করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

মেহেরপুরে দালাল সিন্ডিকেটে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বিদেশগামীরা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুরে ভুয়া আদম দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অর্ধশত পরিবার। কেউ জাল ভিসায় বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আবার কেউ দালালকে টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে বিদেশ না যেতে পেরে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রবাস নামক সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে জায়গা-জমি, গরু-ছাগল বিক্রি করা টাকা হারিয়ে এখন দিশাহারা পরিবারগুলো।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিক লাভের আশায় নামমাত্র কোম্পানিতে শ্রমিক পাঠানোর কাজ করে দালাল সিন্ডিকেট। গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে লোক সংগ্রহ করে দালালরা।
বিদেশ যাওয়ার পর টাকা নেয়ার কথা বললেও পাসপোর্ট হাতে নেয়ার পর পাল্টে যায় তাদের আচরণ। দফায় দফায় টাকা নিয়ে মাসের পর মাস চলতে থাকে টালবাহানা। পরে কোনো নরমাল বা সাপ্লাই কোম্পানিতে শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
সদর উপজেলার যাদবপুর গামের রাসেল, মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের নওদা পাড়ার মিলন হোসেন, একই উপজেলার তারানগর গ্রামের বদর উদ্দিন, সদর উপজেলার বেলেগাড়ি গ্রামের রাজু, জিন্নাত, সজিব, হান্নান, শরিফুলসহ পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি গ্রামের অন্তত অর্ধশত যুবক ভুয়া আদম দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
রাসেল বলেন, সদর উপজেলা বারাদি গ্রামের আদম দালাল বিল্লাস হোসেনের মাধ্যমে সৌদি আরব যাই। যেখানে ছিলাম সে জায়গা বাংলাদেশের জেলখানার চেয়ে খারাপ।
প্রতিদিন বিভিন্নভাবে নির্যাতন চলত। পৌঁছানোর তিন মাস পর পাকিস্তানি এক দালালের কাছে আমাদের বিক্রি করে দেয়। সেখানে বেতন দিত না, খেতে দিত এক বেলা।
একটি গোডাউন ঘরে একসঙ্গে ৪০০ জন ছিলাম। সেখানেই রোকন নামে একজন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তারপর থেকে দুপুর ২টায় ও বিকাল ৫টায় আমাদের বের হতে দিত। তখন রোজার মাস ছিল, আমরা রাস্তার পাশে মিসকিনদের জন্য রাখা খাবার খেতাম ও ক্যাম্পে নিয়ে আসতাম। রোজার পর আবারো সেই না খেয়ে থাকা। ৭ মাস পর বাংলাদেশি সৌদি প্রবাসী শামীম নামের এক দালালের মাধ্যমে আরো ৩ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।’
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের কাজল বিশ্বাস বলেন, একই উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের আদম দালাল সাগর আলীর ও তার মা লালফাতন খাতুনের মাধ্যমে বছরখানেক আগে সৌদি পাড়ি দিই। সৌদি পৌঁছানোর পর আমিসহ আরো দুজন বুঝতে পারি, জাল ভিসায় সৌদি এসেছি। সৌদি সরকারকে ট্যাক্স না দেয়া লাল তালিকাভুক্ত কোম্পানি শাহরুখ আল নোঝাতে গিয়ে তিন মাস পার হলেও কোনো কাজ মেলেনি। কাজল বলেন, পরে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে ১৪ দিন সৌদির জেল খেটে বাড়ি ফিরে আসি। আমার সঙ্গে থাকা মিলন ও বদর উদ্দীন কোম্পানি থেকে পালিয়ে মরুভূমির বিভিন্ন এলাকায় এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা স্বীকার করে সাগর বলেন, আমি ১৮ জনকে সৌদি পাঠিয়েছি। প্রথমদিকে কোম্পানির একটু সমস্যা হয়েছিল। বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কাজের কোনো লাইসেন্স আছে কিনা- জানতে চাইলে সাগর বলেন, আমার এক মামার মাধ্যমে বিদেশ পাঠাই।
সদর উপজেলার বেলে গাড়ি গ্রামের জিন্নাত, সজিব আলী, আব্দুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন বলেন, বুড়িপোতা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলী নামের এক দালালের নিকট টাকা দিয়ে এখনো পিছু পিছু ঘুরতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আদম দালাল জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সঠিক ভিসা দেয়ার পরও না যাওয়ায় আদালতে কয়েকজনের নামে মামলা করেছি। তবে মামলার কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি আরো জানান, বিদেশে লোক পাঠানোর আইনি কোনো বৈধ অনুমোদন নেই তার।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আজিজুল ইসলাম বলেন, ভুয়া দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ না যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। তারপরও কেউ যদি প্রবাসে গিয়ে প্রতারিত হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করলে সে সহযোগিতা পাবে। আবার কেউ যদি দেশে ফিরে আসে সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়