ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ বাংলাদেশি : স্বজনদের বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আহতদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন স্বজনরা। সৌদি আরবের আসির প্রদেশে ওমরাহ যাত্রী বহনকারী একটি বাস উল্টে পড়ে যায়। এ সময় বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৮ বাংলাদেশি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী নিহতরা হলেন- রুকু মিয়া (পিতা: কালা মিয়া, উপজেলা: কসবা, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মো. ইমাম হোসাইন রনি (পিতা: মো. আব্দুল লতিফ, থানা-উপজেলা: টঙ্গী, জেলা: গাজীপুর), খাইরুল ইসলাম, মো. রাসেল মোল্লা, মো. নজরুল ইসলাম (পিতা: কাউসার মিয়া, থানা: কোতোয়ালি, জেলা: যশোর), রুহুল আমিন, সবুজ হোসাইন (ল²ীপুর), মো. হেলাল উদ্দিন (নোয়াখালী), মোহাম্মদ আসিফ (উপজেলা: মহেশখালী, জেলা: কক্সবাজার), শাফাতুল ইসলাম (উপজেলা: মহেশখালী, জেলা: কক্সবাজার), শাহিদুল ইসলাম (পিতা: মো. শরিয়ত উল্লাহ, উপজেলা: সেনবাগ, জেলা: নোয়াখালী), তুষার মজুমদার,
মামুন মিয়া (পিতা: আব্দুল আউয়াল, উপজেলা: মুরাদনগর, জেলা: কুমিল্লা), মিরাজ হোসাইন, গিয়াস (পিতা: হামিদ, উপজেলা: দেবিদ্বার, জেলা: কুমিল্লা), মো.

হোসাইন (পিতা: কাদের হোসাইন, উপজেলা: রামু, জেলা: কক্সবাজার), সাকিব ( পিতা: আব্দুল আউয়াল) এবং রানা মিয়া।
নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, মহেশখালী, এবং ল²ীপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
নোয়াখালী প্রতিনিধি : সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নোয়াখালীর দুজন হলেন- চাটখিল উপজেলার নাহারখিল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রামনারায়ণপুর গ্রামের ভূঁইয়াজি বাড়ির মৃত মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন (৩৪) ও সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর মালেক মোল্লার বাড়ির শরিয়ত উল্লাহর ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম ওরেফ শাহেদ (২৭)।
নিহত শহীদুল ও হেলালের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তারা ছিলেন পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। তাদের মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ। জানা যায়, এক বছর আগে জীবিকার সন্ধানে পরিবারের বড় ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন সৌদি আরবে পাড়ি জমান। এরপর তিনি সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি নেন।
অন্যদিকে, গত বছরের এপ্রিল মাসে পরিবারের বড় ছেলে শহীদুল ইসলাম ওরফে শাহেদ জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি একটি দোকানে কর্মরত ছিলেন। গত মঙ্গলবার ওমরাহ পালনের উদ্দেশে কর্মস্থল থেকে রওনা হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম রিগান বলেন, শোকে পাথর হয়ে গেছে গোটা পরিবার। পরিবারের একমাত্র চালিকাশক্তিকে হারিয়ে সবাই এখন দিশেহারা। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ জনের মধ্যে তিনজন কুমিল্লার। তারা হলেন- জেলার মুরাদনগরের মামুন, রাসেল মোল্লা ও দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার গিয়াস হামিদ।
ওমরা করতে গিয়ে স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা ছিল আগামী ২ এপ্রিল রমজানের মধ্যেই দেশের বাড়িতে ফিরে আসব, দোয়া কইর, ভালো থেকো। কিন্তু আর জীবিত ফিরে আসা হলো না তার। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবর বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহতের পরিবার।
নিহতের বড় ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমান বলেন, কেমনে বাবার মরদেহ দেশে আনব? সৌদিতে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। নিহত গিয়াস উদ্দিন কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের মীর বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে। ২০০১ সাল থেকে তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। তার ১ ছেলে, ২ মেয়ে। বড় ছেলে মো. আবদুর রহমান (১৫), মেয়ে সাদিয়া (১২) ছোট মেয়ে আমেনা (৬) জন্মের পর তার বাবাকে দেখেনি।
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কুমিল্লার মুরাদনগরের মামুন মিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ২২ বছর বয়সি এ যুবকের সৌদি আরবে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে। বাড়িতে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল তেমন কথা বলছেন না। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন।
আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন। এ দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব।
কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করব।
মহেশখালী প্রতিনিধি : মহেশখালীর নিহত দুজন হলেন উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরা ঘোনা গ্রামের আহমদ উল্লাহর ছেলে মো. আসিফ (২২) ও একই ইউনিয়নের বড় ডেইল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. শেফায়েত (২৪)। তারা উভয়েই প্রবাসী এবং পরস্পর খালাত ভাই।
নিহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত আসিফ ও শেফায়েত সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। তারা দুজনসহ আবাহা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অন্তত ৪৮ জন বাংলাদেশি একত্রিত হয়ে আল খামিছ থেকে পবিত্র মক্কায় ওমরা হজ করতে যাওয়ার পথে সোমবার আসিরা প্রদেশের আবাহা থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কা নগরীর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মাহাইল নামক স্থানে দুর্ঘটনা শিকার হয়।
বড় মহেশখালীর ইউপি চেয়ারম্যান শা. আ. ম. এনায়েত উল্লাহ বাবুল বলেন, নিহত সেফায়েত হোসেন খোকা ও আসিফ সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন।
বুধবার নিহতের বাড়িতে গেলে তাদের স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়, নিহত আসিফের বাবার চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন আসিফ। সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করে সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান ইউএনও মো. ইয়াছিন।
রায়পুর (ল²ীপুর) প্রতিনিধি : আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পরিবারের কথা ভেবে তিন বছর আগে সৌদি আরবে যান সবুজ। খুব শিগগিরই সবুজ দেশে ফেরার কথা ছিল। এর আগে তিনি ওমরা করবেন বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ওমরা করতে যাওয়ার পথে গত সোমবার বাস দুর্ঘটনায় সবুজ গুরুতর আহত হন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৌদি থেকে খবর আসে সবুজ মারা গেছেন। এ মর্মান্তিক খবরটি পৌঁছানোর পর একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা-মা ও স্বজনরা। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত সবুজ ল²ীপুরের রায়পুর উপজেলার চর মোহনা ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী হারুনের বড় ছেলে। তারা চার ভাই-বোন। এর মধ্যে সবুজ পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান।
জানা যায়, সবুজের বাবা হারুন মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নন। প্রায় তিন বছর আগে সবুজকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। তার পাঠানো টাকাতেই পরিবারের স্বচ্ছলতা কিছুটা ফিরে আসে। কিন্তু আকস্মিক এ মর্মান্তিক খবরে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এদিকে খবর পেয়ে একই এলাকার রায়পুর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক আজিজ জনি রাতেই সবুজের বাড়িতে যান। এ সময় তিনি সবুজের বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু সবুজের বাবার বুক ফাটা আর্তনাদ আর কান্না ছাড়া কোনো শব্দ ছিল না বলে জানিয়েছেন যুবলীগ নেতা জনি। তিনি পরিবারের এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেছেন এবং সবুজের মৃতদেহটি সরকারিভাবে দেশে আনার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়