কনস্টেবল বাদল হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

দুর্ভোগের অবসান চান নগরবাসী : সুপেয় জলের তীব্র সংকট জলজটের খুলনায়

পরের সংবাদ

দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই মাথা নত করব না : ছয় দফা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশি-বিদেশি কোনো শক্তির কাছে মাথা নত না করার দৃঢ়তার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই দেশ আমাদের। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দেশি-বিদেশি যতই চাপ আসুক না কেন- কোনো চাপের কাছে বাঙালি নতি শিকার করে না। আমরা কোনো চাপের কাছে মাথা নত করব না। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষিত করব। আমরাই এ দেশে আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক এ কে এম আব্দুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের বক্তব্য রাখেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা উত্তরের

সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।
জ¦ালাওপোড়াও করলে বিএনপি আমেরিকার ভিসা পাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে আর আমাদের উৎখাত করবে। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। সেটা হলো এখন যদি বিএনপি জ্বালাওপোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে আর মানুষ খুন করে- তারা আর আমেরিকার ভিসা পাবে না। বিএনপি যাদের কথায় নাচে, তারাই তাদের খাবে- আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নেই।
বিএনপিকে আন্দোলন করার অনুমতি দিলেও তীক্ষè নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত কিছু লোক জোগাড় করবে, আন্দোলন করবে, বসে থাকবে। করতে দাও। কিন্তু ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, মানুষকে পুড়িয়ে মারতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। নিজের চোখ-ক্যামেরা সব সময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের ওই দোষ আছে। একটা উসকানি দিয়ে, ছবি উঠিয়ে বাইরের কাছে কাঁদতে থাকবে।
বিদেশিরা ক্ষমতায় বসায় না, ব্যবহার করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে অন্য কোথাও থেকে এসে নাগরদোলায় চাপিয়ে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু কেউ দেবে না। তারা ব্যবহার করে, করবে- কিন্তু দেবে না ক্ষমতা। এটাই হলো বাস্তবতা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণই দিতে পারে। আর জনগণের সেই অধিকার জনগণের সেই সচেতনতা সেটা আমরা দিতে পেরেছি।
বিএনপি চায় কারফিউ, গণতন্ত্র এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা গণতন্ত্র হরণ করে। হত্যা, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। তাদের পকেট থেকে তৈরি করা দলের যে সমস্ত নেতারা গণতন্ত্রের কথা বলে আর নির্বাচন ও কারচুপির কথা বলে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আরে তোরা তো ভোট ডাকাত। তোরা তো গণতন্ত্রই জানিস না। তোরা চাস কারফিউ গণতন্ত্র। আর তাদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয় এটাই বাঙালির দুর্ভাগ্য। যারা গণতন্ত্র আনল এখন তাদের ওপর অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা। এটা কিছুই না, দেশের মানুষের যে উন্নতি হয়েছে- এটাই তাদের সহ্য হয় না।
মানুষের কষ্টের কথা উল্লেখ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অবশ্যই সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আর কিছু লোক আছে সুযোগ নেয়। পেঁয়াজ আমাদের আমদানি করতে হতো না। আমদানির আগে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। যেই পেঁয়াজ আমদানি শুরু, অমনি দাম কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা অপকর্মটা না করলে এই পেঁয়াজ দিয়েই কিন্তু আমাদের হতো। তো আমরাও জানি, কখন কোন জবাবটা দিতে হয়। কখন কোন ব্যবস্থা নিতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়েছে। আমরা এলএনজি আমদানি করি। গ্যাস আমদানি করি। সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। নিজেরা খুব খনন করছি, গ্যাস উৎপাদন করছি। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সে বিদ্যুতের এখন অসুবিধা হচ্ছে। লোডশেডিং দিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। মানুষের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুয়েকদিনের মধ্যে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎযুক্ত হবে। এরপর ১০-১৫ দিনের মধ্যে আরো যুক্ত হবে। এরপর আর কষ্ট থাকবে না।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য-অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হবে- এটা ভাবতেই পারি না। তাছাড়া বৃষ্টি নাই। আমরা জানি, সবার কষ্ট হচ্ছে। আমরা বারবার বসছি কীভাবে মানুষের কষ্ট লাঘব করা যায়।
নিচ দলের নেতাকর্মীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে সচেতন থাকতে হবে। জনগণের পাশে যেতে হবে। আমাদের উন্নয়নের কথা তাদের বলতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা কথা তাদের বলতে হবে। যাতে করে কেউ তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে। আমার প্রশ্ন, কোন গণতান্ত্রিক ধারায় ওই দলের জন্ম? আজকে তারা ভোট কারচুপির কথা বলে। সেই ভোট কারচুপি তো বিএনপি নেতাদেরই সৃষ্টি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ আর আমাদের জোট সবাই মিলে দিনের পর দিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, সেই স্লোগান আমাদেরই ছিল। আমরাই এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি।
ছয় দফা বাঙালির ম্যাগনাকার্টা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফা ছিল বাঙালির ম্যাগনাকার্টা। এই ছয় দফা ধরেই আমাদের এগিয়ে যাওয়া। আজকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই রোল মডেল হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশের জনগণকে আর কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছিল একা এমন কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সত্তরের নির্বাচনে মুসলিম লীগ ২০ দলীয় জোট করেছিল, আর আওয়ামী লীগ ছিল একা। তাদের ধারণা ছিল ২০ দলীয় জোট কমপক্ষে ২০টা সিট পাবে, কিন্তু পেয়েছিল মাত্র দুইটা সিট। সমগ্র পাকিস্তানের এসেম্বলিতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ সিট পেয়ে যায়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। ছয় দফা মানুষ লুফে নিয়েছিল, এই ছয় দফা থেকে এক দফার উত্থান। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলতেন ছয় দফা তিনি দিয়েছেন। কিন্তু ছয় দফার প্রকৃত অর্থ হলো এক দফা, অর্থাৎ স্বাধীনতা। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ নির্বাচন অনেক শর্ত দেয়া হয়েছিল। তাতে আমাদের দেশে অনেক দল অনেক নেতা নির্বাচনে যেতে রাজি ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি নির্বাচন করব। ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে এ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনগণের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচিত হবে। কে জনগণের নেতা সেটা নির্বাচিত হবে। এখানে কথা বলার অধিকার হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা পেশ করার সময় বাধা দেয়া হয়েছিল। ঢাকায় ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রেস কনফারেন্স করেন। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে একটা পাস করানো হয়। কাউন্সিল ডেকে কাউন্সিলে একটা পাস করানো হয়। মাত্র কয়েক মাসে সারা বাংলাদেশ ঘুরে ছয় দফার ব্যাপক প্রচার করেন। যে কোনো একটা দাবি এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মধ্যে সাড়া জাগানো, এটা ছিল একটা অভূতপূর্ব ঘটনা। যেটা ছয় দফার ব্যাপারে হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়