নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে হাইকোর্টে তলব

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

পরের সংবাদ

নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তপ্ত খুলনা নগরী : অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে পেশী শক্তি ব্যবহার ও কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। এ ছাড়া বিগত ৫ বছর উন্নয়নের নামে নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মাওলনা আব্দুল আওয়াল ও স্বাতন্ত্র প্রার্থী এস এস শফিকুর রহমান মুশফিক। তবে তালুকদার আব্দুল খালেক প্রতিপক্ষ প্রার্থীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন সব কিছুই মিথ্যা ও ভিক্তিহীন ।
তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবারও গণসংযোগ, পথসভা, ও প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা। প্রার্থী, দলীয় নেতাকর্মীদের গণসংযোগ ও মাইকিংয়ে মুখরিত ছিল খুলনা নগরী। এ নির্বাচনে ৫ জন মেয়র, ১৩৬ জন কাউন্সিলর ও ৩৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীন পরিশ্রম করেও পিছু হটছেন না। ভোটারদের কাছে গিয়ে এক দিকে যেমন উন্নয়নসহ নাগরিক সেবা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন, অন্যেিদক নিজেদের প্রতীকের লিফলেট প্রদান করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে মাঠে নামেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলনের মাওলনা আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক। অন্যদিকে ৩১ ওয়ার্ডের সাধারণ ও ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকেই তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাব। তিনি বলেন, বিগত দিনে মেয়র হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছি। অল্পসময়ে দায়িত্ব পালনকালে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তিনি আরো বলেন, খুলনা সিটিকে ঢেলে সাজাতে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী গণসংযোগ, অভিভাবক সমাবেশ ও অ্যাডামসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সকাল ১০টায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুর বৈকালী বাজার এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও ব্যাপক গণসংযোগ করেন। তিনি বেলা ১১টায় খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় অভিভাবক সমাবেশে যোগদান শেষে দুপুর ১২টায় দৌলতপুর অ্যাডামস মিলনায়তনে অ্যাডামস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিজেএ চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী, খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শেখ মনিরুল ইসলাম বাশার, থানা আওয়ামী লীগ নেতা মো. হুমায়ুন কবির, আব্দুল জব্বার, নগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ, রায়েরমহল কলেজ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, দৌলতপুর অ্যাডামসের নির্বাহী পরিচালক মো. আসলাম, ১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী এনায়েত আলী আলো, সাধারণ সম্পাদক মো.

শাহাজান জমাদ্দার উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর চলছে। এ পর্যন্ত যেসব দল ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষকে শান্তি দিতে পারে নাই। সমাজের সর্বত্র অশান্তির খবর। গত ১৪ বছরে দেশের ১০ থেকে ১৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সিটির বরাদ্দকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়। আগামী সিটি নির্বাচনে দুর্নীতি দুঃশাসন ও চোরদের বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লব করতে হবে। তাই আগামী ১২ জুন দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে হাতপাখা প্রতীকে ভোট চান তিনি। আব্দুল আউয়াল বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের ৯০ ভাগ টাকা লোপাট হচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে একই অর্থ দিয়ে ৯০ গুণ বেশি উন্নয়ন করতে পারবে। দেশে সমতা সৃষ্টি করা হবে। কেউ ১০ তলায়, কেউ নিচতলায় থাকবে এমন সমাজব্যবস্থা রাখা হবে না। গতকাল সকালে সিটির জেলা আইনজীবী সমিতি, নিক্সন মার্কেট, মহসিন মোড়, রেলিগেট, মানিকতলা, সোনালি গেট, ফুলবাড়িগেট বাজার ও সেনপাড়া সহবিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় তিনি একথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, দপ্তর স¤পাদক লোকমান হোসেন জাফরী, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল প্রভাষক আব্দুস সবুর, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক মুহা. সিরাজুল ইসলাম।
অন্যদিকে গ্রিণ-ক্লিন ও ডিজিটাল খুলনা গড়াসহ ২২ দফার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন খুলনা সিটির জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. শফিকুর রহমান মধু। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সিটি করপোরেশনে পরিণত করবেন। কেসিসির সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং কেসিসিকে ওয়াসা, কেডিএ, পেট্রোবাংলা, খুলনা জেলা প্রশাসন, মেট্রো ও জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে খুলনা মহানগরীকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গতকাল দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। ২২ দফা ইশতেহারের অন্য দফাগুলো হচ্ছে- কেসিসির এরিয়া বর্ধিতকরণ ও বিশ্বরোডের সঙ্গে নগরীর একাধিক বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নগরীর ২২ খালসহ ময়ূর নদী খনন ও ময়ূর নদী কেন্দ্রিক নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শিক্ষাবৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান প্রভৃতি।
সকালা ৯টা থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন টেবিলঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুসফিক। নগরীর খালিশপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শ্রমিকদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় মুশফিক টেবিলঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
গতকাল সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন। প্রচারণাকালে ভোটারদের কাছে গোলাপফুল মার্কায় ভোট চান এই মেয়র প্রার্থী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়