করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

তিনশ বছরের ঐতিহ্য : বুধহাটার দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির সংস্কারের দাবি

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস কে হাসান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দিরটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
১৯৭১ সালে মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত মন্দির সংস্কারের জন্য তেমন কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মন্দির কমিটি। ১১৪৬ বঙ্গাব্দে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামের জমিদার রাজা রাজবংশী মিত্র এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
কথিত আছে, জমিদার রাজবংশী প্রায় সময় খাজনা আদায়ের জন্য বজরা বা নৌকাযোগে বুধহাটায় কাচারিতে গমন করতেন। একদিন খাজনা আদায়ের সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সে সময় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মা বলেন, রাজবংশী আমি তোর হাতে এ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমি নদীতে ভেসে ভেসে চলেছি। তুই আমাকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত কর। জমিদার ঘুম ভেঙে দেখেন তখন রাতের দ্বি-প্রহর। তিনি নদীর ধারে ছুটে গিয়ে দেখেন পূজা উপাচারে সজ্জিত একটি ঘট ভেসে যাচ্ছে। সে দিন ছিল চৈত্র মাসের শেষ মঙ্গলবার।
তিনি ঘট তুলে এনে ওই দিনই পূজা করেন এবং মন্দিরের ভিত স্থাপন করেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে মন্দিরের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
লোকজন তাদের মনোষ্কামনা পূরণে নিত্য পূজা দিতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির।
ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি পরিচালনা করার জন্য জমিদার ৭৪ একর জমি দান করেন। কিন্তু কালের আবর্তনে এখন আছে মাত্র ২.০৩ একর। এই জমির মধ্যে গরুর হাট বসালেও সেখান থেকে মন্দির পরিচালনার জন্য কোনো অর্থ আসে না। ২০২০ সালে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১০ লাখ টাকার একটি অনুদান পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও আজও তা পাওয়া যায়নি।
১৯৭৬ সালের দিকে নওয়াপাড়া গ্রামের দ্বীনবন্ধু সরকার ও মহাজনপুর গ্রামের কাত্তিক দেবনাথ ও রমেশ দেবনাথ মন্দিরটির সংস্কার শুরু করেন। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ের সংস্কার বেশি দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে সাংবাদিক সচ্চিদানন্দদেসদয়ের তত্ত্বাবধানে নবজাগরণী সাংস্কৃতিক সংঘ মন্দিরটি রক্ষা করার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। স্থানীয়রা জানান, ১২টি মন্দির পাশাপাশি থাকলেও এখন মাত্র ছয়টি মন্দির অবশিষ্ট আছে। এসব মন্দিরে ১২টি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ থাকলেও এখন আছে মাত্র দুটি। জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে মন্দির থেকে বাকি শিব লিঙ্গগুলো চুরি হয়ে গেছে।
মন্দিরের পুরোহিত বিকাশ ব্যানার্জী বলেন, এখানে চৈত্র মাসব্যাপী বিভিন্ন উপাচারে শিব পূজা ও জল প্রদান করা হয়। তাছাড়া প্রতি বছর শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী, নামযজ্ঞ, জগদ্বাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা, নিত্য পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধহাটা দ্বাদশ শিবকালী মন্দিরের স্থাপত্য, অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। সরকারি সহায়তার অভাবে এই প্রাচীন নির্দশনটি মরতে বসেছে। এটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু বলেন, তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দিরটি।
ইতোপূর্বে মন্দিরটি সংস্কারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মন্দির সংস্কারের জন্য আরো বরাদ্দ দেবেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়