তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

একজন শিক্ষকের প্রতিকৃতি

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৯০ সালে বয়স যখন ৮১ বছর অধ্যক্ষ নুরুল করিম তার স্মৃতিকথা লিখতে বসেন। তিনি কেমন ছিলেন জানার আগে তিনি কাদের সান্নিধ্যে ছিলেন, কাদের সহকর্মী ছিলেন, তার ছাত্ররা কতটা কীর্তিমান জানতে পারাটা তাকে এমনিতে অনেকটা চিনিয়ে দেবে।
তিনি যাদের সঙ্গ ও স্নেহ পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার এ এফ রহমান, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, রায় বাহাদুর অম্বিকাচরণ রক্ষিত, স্যার যদুনাথ সরকার, কালিকারঞ্জন কানুনগো, ভাইস চ্যান্সেলর মাহমুদ হোসাইন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ডক্টর হরিদাস ভট্টাচার্য, অধ্যক্ষ আবু হেনা, ডক্টর ইশতিয়াক হোসেন কোরেশী, ডক্টর ফিদা আলী খান, ইতরাত হোসেন জুবেরী, ডক্টর ইনামুল হক, ডক্টর কুদরত-ই খুদা, মওলানা আক্রম খাঁ প্রমুখ। তার যারা সহকর্মী ছিলেন তারাও সেকালের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব।
মুহাম্মদ নুরুল করিম, জন্ম ২৮ নভেম্বর ১৯০৯; ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ তিনি পরলোকগমন করেন। ১৯২৮ সালে ফেনী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ফেনী কলেজে ভর্তি হলেন। তার কলেজ শিক্ষকদের একজন সত্যেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ অনার্স এবং এমএতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী। প্রথম স্থান অধিকারের বাসনা তাকেও কখনো ছেড়ে যায়নি। ইতিহাসের অধ্যাপক প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ইতিহাসের এমএতে জহুরুল ইসলামের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রফুল্ল লাহিড়ী অধ্যাপনা ছেড়ে এক হাজার টাকা বেতনে কলকাতার ইংরেজি দৈনিক অমৃতবাজারে যোগ দেন। রায় বাহাদুর অম্বিকাচরণ রক্ষিত ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক। আইএতে বৃত্তি পেয়ে অনার্স পড়তে আসবেন, কিন্তু ঢাকায় তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। ফেনী কলেজে তখন একমাত্র ইতিহাসেই অনার্স ছিল। অম্বিকাচরণ প্রিয় ছাত্রটিকে ধরে রাখলেন এবং তার পাঠাগার অবারিত করে দিলেন তার জন্য- যখন যে বই দরকার নিয়ে যাও। তিনি লিখেছেন, ‘তখন ফেনী কলেজ লাইব্রেরিতে যেসব বই পেয়েছিলাম পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব বই দেখতে পাইনি।’ ফেনী কলেজের বিএ অনার্স মানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সার্টিফিকেটধারী।
১৯৩২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএতে ভর্তি হলেন। ইতিহাস পড়াতেন রমেশচন্দ্র মজুমদার, কালিকারঞ্জন কানুনগো, সুশোভন ভট্টাচার্য, মাহমুদ হোসেন, বিভাগের প্রধান কালিকারঞ্জন কানুনগো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকার জন্য লেখার সময় তাকে উদারভাবে সাহায্য করতেন আরবি-ফার্সি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ফিদা আলী খান।
নুরুল করিম এমএতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করলেন। আবেগাক্রান্ত ড. শহীদুল্লাহ তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আজ একজন খাঁটি মুসলমান ছেলে প্রথম শ্রেণি পেয়েছে বলে আমার দ্বিগুণ আনন্দ।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নুরুল করিম ইতিহাসের গবেষণা বৃত্তি পেলেন। প্রথম শ্রেণির প্রথম স্থান অধিকারীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই হওয়ার কথা। ১৯৩৬ সালে তিনিও যোগ দিলেন।
ছাত্রাবস্থায় থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইস্ট হাউসে। একবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ৩২ দিন শয্যাশায়ী ছিলেন। ‘এ দীর্ঘ সময় মুসলিম হলের ছাত্ররা তাদের মধ্য থেকে ১২৬ জনের একটি লিস্ট করে পালাক্রমে আমার সেবা-শুশ্রƒষা করেছিল।’ তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীকালের অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ওবায়দুল হক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য আলিম দাদ খান, ফেনী কলেজের অধ্যক্ষ শফিউদ্দীন আহমদ।
তিনি শিক্ষক হওয়ার পর অধ্যাপক কালিকারঞ্জন কানুনগো তাকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসে নতুন শিক্ষককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বললেন, আমার চেয়েও ভালো পড়াবেন।
মুসলিম হলের প্রভোস্ট ডক্টর মাহমুদ হাসান (পরে ভাইস চ্যান্সেলর) দুই বছরের জন্য বিলেত চলে যাওয়ায় হলের হাউস টিউটর ডক্টর শহীদুল্লাহ তার স্থলাভিষিক্ত হলেন আর হাউস টিউটরের শূন্যপদটি তারই মনোনয়নে ভাইস চ্যান্সেলর রমেশচন্দ্র মজুমদারের আদেশে নুরুল করিমকেই গ্রহণ করতে হলো। ছাত্র থাকাকালে মুসলিম হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামদ-নাথ-গজল পরিবেশন করতেন তিনি। খেলাধুলাতেও চৌকস। হলের নাটকের সুখ্যাতি ছিল। ডক্টর শহীদুল্লাহর বিরোধিতার পরও প্রভোস্ট মাহমুদ হাসানের অনুমতি নিয়ে ইরানের রানী নাটক মঞ্চস্থ করালেন হল ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীকালে জেলা জজ এম ইউসুফ। নায়িকা মহুয়ায় অভিনয় করেছেন জোয়াদুল করিম, একজন হিন্দু সংগীত শিল্পী ৩০ টাকার বিনিময়ে মহুয়া চরিত্রের গান জোয়াদুল করিমকে শিখিয়েছিলেন। তিনিও পরে জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন।
মুসলিম হলের ছাত্রদের মেসচার্জ ছিল আট টাকা, এতে অন্তর্ভুক্ত একটি বড় নৈশভোজ এবং এক বেলার উন্নতমানের খাওয়া। নুরুল করিম লিখেছেন, তখন মুসলিম হলের ডালের সুনাম ছিল, ঘন ও সুস্বাদু রান্না ডালেই ভাত খাওয়া চলত। টাকায় সাত-আট সের দুধ মিলত। সে সময় যাতায়াতের বাহন ঘোড়ার গাড়ি, ভাড়া সস্তা। ফেনী থেকে ঢাকা আসতে প্রথমে ট্রেনে চাঁদপুর, তারপর স্টিমারে নারায়ণগঞ্জ, পুনরায় ট্রেনে ঢাকার ফুলবাড়িয়া; বারো-তেরো ঘণ্টার ব্যাপার। ১৯৩৬ সালে তিনি ৩২ টাকা ভরি গিনি স্বর্ণ কিনেছেন।
নুরুল করিম মনে করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি মোহনীয় নয়, সরকারি কলেজের চাকরি মর্যাদার, তাতে স্থিতিশীলতা আছে, পেনশন আছে, উন্নতির পথ খোলা। ডক্টর শহীদুল্লাহর মতো পণ্ডিতকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবন লেকচারার হয়ে থাকতে হয়েছে। তখনকার নামকরা ৪টি সরকারি কলেজ- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট। পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেজন্য ঢাকা কলেজ কেবল ইন্টারমিডিয়েট, বাকি তিনটি ডিগ্রি কলেজ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে প্রথম শ্রেণির চাকরি চট্টগ্রাম কলেজে যোগ দিলেন। তার সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহকর্মীরা হতবাক হন।
চট্টগ্রাম কলেজের প্রিন্সিপাল রায় বাহাদুর পদ্মীনি ভূষণ রুদ্র ইংরেজির শিক্ষক, তিনি প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের অন্যতম প্রিয় একজন ভক্ত, মেধাবী ও দরিদ্র মুসলমান ছাত্রদের প্রতি একটু বেশি রকম সহানুভূতিশীল। নিজের বিষয় পড়ানোর বাইরে নুরুল করিম কলেজের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির দায়িত্ব তিনি নিলেন। চট্টগ্রাম কলেজের তখনকার সেরা ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন শফিউল আজম (সিএসপি ১৯৪৯), এ কে এম আহসান (সিএসপি ১৯৪৯), ফেরদৌস খান (ডিপিআই) এবং এম আজিজুল হক (পরে কৃষিমন্ত্রী)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত আবু হেনা ছিলেন ভাইস প্রিন্সিপাল। চট্টগ্রাম কলেজ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি :
১৯৪২ সালের সম্ভবত ১৪ মে প্রথম জাপানি বোমা চট্টগ্রাম শহরে বর্ষিত হয়। কিছুকাল পরে জনশিক্ষা পরিচালক ডক্টর জেনকিন্স (পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর) চট্টগ্রাম কলেজ স্থানান্তর করে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। তখন রায় বাহাদুরের ছুটির প্রেক্ষিতে ইংরেজি বিভাগের প্রধান খান সাহেব আব্দুর রব চৌধুরী কলেজের চার্জে ছিলেন। তিনি আমাকে ও অর্থনীতির অধ্যাপক হাবীবুর রহমান সাহেবকে ডেকে এ বিষয়ে পরামর্শ করলেন। আমাদের উভয়ের ছাত্রসমাজ এবং স্থানীয় অভিভাবকদের ওপর কিছু প্রভাব ছিল বলে আমরা রাতারাতি ব্যাক ডেট দিয়ে বহু ছাত্র ভর্তি দেখিয়ে কলেজের ছাত্রসংখ্যা বেশি বলে প্রমাণ করিয়ে দিতে সমর্থ হলাম। ডক্টর জেনকিন্স মনে করেছিলেন শত্রæর আক্রমণের দরুন কলেজের ছাত্রসংখ্যা হয়তো কমই হবে, কিন্তু পরে কাগজে-কলমে তাদের সংখ্যা বেশি দেখে কলেজ স্থানান্তরের প্রশ্ন নাকচ করে দেন। তিনি এটাও লিখেছেন, বোমার আতঙ্কে কলেজ চন্দনপুরা খান বাহাদুর ফজলুল কাদির সাহেবের বাড়ির প্রাঙ্গণে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে উঠানো কিছু টিনশেডে কলেজের ক্লাস চলতে থাকে।
বেঙ্গল এডুকেশন সার্ভিসের সদস্য হিসেবে ১৯৪৭-এর জুলাই মাসে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বদলি হলেন, কলেজের অধ্যক্ষ বিখ্যাত ইতরাত হোসেন জুবেরী (পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর)। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর বদলি হলেন রাজশাহী কলেজে, সেখানে অধ্যক্ষ ডক্টর মমতাজউদ্দিন আহমদ। ১৯৫০-এর জানুয়ারিতে এলেন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ তখন সিদ্দিকবাজার এলাকায় কয়েকটি ভাড়া বাড়ি এবং কিছু টিনশেডেই সীমাবদ্ধ। ১৩ বছর ইতিহাসের প্রধান অধ্যাপক এবং শেষদিকে ভাইস প্রিন্সিপাল হন। ১৯৫৭-১৯৬৩ তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের তত্ত্বাবধায়ক, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত তিনি ইকবাল হলের সুপার ছিলেন। ইকবাল হলই এখনকার সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। বর্তমান অবস্থানে নির্মিত ১৭টি টিনশেডে এবং জয়নাগ রোডে একটি ভাড়া করা ভবন নিয়ে তখনকার ইকবাল হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের নিবাস ছিল এই হল। আর তত্ত্বাবধানে থাকা ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, বদরুল হায়দার চৌধুরী ও কাজী বাহাউদ্দিন। প্রেসিডেন্ট এরশাদও এ হলের ১২নং ব্লকের এক রুমে প্রায় দুই বছর অবস্থান করেছেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত হল পরিচালনার ভার সরকারের হাতে ছিল। ১৯৫৩-এর শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ভার গ্রহণ করে এবং নুরুল করিম নবনিযুক্ত প্রভোস্ট ডক্টর মফিজউদ্দিনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তিনি ঢাকা কলেজের মেইন হোস্টেলের সুপার ছিলেন। হোস্টেল মৌলভীবাজার এলাকার বেশ ক’টি ভাড়া বাড়ি নিয়ে, আর সুপার থাকতেন বেচারার দেউরীর ফ্রি কোয়ার্টারে। ১৯৫৮ সালে সে হোস্টেল ধানমন্ডি এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। তারও আগে ১৯৫৫ সালে নুরুল করিম এবং দর্শনের অধ্যাপক সায়ীদুর রহমান হোস্টেলের জায়গা দখল করেন- তখন এলাকাটি ধানের ক্ষেত, বর্ষায় ডুবে যেত। নতুন হোস্টেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন শিল্পী আব্বাস উদ্দীন ও কবি গোলাম মোস্তফা।
ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কীর্তিমান ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন : এম মোকাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, কাজী মঞ্জুরে মওলা, আমিনুল হক চৌধুরী, ড. এ আর খান, ড. মিজানুর রহমান শেলী, ড. রেজাউর রহমান, মমতাজুর রহমান তরফদার প্রমুখ।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে ধানমন্ডিতে প্রতি বিঘা জমির দাম ১ হাজার থেকে ১২শ টাকার ঊর্ধ্বে ছিল না। ১৯৫৪ সালে জমির দাম বেড়ে যেতে থাকে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার পরও তিনি ২৫৫নং এলিফ্যান্ট রোডে ১২০০ বর্গফুটের একটি একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন, তার মোট খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা।
ঢাকা কলেজ জীবনে যাদের সঙ্গে সৌহার্দের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে ছিলেন ড. মজহারুল ইসলাম, ড. কামালউদ্দিন, পরবর্তীকালের অধ্যক্ষ নোমান, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, এম এ বারী।
১৯৬৩-এর আগস্ট থেকে ১৯৬৭-এর আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। সেপ্টেম্বরে যোগ দেন রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে। সেখানে গিয়ে দেখেন প্রশাসনের প্রায় সবাই তার ছাত্র- জেলা প্রশাসক মুর্শেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান, ম্যাজিস্ট্রেট আকবর আলি খান। ১৯৭০-এর ৩০ ডিসেম্বর ৬০ বছর পূর্তিতে তাকে অবসর নিতে হয়। রাজশাহীতে শিক্ষার পরিবেশ প্রশংসীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যারা তার ঘনিষ্ঠ তাদের মধ্যে ছিলেন অর্থনীতির ড. সোলায়মান আলী মণ্ডল, উর্দু ও পার্শির ড. কলিম সাসারামি, ইতিহাসের ড. সালাউদ্দিন, অ্যাপ্লাইড ক্যামেস্ট্রির ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী, ফিজিক্সের ড. আহমদ হোসাইন, রাজশাহী কলেজে প্রিন্সিপাল ছিলেন তার ঢাকা কলেজের সহকর্মী প্রফেসর আব্দুল হাই, আর টেক্সট বুক বোর্ডের চেয়ারম্যান ঢাকা কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল শামসুজ্জামান চৌধুরী। সেসময় তিনি নিজেও ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের ডিন এবং সিন্ডিকেট সদস্য।
ষাট দশকের স্কুলপাঠ্য যত ইতিহাস বই রয়েছে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের হয় তিনি রচয়িতা নয় তো সম্পাদক। এই খ্যাতির কারণে স্বাধীনতার পরপর তাকে বাংলা একাডেমির পরিচালকের মর্যাদা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নে উপকরণ সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি একটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন- ব্রিটিশ বিদায়ের পরপরই বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটেনি। যত অপ্রীতিকরই হোক মাঝখানে প্রায় সিঁকি শতকের একটি পাকিস্তান অধ্যায় রয়ে গেছে। এটাকে মুছে দেয়ার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বড় অংশজুড়েই এই অধ্যায়।
প্রিন্সিপাল নুরুল করিমের ‘স্মৃতিকথা’র একটি উপশিরোনাম রয়েছে। ‘১৯১৬-১৯৯০’ বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট। তার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিচারবোধের সঙ্গে পাঠকের সহমত হতেই হবে এমন নয়- বিরোধপূর্ণ অংশ যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করতে হবে। তিনি মনে করেন ১৯৭২-৭৩-এর পরীক্ষায় অবাধ নকল শিক্ষায় যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা কাটিয়ে উঠতে বহু বছর লেগে গেছে। ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নের চেয়ে জাতিকে শিক্ষিত করার প্রয়োজনটাই রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার শীর্ষে রাখার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়