গণতন্ত্র মঞ্চের হুঁশিয়ারি : সমাবেশে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না

আগের সংবাদ

পাহাড় কাটার হিড়িক, দুই ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটায়

পরের সংবাদ

ফের কোদালকাটিতে ভাঙন হুমকিতে ২০ স্থাপনা

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাসুদ পারভেজ, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে : নদনদী বেষ্টিত কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলাটি রাজিবপুর সদর, কোদালকাটি এবং মোহনগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে রাজিবপুর সদর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ব্রহ্মপুত্র নদীর ১১ বর্গকিলোমিটারের বিস্তীর্ণ দ্বীপচর নিয়ে কোদালকাটি ইউনিয়নটি অবস্থিত। এ ইউনিয়নের চারপাশে নদীর পানি থাকায় প্রতি বছরই ভাঙন দেখা দেয়। আর সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয় হাজার হাজার পরিবার।
গত কয়েক সপ্তাহ আগে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়ে ফের ভাঙনের কবলে পড়েছে কোদালকাটি ইউনিয়নবাসী। এতে হুমকিতে রয়েছে ওই ইউনিয়নের সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যাপীঠ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালকাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাদাকাত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, কোদালকাটি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ প্রায় ২০টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
জানা গেছে, এ ইউনিয়নের চারটি মৌজার মধ্যে একটি নদীর পানিতে বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে ভাঙনের কবলে রয়েছে আরো দুটি মৌজা। এখন যেটুকু বাকি আছে, সেটুকুর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান কোদালকাটি ইউনিয়নবাসী। বর্তমানে কোদালকাটি ইউনিয়নে ৫৬ হাজার মানুষ বসবাস করছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ আর গোয়ালভরা গরু ছিল কোদালকাটি ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে। এখন এমনটা আর দেখা যায় না। চরম দরিদ্রতাকে মাথায় নিয়েই তাদের বাঁচতে হয়।
প্রতি বছরই নদীর এক তীর ভাঙলে অন্য তীরে পাড়ি জমাতে হয় সেখানকার মানুষদের। প্রতি বছর বাড়ি সরানোর কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণে অনেকটাই পিছিয়ে থাকে এখানকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যেন কৈশোরেই ঝরে যায় তারা। সম্প্রতি কোদালকাটি ইউনিয়নটি পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অব. কর্নেল জাহিদ ফারুক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপি।
পরিদর্শনকালে নদীর ভাঙনরোধে সামান্য কিছু জিওব্যাগ বরাদ্দ দেন তিনি- যার কাজ চলমান রয়েছে। এতে সম্পূর্ণ নদীর ভাঙন রোধ সম্ভব নয় বলে অনেকে জানান। তাই নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান রাজিবপুর উপজেলাসহ কোদালকাটি ইউনিয়নবাসী।
সাজাই সরকার পাড়া গ্রামের সাজিদুল ইসলাম, আছমা বেগম বলেন, নদীর এই পাড় ভাঙলে ওই পাড়ে আশ্রয় নিই। আবার ওই পাড় ভাঙলে এই পাড়ে বাড়ি করি। এভাবে আমাদের প্রতি বছর বাড়ি সরানো লাগে। অনেকেই ১০-১২ বার বাড়ি সরাইছে। আমরা ত্রাণ চাই না, নদীভাঙন রোধ চাই।’
বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিক জুয়েল বলেন, ‘নদী ভাঙার কারণেই আমাদের এলাকাটি দরিদ্র। প্রতি বছর নদী ভাঙার কারণে নতুন বাড়ি করতে হয়। নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান এবং রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ছক্কু বলেন, ‘নদীভাঙনের ফলে আমার ইউনিয়নের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। একসময় যাদের ১০০ বিঘা জমি ছিল, তারাও আজ আশ্রয়হীন হয়েছে।
শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে, আবার কেউ রাস্তার ধারে বাড়ি করে বসবাস করছে। প্রায় সবাই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উপনীত হচ্ছি, কিন্তু সেক্ষেত্রে কোদালকাটির মানুষ দিন দিন দরিদ্র হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমার ইউনিয়নকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করুন, এতে ইউনিয়নবাসীর দুঃখ লাঘব হবে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদীশাসনের সমীক্ষা চলমান, কোদালকাটিকে এতে অন্তর্র্ভুক্ত করা হবে।
এছাড়া বর্তমানে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক বরাদ্দের কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ী সমাধান সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়