হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

পিএসজিতে ভাঙনের সুর!

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : খুব বেশিদিন হয়নি পিএসজি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা লিওনেল মেসি। এবার পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জন উঠেছে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে তার। এরপর চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নাকি ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। যে কারণে চুক্তি শেষের আগেই এই ফরাসি ফরোয়ার্ডকে ছেড়ে দিতে চায় পিএসজি খবর ফরাসি গণমাধ্যমের। তবে এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন এমবাপ্পে। অপরদিকে গুঞ্জন রয়েছে মেসিকে কিনতে না পেরে এখন নেইমারকে কেনার জন্য বড় অঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছে আল হিলাল। আর মেসির সঙ্গেই ক্লাবকে বিদায় বলেছেন সার্জিও রামোস। একে একে তারকাদের বিদায় বলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে পিএসজিতে।
কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এরপর থেকেই মেসির পেছনে লাগে ফ্রান্সের সমর্থকরা। এমনকি ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ঝামেলাতেও জড়ান মেসি। এরপর অনুমতি ছাড়াই যান সৌদি আরব সফরে। মেসির পাশাপাশি নেইমারের সঙ্গেও ঝামেলা হয় ক্লাব কর্তৃপক্ষের। যে কারণে আগে থেকেই ভাঙনের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ নিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফের ব্যর্থ হয় পিএসজি। টানা দ্বিতীয়বার শেষ ষোলতে বিদায়ঘণ্টা বাজে। বড় বড় তারকা নিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে ব্যর্থ হওয়ায় পিএসজি নতুন কৌশলে হাঁটতে চাইছে। পিএসজি তাদের ক্লাব সাজাতে চাইছে ফরাসি নতুন প্রতিভাবান ফুটবলারদের নিয়ে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ জানিয়েছে, এমবাপ্পে নাকি পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নন। চুক্তি নবায়ন না করলে এমবাপ্পেকেও আর রেখে দিতে চায় না পিএসজি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এমবাপ্পেকে বেশি দামে বিক্রি করে দিতে চায় তারা। পিএসজির সঙ্গে এমবাপ্পের সর্বশেষ চুক্তিটি ছিল দুই বছরের। সেখানে একটি শর্ত ছিল, এমবাপ্পে চাইলে চুক্তির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়াতে পারবেন। সেই শর্ত এমবাপ্পেকে সক্রিয় করতে হবে এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে। যদি এই ফরাসি ফরোয়ার্ড চুক্তি নবায়ন না করে তাহলে আগামী বছর ফ্রি এজেন্টে পরিণত হবেন তিনি। তখন যে কোনো দলেই যোগ দিতে পারবেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পিএসজি। তাই চুক্তি শেষের আগেই তাকে বিক্রি করে লাভবান হতে চাচ্ছে পিএসজি।
এর আগেও গুঞ্জন উঠেছিল পিএসজি ছাড়ছেন এমবাপ্পে। গত মৌসুমে তাকে দলে ভেড়াতে উঠেপড়ে লেগেছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু সেই সময় তাদের ডাকে সাড়া দেননি তিনি। আগে থেকেই এমবাপ্পের জন্য ঝুলে থাকা রিয়ালের প্রস্তাব এখন কাজে লাগাতে চায় পিএসজি। লেকিপের দেয়া তথ্যমতে, রিলিজ ক্লজ হিসেবে পিএসজির চাওয়া ১৫ কোটি ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৭৫৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি। ২০১৭ সালে ধারে মোনাকো থেকে ১৮ কোটি ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দেন এমবাপ্পে। প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী, পরের বছর সেখানে থিতু হন। দলটির হয়ে এ পর্যন্ত ২৬০ ম্যাচে ২১২ গোল করে তাদের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। লিগ ওয়ানে শেষ পাঁচ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন এমবাপ্পে। গত ছয় মৌসুমে পিএসজির হয়ে পেয়েছেন পাঁচবার শিরোপা জয়ের স্বাদ। ২০২২-২৩ মৌসুমে লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতেছে দলটি।
এর আগে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছিল মেসির দলবদল নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা। শেষ পর্যন্ত পিএসজি ছেড়ে সৌদি ক্লাব আল হিলালের ১০০ কোটি ডলারের বেশি পারিশ্রমিক প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেসি নিজেই। ইন্টার মায়ামিতে তার চুক্তি হবে তিন মৌসুমের। প্রথম দুই মৌসুম শেষে চাইলে চলে যেতে পারবেন, এই শর্ত রাখা হবে চুক্তিপত্রে। আর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি অবশ্যই দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। তবে মায়ামিতে তার বেতনের সঠিক অঙ্ক জানা যায়নি। স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, মৌসুমপ্রতি ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাওয়ার পাশাপাশি অন্য কিছু খাত থেকেও আয়ের সুযোগ পাবেন মেসি। মায়ামির চুক্তি যেহেতু এখনো সম্পন্ন হয়নি, তাই যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে কোন কোন খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থ আয় করবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
২০২১ সালের আগস্টে মেসিকে দলে নিয়েছিল পিএসজি। তবে মাত্র ২২ মাসের ব্যবধানেই পিএসজি অধ্যায়ের ইতি টানেন মেসি। ফ্রান্সকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই মেসির প্রতি ফরাসি সমর্থকদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই মেসিকে দুয়ো দিয়েছেন পিএসজি সমর্থকরা। মেসির বিদায়ী ম্যচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পিএসজির হয়ে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট রেইমসের বিপক্ষে মেসির অভিষেক হয়। ক্লাবটির জার্সিতে ৭৫ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৭৫ ম্যাচে ৩২ গোলের পাশাপাশি মেসি করেছেন ৩৫ অ্যাসিস্ট। বিদায় বেলায় দলকে লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতিয়েছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
অপরদিকে মেসিকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দিয়েও দলে ভেড়াতে পারেনি আল হিলাল। এবার তারা দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে মেসির দীর্ঘদিনের ক্লাব সতীর্থ নেইমারকে। ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ডকে তারা প্রায় ২৪০০ কোটি টাকায় নেয়ার পরিকল্পনা করছে। সিবিএস স্পোর্টসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার আল হিলালের সিনিয়র কর্মকর্তারা প্যারিসে গিয়েছিলেন। পিএসজিতে নেইমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্রাজিলিয়ান এই তারকা ফুটবলারের সৌদিতে যাওয়ার সম্ভাবনা কেমন- তা বুঝতে। আল হিলাল নেইমারকে বছরে ২০ কোটি ইউরো দিতে চায়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। নেইমার সঙ্গে পিএসজির নতুন চুক্তি আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। চুক্তির মেয়াদ আরো দুই বছর থাকলেও ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জন চলছে।
এছাড়া মেসির সঙ্গে পিএসজিকে বিদায় বলে দিয়েছেন সার্জিও রামোস। তার ক্লাব ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদায়ী বার্তা দিয়েছে পিএসজিও। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেন রামোস।
ক্লাবটির হয়ে দুই মৌসুমে সব মিলিয়ে ৫৭ ম্যাচ খেলেছেন এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার, জিতেছেন দুটি লিগ শিরোপাও। পিএসজি ছাড়লেও রামোসের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে, এখনো তা নিশ্চিত নয়। তবে এরই মধ্যে সৌদি আরবের ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন রামোস। পরিবারের সঙ্গে বসে সামনের দিনগুলোয় তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
পিএসজির সঙ্গে সম্পর্কচ্যুতি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এমবাপ্পে বলেন, ‘চুক্তি না বাড়ানোর কথা ক্লাবকে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই জানানো হয়েছে। এখন চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগে যা বলা হয়েছিল সেটাকে নিশ্চিত করা।’ একই সঙ্গে এই চিঠি সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এমবাপ্পে।
পিএসজি ছাড়ার পর এমবাপ্পের নতুন গন্তব্য কী হতে পারে তা আলোচনা করলে প্রথমেই আসবে রিয়াল মাদ্রিদের নাম। গত দুই গ্রীষ্মের দলবদলে এমবাপ্পেকে পেতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। কিন্তু দুবারই শেষ মুহূর্তে গিয়ে হতাশ হতে হয় রিয়াল শিবিরকে। বিশেষ করে গতবার এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়া রীতিমতো সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু পিএসজির নাছোড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয় রিয়ালকে। বিরক্ত হয়েই এমবাপ্পেকে নিজেদের চাওয়ার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় রিয়াল।
রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও এমবাপ্পেকে কেনার দৌড় থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন। এরপরও অনেকের ধারণা ছিল, এমবাপ্পেকে কেনার সুযোগ পেলে রিয়াল ঠিকই আবার মাঠে নামবে। এখন সেই সময় চলে এসেছে। পিএসজিও চায় এমবাপ্পেকে ছেড়ে দিতে। এমন পরিস্থিতিতে তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে এমবাপ্পেকে কিনতে রিয়াল ফের মঠে নামতে পারে।
করিম বেনজেমা চলে যাওয়ায় রিয়ালের ফরোয়ার্ড লাইনে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে হ্যারি কেইনকে নিয়ে রিয়ালের আগ্রহের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে এমবাপ্পের দলবদল সব সমীকরণ বদলে দিতে পারে। ফরাসি তারকা নিজেও রিয়ালে খেলতে চান।
শেষ পর্যন্ত রিয়াল এমবাপ্পের মধুর মিলন হয় কিনা, তা জানতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। গত অক্টোবরে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানায়, পিএসজিতে বিরক্ত এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়তে চান। সে সময় এমবাপ্পেকে পিএসজির শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেয়ার কথাও জানায় মার্কা। পিএসজি নাকি শর্ত দিয়েছিল, এমবাপ্পের নতুন ক্লাব অবশ্যই রিয়াল হতে পারবে না। তখন সামনে আসে লিভারপুলের নাম। এমবাপ্পেকে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও। লিভারপুল নাকি এমবাপ্পের মায়েরও খুব পছন্দের। তাই অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তাকে ‘অল রেড’ জার্সিতেও দেখে ফেলেছিল। তবে এমবাপ্পের ১৫ কোটি পাউন্ডের উচ্চ মূল্য পরিশোধ করে লিভারপুল এখন তাকে কিনতে রাজি হবে কিনা, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।
আরেকদিকে মায়ামিতে যোগ দেয়ার কারণ হিসেবে মেসি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে, ইন্টার মায়ামিতেই যোগ দেব। ইউরোপ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ফাইনাল করে ফেলেছি। এটা সত্যি যে, আমার কাছে ইউরোপের অন্য ক্লাব থেকেও প্রস্তাব ছিল কিন্তু আমি যে ইউরোপীয় দলটিতে যেতে চেয়েছিলাম, তা হলো বার্সেলোনা। বিশ্বকাপ জয়ের পর, বার্সায় ফিরতে না পারাই আমার মায়ামিতে যোগ দেয়ার কারণ।
কেননা আমার ফুটবলকে ভিন্ন পথে, ভিন্নভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং নিজের প্রতিদিনের জীবনকে উপভোগ করতে হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়