বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের : গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিএনপির কারণেই বারবার হোঁচট খায়

আগের সংবাদ

আত্রাই উপজেলা মিলনায়তনের পাশে জলাবদ্ধতা

পরের সংবাদ

বাউফলে ২ শিক্ষার্থী হত্যায় আটক ২ কিশোর : ফ্রি-ফায়ার পাবজি খেলেই নৃশংসতা শেখে রায়হান

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পটুয়াখালীর বাউফলে চাঞ্চল্যকর দুই শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী ও নরসিংদীর রায়পুরা থেকে মো. রায়হান কাজী ওরফে রিমন (১৫) ও মো. হাসিবুল ইসলাম ওরফে হৃদয় (১৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত সোমবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব জানিয়েছে, পটুয়াখালীর বাউফলে আলোচিত ১০ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি রায়হান, আর হৃদয় তার অন্যতম সহযোগী। পূর্ব রেষারেষির জের ধরে প্রতিশোধ নিতে গিয়েই এ নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমসে আসক্ত ছিল। এসব গেমসে মারামারি দেখেই এ ধরনের কাজে উৎসাহী হয় সে।
বাউফলে ১০ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ মার্চ পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মারুফ হোসেন বাপ্পী ও মো. নাফিজ মোস্তফা আনছারী একই স্কুলের কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীর হাতে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই হত্যার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ

গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে র‌্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ক্লাসের বিরতির সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈকত ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফের মধ্যে কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান এগিয়ে এসে সৈকতের পক্ষ নিয়ে মারুফ ও তার সহপাঠী নাফিজ ও সিয়ামসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশপাশের আরো কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে ওই স্থানে ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় তারা যার যার ক্লাসে চলে যায়। দুপুরে টিফিনের বিরতিতে ফের তাদের দেখা হলে রায়হান দশম শ্রেণির মারুফসহ অন্যান্যদের পরে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। এরই জের ধরে গত ১৯ মার্চ সকালেও মারুফের বন্ধু সিয়াম ও রায়হানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রæতা থাকায় একটি রেষারেষির পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পরপর রায়হান তার দলবল নিয়ে মারুফসহ অন্যদের পিছু নিতে থাকে।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, রায়হানসহ আরো বেশ কয়েকজন বিদ্যালয়সংলগ্ন পাংগাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যান্যদের ব্রিজের ওপর গতিরোধ করে। এ সময় রায়হানের নেতৃত্বে ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাইদুর ওরফে সৈকত, হাসিব ওরফে হৃদয়, নাঈম হোসেন, সিফাত ও মশিউর মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যান্যদের মারধর শুরু করে। এরপর রায়হান এলোপাতাড়ি সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। রায়হানের ছুরিকাঘাতে তারা মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনাস্থলে তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে সিয়াম, নাফিজ ও মারুফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে মৃত ঘোষণা করেন। র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ঘটনার পর গ্রেপ্তার রায়হান পালিয়ে প্রথমে বাড়িতে যায়। সেখানে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে। পরে বাউফলের ধুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় আসে। এ সময় ছুরিটি নদীতে ফেলে দেয় সে। এরপর ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে নরসিংদীর রায়পুরায় পরিচিত এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার হাসিব ওরফে হৃদয় হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পটুয়াখালী থেকে বাসে করে ঢাকায় এসে পল্লবীতে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়