শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

সুনামগঞ্জে সুদের কারবার : দেউলিয়া হয়ে অনেকেই করছেন আত্মহত্যা

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : হাওড় বেষ্টিত ভাটি অঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে সুদের কারবারিদের বিশাল সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের ফাঁদ সুদের জালে আটকা পড়ে নিঃস্ব হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক অসহায় মানুষ। সুদখোরদের অমানবিক অত্যাচার নীরবে সহ্য করছেন অনেকে। কেউবা হারাচ্ছেন ভিটেমাটি। এমনকি, সুদের টাকা পরিশোধ করেও রেহাই না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
সম্প্রতি সুদ কারবারিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহননের দুটি ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জে। এসব ঘটনায় জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। সুদখোরদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষজন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে ছোট বড় সুদ কারবারি। তারা স্ট্যাম্প ও সাদা চেকে স্বাক্ষর রেখে লেনদেন করে। পরবর্তী সময়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেয়। কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে স্ট্যাম্প ও চেকের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে সুদ আদায় করে। তবে কৌশলে সুদখোররা স্ট্যাম্পের লেখায় সুদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে ভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে। সুদ গ্রহীতারা সুদে-আসলে টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাসাবাড়ি পর্যন্ত দলিল করে দিয়েছেন সুদখোরদের নামে। গ্রাম এলাকার অনেক সুদ কারবারিদের হাতে শিক্ষকরাও জিম্মি। বেতনের চেক দিয়ে আগাম সুদ দিয়ে টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। এভাবে সুদখোররা সুদের জালের বিস্তার করে নিঃস্ব করছে অনেক পরিবারকে।
সম্প্রতি সুদখোরদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুদখোরদের অত্যাচারের করুণ বর্ণনা দিয়েছেন। গত ১ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী। তিনি লিখেন, ‘আমার পরিণতির জন্য দায়ী হবিবুর রহমান হবু এবং জসিম উদ্দিন’। হবিবুর রহমান হলো ১ নম্বর সুদখোর। তার কাছ থেকে আমি টাকা এনেছিলাম, তা সুদ করে দেই সাবেক মেয়র মোশারফ মিয়াকে নিয়ে। ওদের টাকা দিতে গিয়ে সব হারিয়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছি। যাদের কাছে আমি এই লেখা পাঠাচ্ছি আপনাদের কাছে মিনতি, আপনারা জুলুমবাজদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এরপর পুলিশ গত ৩ জুন রাত ১০টায় সৌম্য চৌধুরীর মরদেহ কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের ফুলবাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি নিজ ফেসবুক একাউন্টে ‘হবিবুর একজন নিচু সুদখোর’। সুদের টাকায় সে দিরাইয়ে তিনটি বাড়ি করেছে। এই উপজেলার সজল দাস, অসিত দেবনাথ, চিনি ঠাকুর, পুতুল দাসসহ আরো কয়েকজন সুদখোরের নামও উল্লেখ করেন তিনি। তাকে নিঃস্ব করার পরও সুদের টাকার জন্য মামলা দিয়ে হয়রানির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর দিন শনিবার রাত ১০টায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এভাবে গত বছর আগস্ট মাসে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়নের পাতারি গ্রামের যুবক ফয়সাল আহমেদ সৌরভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সুদ কারবারিদের নাম উল্লেখ করে তাদের অত্যাচারে বর্ণনা দিয়েছেন। পরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এছাড়াও দুই বছর আগে সুনামগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরি ব্যবসায়ী দ্বীপায়ন সরকার সুদখোরদের কাছ থেকে সুদ এনে মূল টাকার দুই গুণ বেশি সুদ পরিশোধ করার পরও রেহাই পায়নি। সুদ কারবারিদের মানসিক অত্যাচার সইতে না পেরে তিনি ঢাকা পালিয়ে যান। সেখানে দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, নীরবে অনেকে সুদখোরদের মানসিক যন্ত্রণা সইছে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে বাধ্য হয়ে বাড়িঘর লিখে দিয়ে নিঃস্ব হতে হচ্ছে অনেককে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে সুনামগঞ্জ বিডি হলে আয়কর মেলা হয়েছিল। সারা জেলার সুদখোরদের তালিকা করে তাদেরকে আয়করের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল। সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিলেও সুদের কারবারিদের তালিকা আর করা হয়নি এবং তাদের করের আওতায়ও নেয়া হয়নি।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, গ্রাম এলাকার অনেক গরিব শিক্ষক বেতনের চেক আগাম সুদখোরের কাছে জমা দিয়ে সুদে টাকা নিয়ে সংসারের জরুরি কাজে ব্যয় করেন। এভাবে অনেক শিক্ষক নিঃস্ব হচ্ছেন। শুধু শিক্ষকই নন, সাধারণ মানুষও প্রভাবশালী সুদখোরদের কাছ থেকে সুদ নিয়ে বাসা-বাড়ি জায়গা-জমি হারাচ্ছে। দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, সুদখোররা সুদের নেশায় মানবিক জ্ঞান হারিয়েছে। প্রতিনিয়ত জুলুম করছে। মানুষের ঘরবাড়ি লিখে নিচ্ছে, মামলা দিচ্ছে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কটের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
দিরাই থানার ওসি কাজী মোক্তাদীর হোসেন বলেন, সৌম্য চৌধুরী চেক ডিজঅনার মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। মৌলভীবাজারে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সুদখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়