টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

সাম্যের কথামালায় গানে নজরুলজয়ন্তী উদযাপন

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাম্য ও দ্রোহী কথামালায়, গানে, আবৃত্তি আর অসা¤প্রদায়িকতার বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নজরুলজয়ন্তীতে সরকারি আয়োজনের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যাপক বর্ণিল আয়োজন ছিল। জাতীয় পর্যায়ে নজরুলজয়ন্তীর প্রধান আয়োজন ছিল কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, দরিরামপুর, কুমিল্লা, দৌলতপুর ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে কবির সমাধিতে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় জাতীয় কবির সমাধি।
কবির জন্মবার্ষিকীতে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে রাজধানীতে কবির জন্মবার্ষিকী পালনের সূচনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিরা জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
পরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
সমাধিতে অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেগুলো হচ্ছে- সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের কমিউিনিস্ট পার্টি, বাসদ, বিএনপি, জাসদ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জাতীয় প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমি, মানিকগঞ্জ সমিতি-ঢাকা, ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক

জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদ, ডাকসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদ, নজরুলসংগীত শিল্পী সংসদ, এফ রহমান হল ও ঋষিজসহ বিভিন্ন সংগঠন।
ছায়ানটে দুই দিনের উৎসব :
‘হে পার্থ সারথী বাজাও বাজাও শঙ্খ’ সম্মেলক নৃত্যের মধ্য দিয়ে ছায়ানটের দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসবের শুরু হয়। এরপর কথন পর্বে অংশগ্রহণ করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারোয়ার আলী। এরপর ‘আমি বেলপাতা জবা দেব না’, ‘ওগো অন্তর্যামী ভক্তের তব’, ‘মসজিদেরি পাশে আমার কবর দিও ভাই’, ‘এখনো ওঠেনি চাঁদ’, ‘কাণ্ডারি গো কর কর পার’, ‘নাইবা পেলাম আমার’, ‘তুমি আরেকটি দিন থাকো’, ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়’, ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে’, ‘ভীরু এ মনের কলি’, ‘মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে’, ‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ’সহ নজরুলের কবিতা, গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি, গানে গানে প্রথমদিনে উচ্চারিত হয় অসাম্প্রদায়িকতার বাণী। ছায়ানট মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজনটি ছায়ানটের ফেসবুক পাতায় দেখা যাবে।
শিল্পকলা একাডেমি :
সকাল সাড়ে ৭টায় কবির সমাধিতে শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। পরে সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচক ছিলেন প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়ূয়া। তিনি বলেন, কবি নজরুল যে অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে বজ্র্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন তা এ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমরা বরাবরই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলাম- এই দুই মনীষীর জন্মদিন উদযাপনের অপেক্ষায় থাকি। আমাদের চেতনায় মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। তাদের দর্শন চিন্তা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিদ্রোহী নজরুলের সাহসকে পাথেয় করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা শেষে ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশুসংগীত দলের পরিবশেনা। পরে মীর বরকত আবৃত্তি করেন ‘ভোরের পাখি’। একক সংগীত পরিবেশন করেন সঞ্জয় কবিরাজ; শামিমা পারভিন শিমু পরিবেশন করেন ‘আধ খানা চাঁদ/ওগো অন্তর জামি’; শারমীন সাথি ইসলাম পরিবেশন করেন ‘বাধিয়া দুইজনে/তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়’ এবং সুমন চৌধুরী পরিবেশন করেন ‘যাহা কিছু মম’। সুইটি দাসের নৃত্য পরিবেশনায় ছিল ‘গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু’ ও ‘সৃজন ছন্দে’ এবং মুনমুন আহমেদের দল পরিবেশন করেন ‘রিমঝিম রিমঝিম ঝিম ঘনদেয়া বরষে।’ টিটু মুনসী আবৃত্তি করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’। ‘নাচের নেশায় ঘোর লেগেছে’ ও ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশুসংগীত দল পরিবেশন করেন ‘একি অপরূপ’ এবং ‘মনের রং লেগেছে’ শিরোনামে নৃত্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন তামান্না তিথি।
বাংলা একাডেমি :
একক বক্তৃতা, নজরুল পুরস্কার প্রদানসহ নানা আয়োজনে বাংলা একাডেমি নজরুলজয়ন্তী উদযাপন করেছে। ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ’ এই প্রতিপাদ্যে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা প্রদান করেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়া সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা করে কবির সমাধিতে ফুল দেন। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়