সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

স্বরাষ্ট্রে যাবে এনআইডি সেবা জন্মের পরপর নাগরিক সনদ : সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনে মন্ত্রিসভার সায়

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন করার ক্ষমতা হারাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন নিবন্ধকের অফিস নামে একটি সংস্থা। এর ফলে নাগরিকদের পরিচয়ের একটিই নম্বর থাকবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জন্মের পরই দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ইসি কেবল ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের ভোটার তালিকা করবে। এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ছাড়াও সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আইন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দুটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, এই আইনের আওতায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তাদের এ সংক্রান্ত একটা অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবে এবং নিবন্ধকের মাধ্যমে কাজটি করা হবে। নিবন্ধকের অফিসের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে অফিস থাকে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যখন দাঁড়াবে তখন তারা বিধি দ্বারা ঠিক করে নেবে। যদি তারা মনে করে প্রত্যেক জায়গায় অফিস দরকার, তা তারা করবে। এখন বাংলাদেশে এক

ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের নম্বর, পাসপোর্টের নম্বর সব আলাদা। মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য সব নাগরিকের একটি ইউনিক নম্বর থাকা দরকার। এতদিন হয়ত বিভিন্ন পে নম্বরগুলো দিয়েছি। যেটা নিয়ে অনেক সময় কনফিউশন তৈরি করছে। এখন প্রত্যেক নাগরিকের একটি নম্বর থাকবে, যেটি তার আইডেন্টিটি হবে। সেটার ভিত্তিতে তার সমগ্র জীবনে, আমাদের যেমন সিআরপিসি তথ্য আছে সেগুলো আপডেট করবে। এটা আস্তে আস্তে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করব। যাদের এখনো জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি হয়নি তাদের বিষয়টি কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা এখন থেকে নতুন নম্বর নেবেন। এখন থেকে সব জায়গায় এই নম্বরটি ব্যবহার হবে। যখন তিনি এই নম্বরটি পেয়ে যাবেন, তখন আর কোনো নম্বর লাগবে না। নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু ভোটার তালিকা তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ। বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে তখন ভোটার তালিকা তারা প্রণয়ন করবেন। এখানে যে এনআইডি থাকবে সেই নম্বর তারা ব্যবহার করতে পারবে। যে সার্ভার আছে তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সেটি আলাদা করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। ডাটাবেজ স্থানান্তর কীভাবে হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী এনআইডি সংক্রান্ত তথ্যাদি ওখান থেকে নিয়ে আমাদের যে নতুন নিবন্ধক থাকবেন, তার দপ্তরে স্থানান্তরিত হবে।
নির্বাচনের আগেই কী সংসদে আইনটি পাস করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি বলতে পারব না। প্রক্রিয়া শেষ করে সংসদে নিয়ে যাওয়া হবে। সংসদ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সংসদে আইনটি পাস হলেই কি কার্যকর হবে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হলেই কার্যকর হবে না। আইনে একটি বিধান রাখা হয়েছে- সরকার নির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ আইনের গেজেট প্রকাশ হলেই হবে না, সরকার যে দিন থেকে কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করবে সে দিন থেকে কার্যকর হবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোগান্তি দূর করার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এনআইডির ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন হবে, সেগুলো সহজ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে জনবল লাগবে তারা তা নেবেন। সেভাবে অর্গানোগ্রাম তৈরি করবেন। নির্বাচন কমিশন থেকে জনবল স্থানান্তর করা হবে কিনা, কারণ নতুন লোকবল তো বিষয়টি বুঝবেন না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনি কেন ধারণা করছেন তারা দক্ষ হবে না? অভিজ্ঞ লোকজনই তো নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে আমাদের লোক তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞ লোক তো অবশ্যই লাগবে, তাদেরই নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) তৈরি করা হয়। তখন থেকে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও পায়। পরে স্মার্ট এনআইডিও ইসির ব্যবস্থাপনায়ই হয়। এখন নানা ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের এনআইডি প্রয়োজন হয়। ২০২১ সলে সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তখনকার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এর বিরোধিতা করে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি সেভাবে বিরোধিতা না করলেও ইসি কর্মকর্তাদের আপত্তি রয়ে যায়। এর মধ্যেই ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। গতকাল সোমবার তা চূড়ান্ত অনুমোদন পেল।
বদলে যাচ্ছে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম : শরীয়তপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। এ জন্য দুটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে শরীয়তপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুর’। আর ঠাকুরগাঁওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হবে ‘ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়’। শরীয়তপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রস্তাবিত নাম ছিল ‘শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই প্রস্তাব পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২২-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬টিতে। এছাড়া এখন পর্যন্ত মোট ১১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়