করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

হুমকির মুখে মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র : অনাবৃষ্টিতে দুর্দিনে হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম রমজান আলী, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে : জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপদাহ ও অনাবৃষ্টিতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজণন ক্ষেত্র হালদা। সম্প্রতি নমুনা ডিমের দেখা মিললেও প্রজননের ভরা মৌসুমে জো’র পর জো গেলেও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে ডিম সংগ্রহকারীদের নৌকা, জাল ও মাটির কুয়াসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জামের জন্য করা বিনিয়োগ। তবুও আশা ছাড়েননি রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার নদীর দুপারের ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের অপেক্ষা কেবল বৃষ্টির।
গত কয়েকদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও হালদার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, বর্তমানে চতুর্থ জোও চলে গেছে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নেমে না আসায় হালদায় বর্তমানে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ নেই। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নামলে হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং আগামী মাসে অর্থাৎ জুনের প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৬ জুন) পূর্ণিমার জো এবং সর্বশেষ অমাবস্যার জোতে (১৫ থেকে ২০ জুন) পুরোদমে ডিম ছাড়তে পারে কার্পজাতীয় মা মাছ।
একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন অন্যদিকে মানবসৃষ্ট ক্ষতির প্রভাবে হালদা নদী তার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে দাবি ডিম সংগ্রকারীদের। হালদার প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালদার গভীরতা অনেক কমে গেছে। এক সময় হালদা নদীতে ২০-২২টি কুম (গভীর গর্ত) ছিল। প্রতিটি কুমের গভীরতা ছিল ২০০ থেকে ২৫০ ফুট। রাবার ড্যাম, নদীর ১৭-১৮টি শাখা খালগুলোতে স্লইচগেইট স্থাপন, জিও ব্যাগ ফেলাসহ নানা কারণে কুমগুলো ভরাট হয়ে টিকে আছে মাত্র ৭-৮টি।
মাছোয়াঘোনা, পোড়াগোপালী, কাগতিয়ার মুখ, সিপাহি ঘাট, অংকুরিঘোনা স্লুুইচগেইট, সর্তারঘাট, গহিরা ব্রিক ফিল্ড এলাকায় টিকে থাকা কুমগুলোর গভীরতা ২০-২৫ ফুট বা তার চেয়ে কিছু বেশি বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা। তাদের মতে, প্রজনন মৌসুমে ১ মণ বা তার চেয়ে কম-বেশি ওজনের বড় বড় গভীর কুমে আশ্রয় নেয়। ডিম ছাড়ার সময় পূর্ব-পশ্চিম সোজা বাঁকে জোয়ার বা ভাটায় ডিম ছাড়ে আশ্রিত মা মাছগুলো। কুমে পড়ে, পাকে ঘূর্ণি হয়ে সেই ডিম ভেসে উঠে। ভেসে ওঠা ডিমের গতি বাড়ে পানির চেয়ে বেশি। সে ডিম জালে আটকিয়ে সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। পরে হ্যাচারি বা মাটির কুয়ায় বিশেষ প্রক্রিয়ায় ডিম থেকে রেণুতে রূপান্তর করে বিক্রি করা হয়। যুগ যুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
হালদা নদীর অভিজ্ঞ প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমাদের জন্য হালদার আজ এ অবস্থা। আমরা মানুষ ঠকাই, আল্লাহ আমাদের রিজিক কেড়ে নিচ্ছেন। হালদা কত অত্যাচার সহ্য করবে প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, প্রতি কেজি রেণু বিক্রি করি ২ লাখ টাকায়, পানি মিশিয়ে পানির দামও নেই, মাছ চুরি করি। হালদা গায়েবী ধন, আমরা মানুষ ঠকাচ্ছি, তাই দিন দিন আমাদের রিজিকও কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মুখে শুনেছি মাছের খাদ্য ধ্বংস করে এ সর্কাস ফিশ। আক্ষেপ করে বলেন, হালদার শাখাখালগুলোতে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করায় হালদা ভরাট হয়ে ক্ষতি হয়েছে। কৃষি উন্নয়নও হচ্ছে না, শাখা খালগুলো মাছশূন্য। এক সময় শাখা খালগুলোতেও মা মাছের বিচরণ ছিল।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিসম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আজ পর্যন্ত ডিম না ছাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাত না হওয়া। বৃষ্টিপাত হলে যদি ডিম না ছাড়ত তাহলে অন্য প্যারামিটাগুলোর প্রভাব ধরা হতো। তখন হালদা পাড়ে তামাক চাষ, কুম ভরাটসহ বিভিন্ন কারণগুলো বিবেচনা করা হতো। গত বছর মে ও জুন মাসে পুরোদমে ডিম ছেড়েছিল সে হিসেবে এবার আগামী জুনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ।
অন্যদিকে ডিম সংগ্রহের জন্য উভয় পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর। তিনি জানান, সরকারি হ্যাচারিগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫০০ কেজি। ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড করা ছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়