ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজ

আগের সংবাদ

বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব : বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

পরের সংবাদ

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** অর্থের জোগান ** মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ** লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ** বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা **
মরিয়ম সেঁজুতি : নির্বাচনী বছরে একদিকে জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা দেয়ার তাগিদ, অন্যদিকে দেশীয় অর্থনীতিতে বিদ্যমান তীব্র চাপে সম্পদের অপ্রতুলতার মধ্যেই ইতিহাসের সবচেয়ে বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একাদশ জাতীয় সংসদের চলমান ২৩তম অধিবেশনে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন বাজেট পেশ করেন তিনি। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি দেশের ৫২তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম ও আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা- এই তিন বিষয়কে এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। কৌশলও নির্ধারণ করেছেন, যাতে এসবের প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা এবং অর্থনীতি গতিশীল রাখা যায়। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ দিয়েছেন তিনি- যাতে আমদানি পণ্য দেশেই উৎপাদন করা যায়।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রায় সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার এ বাজেটে অর্থের জোগান হয়ে উঠবে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে বাধ্য হলে তা একদিকে মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাত প্রাপ্য ঋণসুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এটি উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ব্যাহত করবে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, এ বছরের বাজেট বাস্তবায়ন সবচেয়ে কঠিন হবে। এর মূল কারণ দুটো- প্রথমত, রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। ফলে সরকারের পরিকল্পনা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশাল সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা অনেকখানি। বিদেশি ঋণ আনতে হবে এক লাখ কোটি টাকা বা ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেক্ষেত্রে গ্রস হিসাবে আনতে হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। তিনি আরো বলেন, আমাদের আর্থিক সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। সেই প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক ঋণ আনা ও এর বাস্তবায়ন একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা ব্যাংকিং খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। আবার ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে।
তবে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাজেট নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। তিন শতাংশের কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে এবং বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের উপরে এবং বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। স্মার্ট বাংলাদেশে শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে সবার দোরগোড়ায়। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়নসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা হাতের নাগালে থাকবে। এছাড়া তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-

তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করে তোলার উদ্দেশ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরো বলেন, গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে এবং তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন বেলা ৩টা ২ মিনিটে। অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদের প্রতি সম্মান জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এরপর শুরু হয় বাজেটের অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা। বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলে এ উপস্থাপনা।
এর আগে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেখানেই প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত অর্থবিল ও বাজেট রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য নেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরের পর তা সংসদে উত্থাপন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী জানান, বাজেটে সবাইকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এবারের বাজেট হবে গরিববান্ধব। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে বাজেটে ধারাবাহিকতা থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বলয় এবার বাড়ছে বিপুল আকারে।
অর্থমন্ত্রী ঘোষিত আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার তথা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেট চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটও ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি কমে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটের সমস্যা হচ্ছে- যত বড় বাজেটই হোক, শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, প্রত্যেক বছরেই দেখা যায়, মূল যে বাজেট থাকে সংশোধিত বাজেটে তার চেয়ে অনেক কম করা হয়। আবার আসল যে ব্যয় হয়, তা সংশোধিত বাজেটের চেয়েও আরো কম। এটা বাজেট এবং বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এতে করে বাজেটের কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যায় না। মির্জ্জা আজিজ বলেন, এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র বিমোচনের গতি বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিরাপত্তা বাড়ানো এবং এর সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা। এসব বিষয়ে গঠনমূলক এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাজেট প্রস্তাবে বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার যে ছক এঁকেছে তা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে নির্বাহ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর ভরসা করছে সরকার।
আগামী অর্থবছর দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে চায় সরকার। এজন্য আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ০ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা প্রচেষ্টা চলছে। এসব সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তাই বার্ষিক গত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করছি।
ধনীদের বড় ছাড় : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ধনীদের জন্য স্বস্তির খবর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাদের জন্য সারচার্জমুক্ত সম্পদ মূল্যের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতার মোট পরিসম্পদের মূল্য ৩ কোটি টাকা অতিক্রম করলেই নির্ধারিত হারে সারচার্জ দিতে হয়। অর্থাৎ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ সারচার্জমুক্ত। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সীমা ১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় : আগামী অর্থবছরের মোট বাজেটের ৫৭ দশমিক ২৬ শতাংশ ব্যয় হবে পরিচালন তথা রাজস্ব খাতে। আর বাকি ৪২ দশমিক ৭৩ শতাংশ যাবে উন্নয়ন খাতে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর এডিপিসহ মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।
রাজস্ব আয় : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করসমূহ থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আয় ধরা হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেট : নতুন বাজেট দিয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটও সংশোধন করেন। বছর শেষে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়ায় এবং বৈশ্বিক মন্দা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অর্থমন্ত্রী তার দেয়া চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার আর ঠিক রাখতে পারেননি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয়ের সার্বিক অগ্রগতি বিবেচনায় বাজেটে সরকারি ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা হতে কিছুটা হ্রাস করে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে রাজস্ব আয়ের এই ধারা বিবেচনায় সংশোধিত বাজেটেও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেটের সমান অর্থাৎ ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিদ্যমান রাখা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ওই ঘাটতি কমিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। যা দেশের জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ। মূল বাজেটে এটি ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমে গেছে। তবে এই ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা বেড়েছে। মূলত বাজেটে যেখানে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সংগ্রহ করার কথা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার কমিয়ে দিয়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থসংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত আয়ের পথ কমে গেছে।  

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়