বঙ্গবাজার ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারে অবৈধ বরাদ্দ : শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আফজালের বিরুদ্ধে

আগের সংবাদ

যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ : এনইসি সভায় ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

পরের সংবাদ

বৃষ্টি ও জোয়ারের অপেক্ষায় হালদা নদীতে মাছের পোনা সংগ্রহকারীরা

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম. রমজান আলী, রাউজান ( চট্টগ্রাম) থেকে : বৃষ্টি এবং জোয়ারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন স্থান হালদায় মাছের পোনা সংগ্রহকারীরা। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির অভাবে লবণাক্ততার কারণে বছরের প্রথম মৌসুমে ডিম ছাড়েনি হালদার মা মাছ। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এপ্রিল মাসের দুটি জো এবং মে মাসের পূর্ণিমার জো অর্থাৎ তৃতীয় জো (২ থেকে ৭ মে) অতিক্রম হলেও এখনো দেখা মিলেনি মাছের কাক্সিক্ষত ডিম। এ নিয়ে মাছের পোনা ও ডিম সংগ্রহকারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। গবেষকরা বলছেন, মা মাছ লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ডিম দেবে না। ফলে হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ নেই। এই নদীতে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ।
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মা মাছ উজানের দিকে উঠে যাচ্ছে। গড়দুয়ারা, মোবারকখীল, সর্তাঘাট, ইন্দ্রাঘাট এলাকার হালদা নদীর তীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি নদীতে বড় বড় মাছের নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে, যা এই এলাকার মানুষ দেখেননি, হালদা নদী পাড়ের মানুষের আশঙ্কা মা মাছের বিচরণে এসব এলাকায় মাছ চোরদের উৎপাত বাড়তে পারে। হালদা নদীর বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিসম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনঞ্জুরুল কিবরীয়া নদী পাড়ের মানুষের কথা সমর্থন করে বলেন, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার মধ্যে মা মাছ পেটের ডিম ও নিজেকে রক্ষার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে উজানের দিকে চলে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হালদা পাড়ের লোভী মৎসজীবীরা চুরি করে মা মাছ মারার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে হালদা সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রতি নদীর ওপর নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নদীর পানিতে লবণাক্ততা প্রসঙ্গে ড. মনঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র গরমের নদীর পানিতে দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা লবণ পানি এখনো নদীর উজানের দিকে বেশি দূর যাচ্ছে না। তার মতে, জোয়ারের পানি যত উপরের দিকে যাবে ততই লবণাক্ততার মাত্রা কমবে।
হালদা নদীর গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেড়েছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা। এতে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে কমেছে পানি প্রবাহ। ফলে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর নোনাপানি প্রবেশ করছে হালদায়। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ার কারণে ডিম ছাড়ছে না মা মাছ।
হালদা নদীর গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদার ৯টি পয়েন্টে পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে অতিরিক্ত লবণাক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এই গবেষকের মতে, কার্প জাতীয় মাছের প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, টিডিএস এবং তড়িৎ পরিবাহিতার মান স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তুলনায় বেড়েছে (৩১ থেকে ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। টিডিএস এর মান ৩০৯ থেকে ২০০০ পিপিএম এবং তড়িৎ পরিবাহিতার মান ৬২০ থেকে ৪০০০ মাইক্রোসিমেন্স/সেমি. এবং লবণাক্ততার মান শূন্য দশকি ২ থেকে সর্বোচ্চ ২ পিপিটি পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বোচ্চ লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়েছে মদুনাঘাট হ্যাচারির বড়ুয়াপাড়ায় এবং সর্বনিম্ন আলম্মের কুমে। তবে বৃষ্টিপাত হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটারগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে পরবর্তী চতুর্থ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো (১৬-২১ মে), তা নাহলে পরবর্তী জুন মাসের

পূর্ণিমার জো (১-৬ জুন) অথবা সর্বশেষ (১৫-২০ জুন) অমাবস্যার জোতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পিষুষ প্রভাকর বলেন, তীব্র গরমের কারণে নদীর পানিতে দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে জোয়ারের পানি যতই উজানের দিকে যাবে ততই লবণাক্ততা মাত্রা কমবে। আমরা আশা করছি, আগামী ১৪ মে মধ্যে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব কেটে যাবে। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে ১৬ থেকে ২২ মে’র মধ্যে মা মাছ ডিম দেয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
ছবির ক্যাপসন: এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার মৌসুমে প্রস্তুতি নিয়ে এখন হতাশ ডিম সংগ্রহকারীরা হতাশ ডিম সংগ্রহকারীরা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেড়েছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়