয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি রাজনীতিও চরম ডানপন্থি অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
তবুও গত ডিসেম্বরে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত চীন এবং আরব দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে শি আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি দ্রুত, ন্যায্য এবং টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রæতি দেন। এপ্রিল মাসে বার্তাটি আবার দেয়া হয়, যখন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং তার ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষকে ফোনে বলেছিলেন যে, বেইজিং শান্তি আলোচনায় সহায়তা করতে ইচ্ছুক। যদিও ইসরায়েল অস্বীকার করে বলেছে, তারা আলোচনার আমন্ত্রণ পায়নি।
চীনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা : গত আরব সম্মেলনের আগে থেকেই ইসরায়েল চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ ভূ-রাজনৈতিক সব বিবেচনাকে এড়িয়ে গেছে। সত্যি কথা বলতে কী, গেøাবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কে ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট অব গিলফোর্ড গেজার সেন্টারের গবেষক টুভিয়া গেরিং বলেছেন বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী এই আয়োজন তাদের নতুন পররাষ্ট্রনীতির আভাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়