গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তোপের মুখে প্রতিমন্ত্রী > এ মাসেই সংকট কেটে যাবে : নসরুল হামিদ

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জ¦ালানি খাতের অব্যবস্থাপনা বিশেষ করে বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তোপের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ খাতে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা সম্পূরক বাজেট পাসের ব্যাপক বিরোধিতা করে আনা ছাঁটাই প্রস্তারে ওপর আলোচনায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফেরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বর্তমান বিদ্যুতের নাজুক ব্যবস্থাপনায় প্রতিমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
সম্পূরক বাজেটের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ¦ালায় মোমের বাতি, আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশিথে প্রদীপ বাতি’। অসময়ে আমরা ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ফেলেছি, অথচ আমাদের লাগে ১৪ হাজার মেগাওয়াট, বাকিটা নষ্ট হয়েছে। আজকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত চেয়েছেন। আর আপনার বাকি আছে বিভিন্ন কলকারখানার কাছে ২ হাজার কোটি টাকা। আপনাকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি অনেকগুলো বিল পরিশোধ করতে হবে যা ৭১ বিলিয়র ডলার, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে?
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শিল্পায়ন কমে যাবে, কৃষি উৎপাদনে ধস নামবে। এক সময় দেশের প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এই গরমে হঠাৎ করে কেন বিদ্যুৎ চলে গেল। এর জন্য আগে থেকেই কয়লা, ডিজেল আমদানি করা উচিত ছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই আজকের এই অব্যবস্থাপনা। এই প্রচণ্ড গরমে অতিদ্রুত কয়লা আমদানি করতে হবে, যাতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত চালু করা যায়।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে সচিবদের বাথরুমের মধ্যেও এসি আছে, সেখানে সেন্ট্রাল এসি চালিয়ে রেখেছে। তাদের এসি আবার হাইভোল্টেজে, একবার চললে আর বন্ধ হয় না। অথচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। শহরের কিছু ধনীকশ্রেণির মানুষের জন্য কেন গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না? আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমানের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ তো মানুষ পাচ্ছেই না, তার মধ্যে তিনি কী করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তোলেন?
প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আপনি কেন বলেন না- কোন সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, কোন সময় থাকবে? একেবারে নোম্যানস ল্যান্ডের মতো অবস্থা তো চলে না। কেন বিদ্যুৎ নেই, কখন থাকবে না তা জনগণকে জানান। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে, তারা কিন্তু আপনাদের সুনাম
নষ্ট করতে পারে, এটা থেকে সাবধান।
জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তেল আনা যাচ্ছে না। অথচ গত সোমবার এই সংসদে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশে ভোলায় নাকি গ্যাসকূপের ছড়াছড়ি। একেবারে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা, সারা পৃথিবীর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। তাহলে সরকার কেন গ্যাস অনুসন্ধান চালাচ্ছে না? তাহলে তো এ সংকট অনেকখানি কেটে যেত। এখন যেভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে তার ওপর আগামী ১০ বছরে গ্যাস একদম ফুরিয়ে যাবে, নতুন করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে গ্যাসকূপ কেন অনুসন্ধান করছে না, আবার বিদ্যুতের ভুয়া বিল কেন আসে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ মাসেই বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে : বিরোধীদলীয় এমপিদের নানাপ্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেশি দিন আগের কথা না, মাত্র ১৪ বছর আগেও প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। কোভিড-১৯ আমাদের স্মরণ শক্তির ক্ষতি করেছে। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই আগে ১৭-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। সেখানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আমরা সঞ্চালয় লাইন করেছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। যখন আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলি তখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচের বিষয় ছিল। তার ওপর সঞ্চালন লাইন, ডিস্টিবিউশন লাইন ও জ¦ালানি খরচও দিতে হয়। আমরা যে কোনো মুহূর্তে ২০-২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু কোভিড পরবর্তীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মতো চ্যালেঞ্জ এসেছে, সারা বিশ্বে জ¦ালানিসহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। গ্যাস ও তেলের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আরো বড় চ্যালেঞ্জ আছে বিশ্বের বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে শুধু তাই নয়, তার ওপর পাব কী পাব না তা-ও অনিশ্চিত। তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে বারো হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছি, রাতের বেলায় ১৫ হাজার। আমাদের ঘাটতি আছে রয়েছে ২ থেকে আড়াইহাজার মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, প্রতি বছর জ¦ালানি বাবদ ৮ হাজার কোটি টাকা, গ্যাসে ১২ হাজার কোটি ভর্তুকি দিতে হয়। আর এ বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈশ্বিক অবস্থার কারণে আমরা সময়মত কয়লা আনতে পারিনি। তবে ১৫-১৬ দিনের মধ্যে কয়লা এসে যাবে। আবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ লাখ অটোরিকশা মধ্যরাতে চার্জ দিতে ৩৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। আমরা তো বন্ধ না করে ইনক্রিজ করছি। আশা করছি, এ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা কেটে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়