সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি : অবশেষে আইনের জালে ‘মূলহোতা’ বাচ্চু

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অবশেষে মামলা দায়েরের প্রায় আট বছর পর বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৯ মামলায় ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই সঙ্গে সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেলেঙ্কারির ‘মূলহোতা’ ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকেও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়। চার্জশিটে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
চার্জশিটের অনুমোদনের পর দুদক সচিব সাংবাদিকদের বলেন, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীসহ এজাহারনামীয় এবং তদন্তে আগত আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তারা অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করে ভুয়া মর্টগেজ, মর্টগেজের

অতিমূল্যায়ন এবং মর্টগেজ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
দুদক সচিব বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুদকের পাঁচজন তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘটনায় মোট ৫৯টি মামলা দায়ের করেছিলেন। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলাগুলোর তদন্ত শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই শেষে সব মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয় কমিশন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, কোনো চাপে নয়, স্বাধীনভাবে তদন্ত শেষে কর্মকর্তারা আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করেছেন। ৫৯ মামলার পাঁচ তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন- দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. মোনায়েম হোসেন, মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান এবং মোহাম্মদ সিরাজুল হক।
২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠে। এরপর ঘটনাটির অনুসন্ধানে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন। অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ২৬৫ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয় বলে এসব মামলায় অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত আরো চারটি মামলা করে দুদক।
মামলায় ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল, ‘ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’ একপর্যায়ে বাচ্চুকে মামলায় আসামি করতে উচ্চ আদালত দুদককে সরাসরি নির্দেশ দেয়। অবশেষে চার্জশিটে বাচ্চুকে অন্তর্ভুক্ত করল দুদক।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১২ সালে তার নিয়োগ পুনরায় নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়