১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

কৃষি ও শিল্পে বিরূপ প্রভাব : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫ নদনদী হুমকির মুখে

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসমাইল হোসেন বাবু, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে : ভেড়ামারা-পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে প্রমত্তা পদ্মা এখন শীর্ণধারার নদীতে পরিণত হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৫টি নদ-নদী। প্রভাব পড়েছে কৃষি, শিল্প, পরিবেশ, বনজ ও মৎস্য সম্পদে। এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, ব্যবসা কেন্দ্র, নৌ-যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। নদীর পানি অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় প্রতি বছরের মতো অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে পদ্মায়।
জানা গেছে, শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই পানি শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মার। পানি যেন দিনদিন কমছেই। বাড়ছে চরের বিস্তৃতি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের কাছে কমছে পানি প্রবাহ। পদ্মাসহ শাখা-প্রশাখা নদনদীগুলো মরে যাওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছেই। গত ৩০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫০-৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ভর করেছে আর্সেনিক। এখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১১৫ ফুট নিচে অবস্থান করছে। ভূ-উপরিস্থ পানি না থাকা, পদ্মার পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পসহ পশ্চিমাঞ্চলের বহু সংখ্যক সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে।
পদ্মা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাখা-প্রশাখা নদনদী বড়াল, মরা বড়াল, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়া সাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবতসহ পঁচিশটি নদনদীর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে করা ৩০ বছরের পানিচুক্তির ২৭ বছর চলছে। ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে শুকনো মৌসুম। চুক্তি মোতাবেক এই শুষ্ক মৌসুমের ৩১ মে পর্যন্ত উভয় দেশ দশদিন ওয়ারী ভিত্তিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে

নেয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো চুক্তির ২৭ বছরে বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক পানি কখনো পায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত সরকারের দুই সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ এসেছেন। তারা পানি জরিপের কাজ করছেন। প্রতিনিধিরা হলেন- ভারতীয় জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী বসন্ত কুমার ভিঙ্কাটেসন ও সহকারী পরিচালক দীপক কুমার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। গত বছর এই সময়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ১০ লাখ কিউসেক। এ বছর রয়েছে ১ দশমিক ৬ লাখ কিউসেক।
পাকশী হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের পনেরটি পিলারের মধ্যে ৫টি পিলার বালুর চরে। বাকি সাতটির নিচ দিয়ে পানির প্রবাহ রয়েছে। ইতোমধ্যে মাঝ বরাবর চর জেগে উঠেছে। স্থানীয়রা জানালেন, চৈত্র মাসের শেষের দিকে চর পড়ে নদী অর্ধেক হয়ে যেতে পারে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ ব্রিজের নিচে ফসলের ক্ষেত আর ড্রেজার দিয়ে বালি তোলার বিশাল কর্মকাণ্ড চলছে। ব্রিজের নিচে বসেছে বিভিন্ন রকমের মিনি ফাস্টফুড আর চা সিঙ্গাড়ার হোটেল। এদের একজন সেলিম সরদার বলেন, চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত পানি কমতেই থাকবে। এমনটি হয় প্রতি বছর। নদীর কিনারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ছোট পরিমাপক বসানো রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন পানির মাপ নেয়া হয়। পানি কমার দিকে রয়েছে।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে উৎস ও উজানে গঙ্গার ওপর অসংখ্য প্রকল্প নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে ফারাক্কা পয়েন্টে যথেষ্ট পানি পৌঁছাতে পারছে না।

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে হলে পদ্মায় পানি লাগবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার পানি ধরে রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজে পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়