এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে আজ প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরপরই শুরু হবে প্রার্থীদের
আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। তবে এবারের নির্বাচন সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএম-এ অনুষ্ঠিত হবে বিধায় সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ ও ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছয় মেয়র প্রার্থী। পাশাপাশি নির্বাচনে কারচুপি হলে বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এছাড়া শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিন মেয়র প্রার্থী। তবে ইভিএম-এ শতভাগ আস্থার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ দাবি করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে ইভিএম নিয়ে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে গত বুধবার পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার মধ্য থেকে মেয়র প্রার্থী সাংবাদিক আসাদুজ্জামানসহ ৬ জনের প্রার্থিতা আপিলে বৈধতা পেয়েছে।
সূত্রমতে, আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। যতই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। এরই মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্রমতে, ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮৮টি কেন্দ্র বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ভোটারদের মাঝেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। তারা বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। নয়তো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন না তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী ক্ষমতাসীন দলের জালভোট দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইভিএমের মাধ্যমে এবার সুক্ষ চুরি করবে তারা। তাই নির্বাচনে এবার তিনি অংশগ্রহণ করেননি।
১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীয়ত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তারপরও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা নিচ্ছি। তারা মূলত কি চায় সেটা দেশের জনগণ জানতে পারবে। এছাড়া সুষ্ঠু ভোট না হলে বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনে যাবেন বলেও জানান এ মেয়র প্রার্থী। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম বাতিল এবং ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ভোটের মাঠে থাকবেন।
আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন বলেন, বর্তমান সরকার ও তার অধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তারা দুদককে দিয়ে আমাকে ডেকে পাঠায়। আমাকে নিয়েও তারা চিন্তিত। এছাড়া ইভিএমের মাধম্যে ভোটের সঠিক ফলাফল প্রদান সম্ভব নয়। তবে তিনিও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়াইয়ে থাকার কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমরা শঙ্কিত। শঙ্কায় রয়েছেন ভোটাররাও। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি আরো কঠোর হয় তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণের বিষয়টি ভোটারদের ভালোভাবে জানাতে হবে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান বলেন, সারাদেশের ভোটারদের ইভিএম-এ আস্থা নেই। তিনিও সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়ে বলেন, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন এবং সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
অপর মেয়র প্রার্থী মো. আলী হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। তবে এখানকার ভোটাররা যেহেতু ইভিএম বোঝেনা না তাই ইভিএম না থাকলে আরো ভালো হতো।
এদিকে নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের শতভাগ আস্থা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে সঠিক-সুন্দর ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ হবে বলে আশা করেন তিনি।
বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মাঝে যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা সেমিনার করব। পাশাপাশি প্রার্থীদেরও আমরা বিষয়টি বুঝিয়ে দেব। যাতে করে তারা ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারেন।