করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

মদন শহীদ স্বরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় : প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ নয়-ছয়ের তদন্তে ধীরগতি

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : ১১ বছর ধরে বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক মো. আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রতি বছরই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের হলেও তদন্তের নামে অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এ বছরও বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু তদন্তে চলছে ধীরগতি।
মো. আক্কাছ উদ্দিন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন শহীদ স্বরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। হাওড়াঞ্চল মদন উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ নিয়ে নয়-ছয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান গত ৫ মাস আগে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলা প্রশাসক অভিযোগটি আমলে নিয়ে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সুবাদে গত ৬ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। প্রতি বছরের মতো এবারো কি তদন্তের নামে অদৃশ্য কারণে ধামাচাপা পড়ে যাবে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতি- এমন প্রশ্ন জনমনে।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, মো. আক্কাছ উদ্দিন ২০১১ সালে মদন শহীদ স্বরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি উপজেলার বাললী-বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময়েও বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়সহ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয়দের চাপে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ২০১১ সালে মদন শহীদ স্মরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আক্কাছ উদ্দিন।
১১ বছরে মাত্র দুইবার নিজের পছন্দ লোকজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন আক্কাছ উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের তদন্তে আসেন। অনিয়ম প্রমাণিত হলেও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক। পরে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের বিষয় উল্লেখ করে ২০১৮ সালে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোতা মিয়াসহ অভিভাবক সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময়ে তদন্ত কমিটি অর্থ নয়-ছয় করার প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় অডিট ও মনিটরিং করার সুপারিশ জানান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এমন দুর্নীতি নিয়ে এক শিক্ষার্থী অভিভাবক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে তদন্ত আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরির্দশককে ঘুষ দেয়ার হিসাব দেখিয়ে বিদ্যালয়ের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন। এছাড়া বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবনটি ১ লাখ ১৩ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। সেই টাকা পূবালী ব্যাংক মদন শাখায় বিদ্যালয়ের একাউন্টে জামা দেয়ার জন্য রেজুলেশন করেন বিদ্যালয় কমিটি। ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে সেখান থেকে ১৩ হাজার আত্মসাৎ করেছেন তিনি। আবার জমা দেয়া টাকা থেকে ভুয়া স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন। এর সঙ্গে বিদ্যালয়ের ক্রয়কৃত আসবাবপত্র নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন তার নিজ ক্ষমতা বলে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের অর্থ কেলেঙ্কারি বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় ও অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মদন শহীদ স্বরণীকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আক্কাছ উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য কমিটি হয়েছে। যারা তদন্ত করছে তারাই বলবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান মদন উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল বারী বলেন, প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক সময় চাওয়ায় তদন্তের স্বার্থে তাকে সময় দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘আমি মদন উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে বিষয়টি এখন অবহিত হয়েছি। প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়