হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : স্থানীয় উন্নয়ন ও পরিবর্তনের স্বপ্নে কপাল খুলেছে খোকনের

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খুলনায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। বরিশালবাসী নগরপিতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন একই দলের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত)। দুজনেই নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বীকে হারিয়েছেন বড় ব্যবধানে। তাদের এই ভূমিধস বিজয়ের পেছনে কাজ করেছে কোন কোন উপাদান? স্থানীয় ভোটার ও বিশ্লেষকদের মতে, দুই নগরবাসীর উন্নয়নের আকাক্সক্ষাই এক্ষেত্রে কাজ করেছে প্রধান নিয়ামক হিসেবে। রয়েছে প্রার্থীদের নিজস্ব ভাবমূর্তিসহ অন্য ফ্যাক্টরও।
এসব নিয়ে খুলনা ও বরিশাল থেকে পাঠানো আমাদের পৃথক দুটি প্রতিবেদন-

খোন্দকার কাওছার হোসেন : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে- ভোটের মাঠের এমন হিসাব-নিকেশ পাল্টে দিয়ে নতুন নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। অন্য মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে বড় ব্যবধান রেখেই জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী। গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত ভোটে খোকন সেরনিয়াবাত তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিমকে ৫৩ হাজার ৯৮০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ভোট যুদ্ধে বিএনপি না থাকার পরও প্রতিদ্ব›দ্বী কোনো প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতো চমক সৃষ্টি করতে পারে- তেমন পূর্বাভাস ছিল কারো কারো। তবে সব সমীকরণ ছাপিয়ে ভোটের পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গেলেন খোকন সেরনিয়াবাত। তার এমন বিশাল বিজয়ের নেপথ্যে কাজ করেছে কোন কোন উপাদান- এমন আলোচনা এখন নগর জুড়ে।
নতুন মেয়রের ভাতিজা বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ, বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি পাশে ছিলেন না; এমন কি হাত পাখা প্রতীকের সঙ্গে ভাই-ভাতিজার গোপন সমঝোতার গুঞ্জন সর্বত্র। দলের একটি অংশ ভোটের মাঠে নেই, বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। তারপরও কি ম্যাজিক কাজ করেছে খোকনের জয়ের পেছনে- এ প্রশ্ন ওঠছে সর্বত্র।
বরিশালের সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত নগরবাসীর উন্নয়নের প্রত্যাশাই মেয়র পদে খোকনকে বেছে নেয়ার প্রধান কারণ। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। তাছাড়া বিদায়ী সাদিক আব্দুল্লার নানা ব্যর্থতা ও অপকর্ম রক্ষা পেতে খোকনের দিকে হেলেছেন ভোটাররা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলমের মতে, গত পাঁচ বছরে সাদিক আবদুল্লাহর ব্যর্থতা, উন্নয়ন বঞ্চনা ও নানা বিতর্কিত কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতে তার ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহর আধিপত্যের খড়গ থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষা ছিল আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী ও বরিশালের ভোটারদের। যার প্রতিফলন ঘটেছে ভোটের ফলাফলে।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডাক্তার মো. মিজানুর রহমানের মতে, ভোটে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় বিএনপির বড় অংশ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। যারা গিয়েছে তারা অন্য প্রার্থীকে যোগ্য মনে করেনি। নগরীতে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির সাংগঠনিক ভিত দুর্বল। প্রার্থী হিসেবে তাপস, বাচ্চু মহানগরীতে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন। তাদের ব্যক্তি ইমেজও নেই। রুপন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় এবং তার পিতা মেয়র থাকাকালীন উন্নয়ন কাজসহ রুপনকে নিয়ে এক ধরনের স্ক্যান্ডাল ছিল। পাশাপাশি নগরীতে তার গ্রহণযোগ্যতা তেমন নেই। ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত থাকলেও ভোটার নেই। ভোটের হিসাব বলছে, বিভিন্ন কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে গিয়ে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা হাতপাখা ও নৌকা বেছে নিয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বরিশালের সাবেক সভাপতি ও মহিলা পরিষদের জেলার সহসভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদার মতে, পূর্ববর্তী মেয়রের কাছ থেকে মানুষের আশা পূরণ হয়নি। তার কাছে গেলে মানুষ অপমান, অপদস্থ হতো। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাক্সক্ষা ছিল ভোটারদের। জাতীয় পার্টিসহ অপর প্রার্থীদের ভোট দিলে নগরীর উন্নয়ন হবে না- এমন ধারণা থেকেই ভোটাররা নগরের উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। তার মতে, চরমোনাইয়ের প্রার্থীর অদূরদর্শিতা ও ধর্মের অপব্যবহার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
অবশ্য উল্টো মতামতও আছে। নগরীর বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম হেমায়েতের মতে, এত বিশাল ব্যবধানের পেছনে কারচুপি থাকতে পারে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারি দলের কর্মীরা ঢুকে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে। কাউনিয়ার বাসিন্দা এডভোকেট বশির আহমেদ সবুজের মতে, বুথের মধ্যে ইভিএম মেশিনে ভোট দিলে কোন মার্কায় ভোট পড়েছে সে শব্দ আশপাশ থেকে শোনা গেছে। এ কারণে অনেকে ভয়ে অন্য প্রতীকে ভোট না দিয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য হয়েছে।
নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। তৃতীয় হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট পেয়েছেন। অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী হরিণ প্রতীকের মো. আলী হোসেন হাওলাদার ২ হাজার ৩৮১ ভোট এবং হাতি প্রতীকের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান পেয়েছেন ৫২৯ ভোট।
এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৭৭টি। ভোটের হার ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথের সব কটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়