হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

বাংলাদেশিদের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৪ বছর : বেড়েছে শিশু মৃত্যু, জন্মহার, বিয়েবিচ্ছেদ, কমেছে মাতৃমৃত্যু

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের গড় আয়ু সামান্য বেড়েছে। অর্থাৎ ২০২২ সালে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৪ বছরে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। অন্যদিকে, শিশু মৃত্যুর হার গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ বেড়েছে। এ সময়ে প্রতি হাজারে ১ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশু মৃত্যু হার এক দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে ৫ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুহারও বেড়েছে। একই সঙ্গে ২০২২ সালে দেশে স্থ’ূল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। এ স্থ’ূল জন্মহার ২০২১ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৮ জন। বিয়েবিচ্ছেদের প্রবণতা বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে তালাকের হার বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের। তাদের মতে, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে আরো বেশি নজর দিতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভবনে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিএস। বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি-চলতি দায়িত্ব) পরিমল চন্দ্র বসুর সভাপতিতে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
গত বছর সারাদেশে ২ হাজার ১২টি ইউনিট, ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৫৪টি খানা এবং ১৩ লাখ ২ হাজার ৭৮৮ জনের উপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালে পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনার ভিত্তিতে দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৬১ লাখ এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪৫ লাখ।
সামান্য বাড়ল গড় আয়ু : ২০২১ সালে পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৬ বছর। গত বছর সামান্য বেড়েছে হয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে, নারীদের গড় আয়ু

বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ বছর। ২০২১ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ১ বছর। ২০২১ সালের জরিপে প্রথমবার বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ুর তথ্য দেয়া হয়েছিল।
২০২১ সালের জরিপের তথ্যানুসারে, দেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে যা ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। ২০১৯ সালে গড় প্রত্যাশিত আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। সেই হিসাবে ২০২২ সালে দেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ২০১৯ ও ২০২০ সালের চেয়ে কম।
শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে : জরিপে আরো দেখা গেছে, ২০২২ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে ৩১ জন শিশু মারা গেছে। এর আগের তিন বছরে মারা গিয়েছিল ২৮ জন শিশু। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৯ জন। প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে বেশি মারা গেছে পুরুষ শিশু। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে ৩৩ জন পুরুষ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ২৯ জন নারী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। ২০২২ সালে শহরে যেখানে প্রতি হাজারে ২৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জন শিশুর।
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, শিশু মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়া কাম্য নয়। কারণ আমরা এ হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী ভোরের কাগজকে বলেন, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, তবে তা আগের মতো দ্রুত গতিতে নয়। এর কারণ শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
তিনি বলেন, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কতটা নাজুক। স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির হার কোথাও কোথাও কমেছে। আবার কোথাও কোথাও ঋণাত্মক দেখা যাচ্ছে। আমাদের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে আরো মনোযোগ দিতে হবে।
বেড়েছে জন্মহার : ২০২২ সালে দেশে স্থূল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। এ স্থ’ূল জন্মহার ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই বছর দেশে স্থূল জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক ৮ জন। ২০২০ ও ২০১৯ সালে জন্মহার ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১ জন এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৩ জন।
জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, গত বছর জন্মহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কোনো গবেষণাও নেই। তবে আমার অনুমান, কোভিড মহামারির সময় দেশের সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে কাটিয়েছে। একই সময়ে বিদেশ থেকে বেশিহারে প্রবাসীরা দেশে এসেছে। এ দুই কারণে জন্মহার বাড়তে পারে।
দেশে তালাক দেয়ার প্রবণতা বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে প্রতি হাজারে তালাকের হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪ শতাংশ। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিলো শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। আর ২০২০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে শহরের তুলনায় গ্রামে তালাকের হার বেশি। শহরে ২০২২ সালে দেশে প্রতি হাজারে তালাকের হার ১টি। এ সময়ে গ্রামে তালাকের হার এক দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে এই হার ছিল গ্রামে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ এবং শহরে ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২২ সালে শিশু মৃত্যুহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে এসেছে।
তবে কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার। ২০২২ সালে জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর বিপরীতে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু হয়েছে ১৫৬ জনের। যা ২০২১ সালে ছিলো ১৬৮ জন।
প্রকল্প মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে- পরিকল্পনামন্ত্রী : প্রকল্প মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ঘুরছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে আমরা যাচ্ছি, প্রকল্প মানসিকতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমরা যা করছি, এটা নিয়মিত কাজ, প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ অপচয় হয়, তাই ঢালাওভাবে যেন প্রকল্প না নেয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমার ধারণা, প্রকল্পের মধ্যে অর্থের অপচয় হয়। ওখানে ভালো মানের গাড়ি পাওয়া যায়, ভালো মানের ভবনে অফিস করা যায়। যে কারণে কর্মকর্তারা সেখানে যেতে বেশি আগ্রহী হয়। এসভিআরএস কার্যক্রম সরকারের রাজস্ব বাজেটের অধীনে নিয়ে আসা উচিত। আমরা অর্থনৈতিক সংকটে নেই, চাপ আছি। সংকটে থাকলে তো কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও বোনাস দিতে পারতাম না। বর্তমানে কিছু সমস্যা চলছে সেটা দ্রুতই সমাধান হবে।
সব কাজে স্বাবলম্বী হতে হবে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সব কাজে আমাদের নির্ভরযোগ্য তথ্য হতে হবে, আগামীতে যে কাজ করবো, সময় ঠিক করে কাজ করব, সময়টা পুরোমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। নানা ধরনের প্রকল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে- এগুলো গুছিয়ে আনতে হবে এবং সময় বেঁধে দিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, দেশের মেধা যে হারে পাচার হচ্ছে, অর্থ পাচারের চেয়েও এটি আমাদের জন্য বেশি ভয়ংকর হবে। দেশ থেকে মেধা যদি সব চলে যায় তাহলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা কীভাবে করব? সবকিছু আলোচনায় এলেও মেধাপাচার আলোচনায় কম আসে। কিন্তু মেধার পাচার ঠেকাতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়