টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

২১ লাখ কোটির বিকল্প বাজেট : বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ গুণ এবং আগামী জুনে সরকারের পেশ করতে যাওয়া বাজেটের তুলনায় ২ দশমিক ৭ গুণ বড়। এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনীতি সমিতির মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪ : বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিকল্প বাজেটে কালো টাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গত ৫০ বছরে কালো টাকার পরিমাণ মোট ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মোট পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ এখন ১৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪৩ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রত্যেকের মাথাপিছু ঋণভার ১ লাখ টাকারও বেশি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম, অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জামালউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে ৬৪ জেলা, ১৩৫ উপজেলা এবং ৪৫টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আবুল বারকাত বলেন, অর্থনীতি সমিতির ঘোষিত বাজেট স¤প্রসারণশীল বাজেট। এখানে ২৪টি মূল পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব পয়েন্টের মধ্যে আছে বৈষম্য ও অসম দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তাবেষ্টনী, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও সঞ্চয়, রেমিট্যান্স, পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বৈদেশিক খাত, সরকারি ঋণ, কৃষি, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রতিবন্ধী মানুষ, প্রকৃতি ও সরকারি অর্থের সংস্থান প্রভৃতি। অধ্যাপক বারকাত বলেন, বিকল্প বাজেটে কালো টাকাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো

টাকার পরিমাণ মোট ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মাত্র ২ শতাংশ সরকারকে উদ্ধারের প্রস্তাব করেছি। এটা যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাহলে সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা পাবে।
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মোট পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে বলা হয়েছে ওই অর্থের মাত্র ৫ শতাংশ যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে সরকার ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা পাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে কালো টাকা ও অর্থ পাচারের ওই খাত। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতি সমিতির এই সভাপতি বলেন, ধনীদের কর কমালে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের কর কমালে কর্মসংস্থান হয়। আমাদের উদ্দেশ্য বিপজ্জনক বৈষম্য কমানো। বিকল্প বাজেট বাস্তবায়ন করলে ১০ বছরের মধ্যে বিপজ্জনক বৈষম্য কমানো সম্ভব।
অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা চলমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ দশমিক ৪২ গুণ বেশি। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯৩ দশমিক ২ শতাংশের জোগান দেবে রাজস্ব আয়। বাকি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা হবে ঘাটতি বাজেট।
এ বিষয়ে অধ্যাপক বারকাত বলেন, এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর অর্থাৎ আয়কর প্রস্তাব ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশে কোটি টাকার বেশি আয়কর দেন ১০০ জনের মতো। আমাদের গবেষণা বলছে, ৪ লাখ ১৮ হাজার মানুষের কোটি টাকার ওপরে কর দেয়ার কথা। আর সম্পদ কর নেয়া হয় না। এ খাতে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আসা সম্ভব। ভ্যাট খাতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান সরকারের বাজেটের মতোই।
এদিকে এনবিআর বহির্ভূত কর- যেমন মাদক শুল্ক ১৫২ কোটি টাকা। যেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে এবং ভূমি রাজস্ব থেকে আসবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা বিদেশি অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার পক্ষে নই। ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বিদেশে বসবাসরত নাগরিক ও কোম্পানি থেকে নেয়ার কথা বলেছি।
ড. বারকাত বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, লাগামহীন কর্মবাজার সংকোচন, মহামারি ও ইউরোপ যুদ্ধের অভিঘাত- এসব বিষয় মাথায় রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বহুমাত্রিক দরিদ্র। ধনী ও অতি ধনীর সংখ্যা ১ শতাংশ। বহুমাত্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কোভিডকালের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অপরদিকে প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সঞ্চয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেকেই ধারদেনা করে জীবন চালাচ্ছে, আমিষজাতীয় খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। পূর্ণ কর্মসংস্থান, শিশুর জন্য সুস্থ জীবন, সবার জন্য আবাসন ও মূল্যস্ফীতি রোধ- এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে অর্থনীতি সমিতি বাজেট প্রণয়ন করেছে।
দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের আমেরিকার ভিসা দরকার নেই : দেশে নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের সংখ্যা ৯০ শতাংশ যাদের আমেরিকার ভিসা দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কার ভিসা প্রবলেম আমরা বুঝতে পারছি না। দেশে নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ। এদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দরকার নেই। ভিসা না দিলেও এদের সমস্যা নেই। বরং এ শ্রেণির মানুষদের ভিসা পেলে সমস্যা, তাহলে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা খুঁজবে। আমেরিকার ভিসা নিয়ে রাজনৈতিক দলের লোকজন চিন্তা করবে।
ঋণ নিয়ে রিজার্ভ বাড়িয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই : অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমাদের বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৫ বিলিয়ন ডলার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়বে।
এদিকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ এখন ১৬৭ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪৩ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ৫৭ শতাংশ। বিইএ সভাপতি বলেন, আমাদের মাথাপিছু ঋণভার ১ লাখ টাকারও বেশি। আবার ঋণের সুদ পরিশোধের খাতটাও এখন বাজেটের অন্যতম বড় ব্যয় খাত, কিন্তু ঋণ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে বাজেটে কর-রাজস্ব খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। বিগত ১০ বছরে ধরে কর-জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, তুলনামূলক একই অবস্থানে রয়েছে।
ঋণ পরিশোধে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় পৌঁছতে কর-জিডিপির অনুপাত কমপক্ষে ১৩ শতাংশ হতে হবে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বাড়াতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রপ্তানি পণ্যে আমদানির অংশ কমাতে হবে। এছাড়া বাড়াতে হবে রেমিট্যান্স প্রবাহ। না হলে অর্থনীতিতে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়