গ্রামীণ কল্যাণ : চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেয়ার রায়ে ৬ মাসের স্থিতাবস্থা

আগের সংবাদ

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রী : ফারুক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বরেণ্য চলচ্চিত্র নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ছিলেন একজন পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করতে নায়ক ফারুক বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সদ্যপ্রয়াত আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করেছেন তিনি। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অবদান রেখে গেছেন। দুঃখের বিষয় আমরা একে একে সব মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে ফেলছি। তিনি শুধু রাজনীতিই করেননি সাংস্কৃতিক জগতেও অবদান রেখেছেন, চলচ্চিত্র জগতে অবদান রেখেছেন। আমরা তাকে জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত করি। আমাদের সংস্কৃতির সেবায় তার মৃত্যু বিরাট ক্ষতি। সাংস্কৃতিক কর্মীরা সব সময় আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকেছেন এবং প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সাহস জুগিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তার নামটি মুছে ফেলা হচ্ছিল। নামটি নিতেই চাচ্ছিল না। তখন সাংস্কৃতিক কর্মীরাই এগিয়ে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধের গানগুলোকে সামনে নিয়ে আসা, আবার সেই স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করায় তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তার অনেক অবদান এ দেশের জন্য রয়েছে। আজকে খুব কষ্ট লাগছে যে তিনি এভাবে চলে গেলেন। আসলে জন্মালে তো মরতেই হবে- এটাই তো বাস্তব কথা। ফারুক শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাই নয়, ছাত্রজীবন থেকেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলনসহ ৬ দফা আন্দোলন ও ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ভোলার নয়।
এ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরো অংশ নেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নূর, মেহের আফরোজ চুমকি, হাবিব হাসান, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
বক্তারা বলেন, ফারুক একজন বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্পষ্টবাদী হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। ৬ দফা আন্দোলন ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি উল্লেখ করেন বক্তারা।
সংসদে শোক : একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে শোক প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। স্পিকার বলেন, কোনো সিটিং সংসদ সদস্য মারা গেলে তার জীবনের ওপর স্মৃতিচারণ করে আলোচনার রীতি আছে। এছাড়া আলোচনার পরে সংসদ মুলতবির বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, আকবর হোসেন পাঠান ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ‘জলছবি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে ‘আলোর মিছিল’ নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি ‘সুজন সখী’, ‘সারেং বৌ’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারে (বাচসাস) চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।
আকবর হোসেন পাঠান ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং সপ্তম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২ এবং অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ভারতে বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোকিয়া আফজাল রহমান, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত ভাষাসৈনিক এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিণী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির মা রহিমা ওয়াদুদ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর মৃত্যুতে মহান সংসদে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পরে শোক প্রস্তাবগুলো ভোটে দিলে সংসদে তা পাস হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়