নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে হাইকোর্টে তলব

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

পরের সংবাদ

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করুন

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অভাবনীয় ও অনস্বীকার্য। বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয় এবং আমাদের থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নেয়। বৃক্ষ আমাদের খাদ্য দেয়, কাঠ দেয় এবং মাটির ক্ষয়রোধ করে। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে সজীব ও সতেজ রাখে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছে এই বৃক্ষ। বৃক্ষরোপণ করে লাভবান হয়নি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে আছি তা বৃক্ষের কাছ থেকে পাই। এ ছাড়া বৃক্ষের কাছ থেকে খাদ্য পাই, পরিধেয় বস্ত্র পাই, আশ্রয়ের জন্য বাসস্থান পাই, জ্বালানি পাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই উপকারী বৃক্ষকেই আমরা কেটে ফেলছি। প্রতিনিয়ত বাসস্থানের জন্য গাছপালা কাটা হচ্ছে। বর্তমানে মানুষের চলাচলের রাস্তা ও পাকাকরণের তাগিদেও রাস্তার ধারের গাছপালা কাটা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে গাছপালার বিস্তার কমিয়ে আনলে পরিবেশের কী হবে?
বৃক্ষের ক্রমনিধন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বিশেষত গ্রীষ্মকালে দুঃসহ গরম। এই যে বেশকিছু দিন ধরে সারাদেশে রৌদ্রের তীব্রতায় দেশের জনজীবন ভোগান্তিতে পড়েছে। দিন দিন ভূপৃষ্ঠে সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে! এটা কি শুধু প্রাকৃতিক কারণ নাকি মানুষও দায়ী। অবশ্যই মানুষ এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী। কারণ আমরা যে হারে বৃক্ষ নিধন করছি সে হারে বৃক্ষরোপণ করছি না। ফলে দিন দিন বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরে শীতলতম স্থানের দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকার মধ্যেও ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন কেবলই বৈচিত্র্যতার অভাব, সময়মতো বৃষ্টির অভাব, অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
একটি দেশের ভৌগোলিক পরিবেশের জন্য দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে কোনো দেশের অন্তত ২৫ শতাংশ দরকার, সেখানে আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ। কিন্তু কেন এই বেহাল দশা? বৃক্ষ নিধন করে ইটভাটা, মিল-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে আর নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। এই অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা ও নগরায়ণের কারণেই মূলত নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে।
গাছপালা তো কাটা হচ্ছেই আবার শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য,ে ধোঁয়ায় নিকটবর্তী গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে, বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ফলদ ও ঔষধি গাছ। শিল্প-কারখানারও প্রয়োজন আছে। তবে তা বৃক্ষমুক্ত এলাকায় গড়ে তোলা উচিত। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছের চারা রোপণ করতে হবে, এমন সেøাগান থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। সুন্দরবনেও বনদস্যুরা গাছ কেটে বিদেশে পাচার করছে। ফলে বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দামি ও পুরনো গাছ, একটা পরিবেশের জন্য এটা বড় হুমকিস্বরূপ। এভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবী যেভাবে উষ্ণ হয়ে উঠছে, তাতে অবাধে সবুজ ধ্বংস হবে এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এখনই সময় এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার। তাহলে আমাদের করণীয় কী? আমাদের পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
আমরা প্রতি বছর নির্দিষ্ট কিছু দিনে শুধু বৃক্ষরোপণ করলে হবে না, যেখানে আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে আমরা সেখানেই বৃক্ষরোপণ করব। আমাদের একদিকে বৃক্ষ নিধন বন্ধ এবং অন্যদিকে বেশি বেশি বনায়নের জন্য সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়োপযোগী। কেউ যাতে বৃক্ষ উজাড় করে অপরিকল্পিত মিল-কারখানা গড়ে না তোলে, সেদিকেও নজর দেয়া আমাদের কর্তব্য। প্রথমত সরকারকে সরকারি বৃক্ষ নিধন ও পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়ির আঙিনার বৃক্ষগুলো অযথা না কাটার পরামর্শ দিতে হবে। প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য বৃক্ষের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চাই বৃক্ষরোপণ।

সাকিবুল হাছান : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়