তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

রোহিঙ্গা সমাবেশে ৪ দফা দাবি : প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কি ঝুলে থাকবে?

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ ৪ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো গত বৃহস্পতিবার। সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা চারটি দাবি উত্থাপন করেন। এগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিকত্ব দিতে হবে, রাখাইন রাজ্যে ফেলে আসা জন্মভিটাতে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে, স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে ও রোহিঙ্গাদের লুণ্ঠিত সম্পদ, জায়গা-জমি ফেরত দিতে হবে। দাবিগুলো রোহিঙ্গাদের পাওয়ার অধিকার রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বারবার আলোচনা হলেও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলেছেন বহুবার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য সফরে পরিষ্কার জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুতরাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। কিন্তু এ পর্যন্ত গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। চীনের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্য থেকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গিয়েছিল। অবশিষ্ট ৪২৯ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল গত মার্চ মাসে টেকনাফে এসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার পাশাপাশি তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া আরো ৫১ জন শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের ২০ জনের প্রতিনিধি দলকে গত ৫ মে রাখাইনের পরিস্থিতি দেখানো হয়। গত ২৫ মে মিয়ানমারের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরে এসে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে ২৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানের সঙ্গে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক করে। বৈঠক-আলোচনার মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি ঝুলে আছে। কার্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। সুতরাং এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ার উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়