ভুয়া প্রশ্ন বিক্রির নামে প্রতারণা গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় : কৃষকদের আগ্রহ স্থানীয় বাজারে > ২৬ হাজার টাকা পেয়ে ৩ হাজার টাকা ঘুষ

পরের সংবাদ

সৈয়দপুর রেল কারখানা : ৫০০ দক্ষ শ্রমিক ছাঁটাইয়ে উৎপাদন বিঘেœর আশঙ্কা

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : কোনো নোটিস ছাড়াই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় একযোগে ৫০০ অস্থায়ী দক্ষ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাঠানোর পর তাদের ছাঁটাই করা হয়। অথচ জনবল সংকটের মুখে কারখানা সচল রাখতে দুই দফায় এসব শ্রমিককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব দক্ষ শ্রমিককে আত্তীকরণ না করে নতুন ২৮৯ জন শ্রমিককে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে কাজ হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাকরিচ্যুত অস্থায়ী শ্রমিকরা।
এদিকে দক্ষ শ্রমিকদের আত্তীকরণ না করে একযোগে ছাঁটাই করায় কারখানার কোচ ও ওয়াগন মেরামত কাজ বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কারখানা সূত্র জানায়, কারখানার যান্ত্রিক শাখায় ২ হাজার ৮৫৯ জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬২১ জন। জনবল কমে যাওয়ায় কোচ ও ওয়াগন মেরামত কাজে সংকট সৃষ্টি হয়। কাজ বিঘিœত হওয়ায় ২০১৪ সালে ‘কাজ আছে, মজুরি আছে’ ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে ২০০ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। তারপরও চাপ সামাল দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ২০২২ সালে আবারো একই নিয়মে ৩০০ শ্রমিক নেয়া হয়। ছাঁটাইকৃত অস্থায়ী শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, ২০১৪ সালে কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাই। দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করে দক্ষ কারিগর হয়েছিলাম। কিন্তু আগাম নোটিস না দিয়ে আমাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। আমাদের আত্তীকরণ না করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন শ্রমিক। এখন সরকারি চাকরির বয়সও নেই। এই অগ্নিমূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে এখন পথে বসেছি।
২০২২ সালে নিয়োগ পাওয়া হারুনুর রশিদ বলেন, প্রায় দেড় বছরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছি। হঠাৎ করে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হলো। এখন বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলেমেয়ের খাবার কীভাবে জোগাড় করব, ভেবে পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, আগে যাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো, পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্য থেকে দক্ষদের আত্তীকরণ করা হতো। ৫০০ শ্রমিক দীর্ঘদিন বিভিন্ন শাখায় কাজ করে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন। এখন কাজ হারিয়ে এসব শ্রমিকের পথে পথে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কেননা তাদের সবারই চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। কারখানার সূত্র মতে, এখানকার ২৬টি শপের মধ্যে ১২টি শপ দক্ষ জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। শপগুলোতে কয়েকশ কোটি টাকার দামি মেশিনপত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে লোকো মেশিন শপের ৩৫টির মধ্যে ১২টি মেশিন সচল রয়েছে। বাকিগুলো অলস পড়ে আছে।
কারখানার পেইন্ট শপের মিস্ত্রি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশাল এ শপে ৪১ জন নিয়মিত এবং ৫২ জন অস্থায়ী মিলিয়ে ৯৩ জন কাজ করতেন। অস্থায়ী শ্রমিকরা দক্ষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুতই সবরকম কাজ শেষ হতো। এখন দক্ষদের ছাঁটাই করায় নতুনদের গড়ে তুলতে সময় ব্যয় হবে। এতে উৎপাদন কমবে। কাজের পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা দক্ষতা বাড়াতে চার বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকবে। এ সময়ে কারখানায় কাজের গতি তেমন বাড়বে না। তাই কারখানার উৎপাদন সঠিক রাখতে অবশ্যই দক্ষ অস্থায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে হবে, না হলে রেলওয়ে সহজে দাঁড়াতে পারবে না।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, স্থায়ী ভিত্তিতে নতুন ২৮৯ জনকে এ কারখানায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অস্থায়ী শ্রমিক যারা ছিলেন তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। তবে পুনরায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দক্ষদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। নতুনদের দক্ষ হতে সময় লাগবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়