সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : বরিশালে বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নির্বাচন সুষ্ঠু > খোকন সেরনিয়াবাত ৮৭,৭৫৩ ভোট, মুহাম্মদ ফয়জুল করিম ৩৪,৩৪৫ ভোট

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খুলনায় শান্তিপূর্ণ ও বরিশালে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন। খুলনায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা মার্কা) প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। বরিশালে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবত)। ভোটের পরিবেশ ও সবশেষ ফলাফল নিয়ে দুই সিটি থেকে আমাদের পৃথক দুটি প্রতিবেদন।

খোন্দকার কাওছার হোসেন ও এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৭৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী (হাতপাখা) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। গতকাল সোমবার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এই ভোট সম্পন্ন হয়। মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা ছিলেন- জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) ইকবাল হোসেন তাপস, জাকের পার্টির (গোলাপ ফুল) মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী (টেবিল ঘড়ি) কামরুল আহসান রুপন, স্বতন্ত্র প্রার্থী (হাতি) মো. আসাদুজ্জামান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (হরিণ) আলী হোসেন হাওলাদার।
এদিকে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী আন্দোলন। এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম আগামী ২৫ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি ভোট বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের দলীয় প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বরিশালে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৬টি, ভোট কক্ষ ৮৯৪টি। প্রতিটি ভোট কক্ষে একটি করে এবং প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে দুটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মোট এক হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা ছিল।
সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়। সুষ্ঠুভাবে ভোট চললেও দুপুরের দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এতে তিনিসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এ ঘটনায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েক শ নেতাকর্মী শহরের দুটি স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলা-মারধর-হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটারদের বাধা দেয়া, জোরপূর্বক ভোট দেয়ারও অভিযোগ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বরিশালে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। সকাল সোয়া ৮টায় শহরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিম। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ভোট দিয়েছেন গোরস্থান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রুপন কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী হোসেন হাওলাদার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইসকান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান নগরীর সদর রোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

খুশি নতুন ভোটাররা : ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আল আমিন। ভোটার হওয়ার পর এবারই প্রথম ভোট দিয়েছেন। ইভিএমে ভোট দিয়ে খুশি তিনি। বেলা ১১টার দিকে নগরীর বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন নতুন এই ভোটার। শুধু আল আমিন নয়, ইভিএমে ভোট দিয়ে খুশি নতুন ভোটাররা। তবে ভোটে ধীরগতির কারণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা : হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের অভিযোগ- তার ওপর ভোটকেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র পরিদর্শনকালে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছেন বলে জানান হাতপাখার মেয়র প্রার্থী। দুপুরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৭ নম্বর কেন্দ্রে সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে এ ঘটনা ঘটে। হাতপাখার প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৭ নম্বর কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখি নৌকার সমর্থকরা ভোট কক্ষে ঢুকে ভোটারদের বলছেন- নৌকায় ভোট দিলে দাও, না হলে চলে যাও। আমি প্রিজাইডিং অফিসারকে এসব বিষয় বলছিলাম। তখন নৌকার কর্মীরা এসে আমাকে ও আমার সঙ্গে যারা ছিলেন- তাদের ওপর হামলা চালিয়ে জখম করে। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, যত হামলা হোক- ভোটের শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনে আছি। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের অভিযোগ : নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রধান এজেন্ট আফজালুল করিম। দুপুর ২টার দিকে বরিশাল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কাছে তিনি এ অভিযোগ দেন। অভিযোগে ৬টি ওয়ার্ডে হাতপাখার লোকজনের দ্বারা নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের মারধর, ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া, ভোট দিতে আসা নারীদের ধর্মীয়ভাবে বুঝিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে নিষেধ করা, কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগপত্রে জানানো হয়, ২২নং ওয়ার্ডের ২৭নং কেন্দ্র, ৬নং ওয়ার্ডের ২৯নং কেন্দ্র, ২৪নং ওয়ার্ডের ৯৫নং কেন্দ্র, ৪নং ওয়ার্ডের ১৮নং কেন্দ্র, ৩নং ওয়ার্ডের ১২নং কেন্দ্র এবং ৯নং ওয়ার্ডের ৪২নং কেন্দ্রে হাতপাখার কর্মী-সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা করে।
দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হাতাহাতি : নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গোরস্থান রোড মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভেতরেই ভোট দিতে আসা লাটিম মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী শাহরিয়ার রাজিব এবং টিফিন বক্স মার্কার প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলেনি তাপসের : গোরস্থান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ভোট দিতে গেলে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলেনি, তখন প্রিজাইডিং অফিসার সহায়তা করায় ভোট দিতে পেরেছেন তিনি। তাপস এ কথা স্বীকার করেছেন।
সাদিক ভোট দিতে আসেননি : ভোট দিতে বরিশালে আসেনি বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ নিয়ে ভোটের মাঠে নানা আলোচনা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়