‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

আমদানিনির্ভর জ্বালানি নয় শুধু দেশীয় উৎসে জোর দিন

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ থেকে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ২৫ মে এর একটি ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। সংকট মেটাতে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান মেলেনি। এতে করে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও আসছে। ভয়াবহ তাপপ্রবাহে জনজীবন যেন অস্থির হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং ও পানির সংকটে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। টানা তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, তারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে কেন এই দুর্ভোগ। সরকার বলছে, ডলার সংকটে কয়লা, তেল-গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তাই চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির জন্য দায় কে নেবে? জানা গেছে, কয়লা বিল বকেয়া, আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ, দেশে কর্মরত বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির বিল পরিশোধ- এমনি সব বিল বকেয়ায় ধুঁকছে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত। এর অন্যতম কারণ ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহকারী চীনা কোম্পানি সিএমসির বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। এ কারণে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে জুন মাসের পুরোটা কঠিন সময় পার করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিভাগ। দেশে এখন প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। চলমান এই বিদ্যুৎবিভ্রাট নিরসনে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে বলে সরকার বলছে। আমদানিনির্ভর জ¦ালানি নীতির কারণে বিদ্যুৎ সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে জ¦ালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। দেখা যাচ্ছে, জ¦ালানি তেলের পাশাপাশি এখন গ্যাসও আমদানি হচ্ছে। বাড়ছে কয়লা আমদানিও। বিশ্ববাজারে উচ্চ দর এবং পরিকল্পনা নির্ধারণে অদূরদর্শিতায় আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির উৎপাদন বাড়েনি। ফলে দেশের জ¦ালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স অনেকটাই হাত গুটিয়ে আছে। কয়েক বছরে স্থলভাগে বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। সমুদ্রেও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১৪ সালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মিটলেও বাংলাদেশ এখনও সমুদ্রসম্পদ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। দেশের মজুত কয়লার উত্তোলন নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। জামালগঞ্জের কয়লাখনি থেকে গ্যাস উত্তোলন সম্ভাবনার একটি জরিপের ফলও নেতিবাচক হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের জ¦ালানি নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মুখে। আমদানিনির্ভর জ¦ালানির ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা প্রণয়নের নানামুখী ঝুঁকি থাকে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি, উৎপাদন ও দাম নিয়ে কারসাজিসহ বিভিন্ন কারণে জ¦ালানির বাজার সারা বছরই দোদুল্যমান থাকে। মাঝে মাঝেই দাম বেড়ে রেকর্ড করে। ফলে আন্তর্জাতিক জ¦ালানি বাজারের ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন। ডলার সংকটও প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। আজকে জ¦ালানি বিভাগকে সেটাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সময় হয়েছে বিকল্প পন্থা খোঁজার। এককথায়, জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশীয় উৎসে জোর দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লাসহ অন্যান্য সম্পদ ব্যবহারে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সেবার মান উন্নীত করার এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় রোধ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের সে মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়