টঙ্গীতে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন উল্টে আহত ৫

আগের সংবাদ

তীব্র গরমে বাড়ছে রোগবালাই : স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত, কৃষিকাজে ক্ষতির আশঙ্কা, ৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস

পরের সংবাদ

রাজধানীতে কয়েক শ মার্কেট ভবন বিভিন্ন মাত্রায় অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করার দায়িত্ব কার?

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটেই অগ্নিঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি থাকলেও নেই ফায়ার সিস্টেম ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। অনেক মার্কেটে নেই বিকল্প সিঁড়ি। কোথাও আগুন লাগলে ঝুঁকির বিষয়টি আলোচনায় এলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে এদের তালিকা করে সতর্ক করা হলেও সুফল মিলছে না। মূলত ঝুঁকিমুক্ত করতে মালিকপক্ষ, ব্যবসায়ী সমিতি, রাজউক বা নগর কর্তৃপক্ষ- কেউই উদ্যোগ নিচ্ছে না। ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করার দায়িত্ব কার- এ নিয়ে ঠেলাঠেলির একপর্যায়ে তা চাপা পড়ে থাকছে আরেকটি দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত। ফায়ার সার্ভিস বলছে ভবন বা মার্কেট নির্মাণে নকশা অনুমোদন দেয় রাজউক ও নগর কর্তৃপক্ষ। রাজউক ও সিটি করপোরেশন ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করতে উদ্যোগ না নিলে নোটিস টাঙানো ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের আর কিছুই করার নেই! চলতি বছরও তারা ঝুঁকিপূর্ণ ৫৮টি মার্কেট চিহ্নিত করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল রবিবার এক অনুষ্ঠানে শেষ রাতের দিকে আগুন লাগার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পেছনে একটি কারণ থাকে। সেই কারণ হতে পারে ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট থেকে, আবার নাশকতাও হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সবার মনে প্রশ্ন জাগছে- কেন এত ঘন ঘন এবং শেষ রাতের দিকে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সঠিক তদন্তের আগে নাশকতার কথা বলতে পারি না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, নিউ সুপার মার্কেটসহ রাজধানীতে ৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এছাড়া একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানা গেছে। গত দুই সপ্তাহে ৫৮টি ভবন হালনাগাদ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা

করছি। প্রতি বছর আমরা বিভিন্ন ভবন হালনাগাদ করি। এরপর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ভবন মালিককে জানাই। চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান না করলে আমরা ব্যানার টানিয়ে দিই, যেন জনগণ সচেতন হয়। আমাদের কার্যক্রমের লক্ষ্যই হচ্ছে জনসচেতনতা বাড়ানো। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫১১টি ভবন, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট হালনাগাদ করা হয়েছিল। সেখানেও অতিঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পেয়েছি। এ বছর জুরাইন কদমতলীর আলম মার্কেট, বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার মার্কেট, উত্তরা মার্কেট, তিলপাপাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, হাজী হোসেন প্লাজা, সালেহা শপিং কমপ্লেক্স, মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, ইসলাম প্লাজা, নিউমার্কেট ডেমরা, দোহারের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, এ হাকিম কমপ্লেক্স, লন্ডন প্লাজা, শরিফ কমপ্লেক্স, মিরপুরের বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, কাফরুলের ড্রিমওয়্যার, মিরপুরের এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, গাউছিয়া মার্কেট, ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা মার্কেট, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, জাকারিয়া ম্যানশন, আলাউদ্দিন মার্কেট, শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, হাজি আবুল খালেক ম্যানশন, শহীদুল্লাহ মার্কেট, এ কে ফেমান টাওয়ার, রোজ ভেলি শপিং মল, ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড, গেøাব শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, মেহের প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, চাঁদনী চক মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, নিউ সুপার মার্কেট, ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, সুবাস্তু এরমা শপিং মল, হযরত বাকু শাহ হকার্স ইসলামিয়া বই মার্কেট, শরিফ মার্কেট, মায়াকাটার ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, হান্নান ম্যানশন, সিটি প্লাজা সুপার মার্কেট-২, নগর প্লাজা, রোজ মেরিনার্স মার্কেট, রোজনিল ভিস্তা ও দুকু টাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩৫টি শপিংমল পরিদর্শন শেষে ৯টিকে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্যতায় ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্র্তৃপক্ষ। অতিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট অন্যতম। এখানে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এক বছর আগে এ মার্কেট পরিদর্শন করে ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি। ২০১৮ সালে রাজধানীর এক হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৬২২টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৬৭৮টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু এসব শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ এসব শপিংমল বা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নোটিস দিয়ে সতর্ক করলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১৭ সালের ১২-২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেট পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। একই বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা ওইসব মার্কেট পরিদর্শন করে সংস্থাটি। তারা এক হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সেলিম রেজা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি মার্কেটে আমরা ফায়ার হাইড্রেন্ট করে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবন এবং মার্কেট ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, মহানগর বিজনেস এসোসিয়েশন লিমিটেড, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলশান শপিং সেন্টার, এম প্রেজ প্লাজা, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভূঁইয়া ম্যানশন, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বাড্ডার ফুজি ট্রেড সেন্টার, আবেদ আলী মার্কেট, আর এ এস প্লাজা, লুৎফুন টাওয়ার, রিজভ্যালী শপিং সেন্টার, হাকিম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরার ভাই ভাই সুপার মার্কেট, হাজী আ. লতিফ ম্যানশন, আমীর ড্রিম কমপ্লেক্স, ফরাজী টোলা কাঁচা বাজার, ভাটারার আব্দুল লতিফ মার্কেট, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, নিক্য পেপার এন্ড স্টেশনারী, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিং মল, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স, আহম্মেদ পরিবার মার্কেট, আলহাজ্ব শামছুদ্দিন ম্যানশন, সিরাজ ম্যানশন মার্কেট, তেজগাঁওয়ের সেন্টার পয়েন্ট ও বে-এম্পোরিয়াল মার্কেট। ঝুঁকিতে আছে, উত্তরার কেসি টাওয়ার, টপটেন শপিংমল, ১৩ নম্বর ফার্নিচার মার্কেট, উত্তরা বাজার সুপার মার্কেট, আকতার ফার্নিচার, এ কে টাওয়ার, ওয়েসটেস লিমিটেড, ওরিয়ন ফুটওয়্যার, মি এন্ড মম, ফ্যাশন প্যারাডাইজ, তেজগাঁওয়ের আহমেদ মার্কেট, তোহা মিয়া মার্কেট, শেখ প্লাজা, মগবাজার প্লাজা, সাউদিয়া সুপার মার্কেট, রহমান ম্যানশন, আয়শা মঞ্জিল, হাজী মোতালেব মার্কেট, গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, কাওরান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেট, কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট, কাওরান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, কাব্যকস সুপার মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, বনানী-বারিধারা- ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার, মেহেদী মার্কেট, প্রগতি সরণির হাজী জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারির মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়্যার মার্কেট, পল্টনের বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের এনেক্স টাওয়ার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট, ডাসুরা টাওয়ার, সিটি ক্লাব মার্কেট, ইকবাল কমপ্লেক্স, চৌরঙ্গী মার্কেট, হাজী গণি মোল্লা মার্কেট, সৈকত প্লাজা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আদর্শ ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স গুলিস্তান ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মহানগর ঝুঁকিতে থাকার কথা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১১ দিনের ব্যবধানে ঢাকার বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপরই রাজধানীতে অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলো নতুন করে আলোচনায় আসে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়